লখনৌ সুপার জায়ান্টস বনাম রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু ম্যাচের ১১ তম ওভারের পঞ্চম বল। রাঠি দৌড়ে এসে আচমকা থেমে যান, এক ধরণের মানসিক খেলা খেলার চেষ্টা করেন কিং কোহলির সঙ্গে। অনেকেই ভেবেছিলেন, এই আচরণে হয়তো কোহলি মেজাজ হারাবেন।
কিন্তু না, কোহলি বরং করলেন এক বিপরীত প্রতিক্রিয়া — একটি হাসি। শান্ত, নিরীহ অথচ দৃঢ় এক হাসি। ঠিক সেই মুহূর্তে যেন পুরো স্টেডিয়ামের জমে থাকা উত্তেজনা গলে যায়।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) চলতি আসরের শেষ লিগ ম্যাচে লখনৌ -ব্যাঙ্গালুরুর ম্যাচটি ছিল যেন নাটকীয়তায় ভরা এক উপন্যাসের শেষ অধ্যায়। তবে এই ম্যাচ ঘিরে যত আলোচনা, বিশ্লেষণ, চর্চা হয়েছে —সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দুই চরিত্র; বিরাট কোহলি ও দিগভেশ সিং রাঠি।
মাঠের ভেতরে বিরাট কোহলি যেমন ব্যাট হাতে শাসন করেন, তেমনই ক্ষ্যাপাটে আচরণে প্রতিপক্ষের ঘুম হারাম করে দেন। আর সম্প্রতি দিগভেশ রাঠিও যেন ‘নোটবুক সেলিব্রেশনে’ নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন কোহলির দেখানো পথে।
দুই বছর আগে, ২০২৩ আইপিএলে নাভিন-উল-হক ও গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে কোহলির বিতর্কিত সংঘর্ষ স্মরণীয় করেছিলো লখনৌয়ের ঘরের মাঠকে। সেই ঘটনার পর অনেক কিছু বদলালেও, গত ম্যাচের দর্শকদের মনে প্রশ্ন ছিল একটাই—রাঠি যখন বল হাতে নেবেন, কোহলি কীভাবে জবাবটা দেবেন?
দিগভেশ রাঠি ইতিমধ্যে পরিচিত তার আগ্রাসী শরীরী ভাষা এবং কুখ্যাত ‘নোটবুক সেলিব্রেশন’-এর মাধ্যমে। চলতি আসরে তিনটি জরিমানা ও এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন তিনি, যা তাকে পুরো আসর জুড়েই আলোচনায় রেখেছে। সেই রাঠিকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল — কোহলিকে আউট করলে কি সেই উদযাপন ফিরিয়ে আনবেন? — তখন তিনি শুধু হালকা মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নিজের মনোভাব।
কোহলি বনাম রাঠির মনস্তাত্ত্বিক লড়াই দেখে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ঋষভ পন্তও হেসে ফেলেন। লখনৌয়ের গ্যালারিও তখন উল্লাসে ফেটে পড়ে। এক মুহূর্তে রাঠির সব প্রস্তুতি, আগ্রাসন, নাটকীয়তা যেন কোহলির এক হাসিতে মিলিয়ে যায়।
ক্রিকেট কেবল ব্যাট ও বলের খেলা নয়, এটি আবেগ, মানসিকতা ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। কোহলি বুঝিয়ে দিলেন, উত্তেজনার মুখেও কীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়, কীভাবে প্রতিপক্ষকে শান্তভাবে হার মানাতে হয়। আর রাঠি হয়তো এই লড়াই থেকে শিখবেন সংযমের গুরুত্ব, বুঝবেন অভিজ্ঞতার শক্তি।