পূর্ণতা নেই সব চাওয়ার

প্রথম দিনের খেলা শেষ হতে আর মাত্র ৫ বল বাকি ছিল। স্কোরকার্ড বলছিল, বিরাট কোহলির রান ২৭। ব্যাটসম্যানের নাম আশা দেখাচ্ছিল, হয়তো আরেকটা কোন বড় ইনিংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু, জ্যাক লিচের বলে এ কী হল?

বলটা ছিল অফ স্ট্যাম্প বরাবর, আহমেদাবাদের পিচে কিছুটা টার্নও নিয়েছিল, বিরাট কোহলি বলটাকে খেলতে গেলেন কাট শটে। কিন্তু বল ততক্ষণে সোজা স্ট্যাম্পে!

বিরাট কোহলির উইকেট নেওয়া জ্যাক লিচ ততক্ষণে উদপযাপনে ব্যাস্ত, আর বিরাট নিজে মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছেন প্যাভিলিয়নের দিকে। যেতে যেতে পথে, কম রানের সনে – তিনি কি ভেবেছেনে এমনটা কেন হচ্ছে? টেস্টে নিজের মহত্ত্বটা কেন এভাবে কমে যাচ্ছে এই ক’বছরে!

কীভাবে?

  • ২০২০ এর শুরু থেকে

২০২০ এর শুরু থেকে বিরাট কোহলি সাদা পোশাকে ব্যাট করেছেন মোট ১১ ইনিংসে। এই ১১ ইনিংসে বিরাট কোহলির রান হল- ২,১৯,৩,১৪,৭৪,৪,১১,৭২,০,৬২,২৭। একটু খেয়াল করলে দেখবেন এই ১১ ইনিংসে –

  • কোন তিন অংকের ইনিংস নেই
  • ৮ বারই ৩০ এর নিচে আউট হয়ে ফিরে গেছেন
  • ৪ বারই দুই অঙ্কের নিচে রান করেছেন
  • একবার শূন্য রানে ফিরে গেছেন

নাহ, আমরা বিরাটের শেষ দেখে ফেলছিনা। বরং নামটা বিরাট কোহলি বলেই একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, সাদা পোশাকে নিজের জারিজুরি কি কমে যাচ্ছে বিরাটের?

  • ২০১৫-২০১৯

এই সময়টা কোহলির জন্যে ছিল স্বর্ণযুগের মত। ২০২০ এর সময়টা থেকে কোহলির যে পারফরম্যান্স নিয়ে এখন কথা হচ্ছে, তার কারণও এই ৫ বছরে কোহলির অতিমানবীয় পারফর্ম্যান্স। এই সময়টায় কোহলি টেস্টে ব্যাট হাতে নেমেছিলেন ৮৪ ইনিংসে, এই ৮৪ ইনিংসে বিরাটের রান ছিল ৪৮৪৮, গড় ৬২.১৫! ১৮ সেঞ্চুরির বিপরীতে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন ১২ টি।

আরো পড়ুন

তার মানে যেটা দাঁড়াল , প্রতি ৪.৬৭ ইনিংসেই বিরাট সাদা পোশাকে একটা করে সেঞ্চুরি করেছেন এই সময়ে। তা এটুকু যদি মহৎ কিছু হয়ে, এটা তো তাহলে ‘কিং’ এর পর্যায়ে পড়ে- এই ৫ বছরে বিরাট কোহলি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ৭ টি!

হ্যাঁ, বিরাট কোহলি হয়তো এর চাইতে ভাল করবেন, আরো রান করবেন, সেঞ্চুরি করবেন। আজকের প্রশ্নটা কিন্তু সেখানে নয়। আলোচনাটাও সেখানে নয়।

সাতখানা ডাবলের গুরুত্ব যদি না বুঝতে পারেন তাহলে বলি- শচীন তাঁর ২৪ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ৬ টি, রাহুল দ্রাবিড় তাঁর ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ৫ টি!

আর বিরাট এই ৫ বছরেই করেছিলেন ৭টি!

এই অতিমানবীয় পারফরম্যান্সও কিন্তু শুধুই ঘরের মাঠে আসেনি। এ সময়ে ভারতের হয়ে তিনি টেস্ট খেলেছেন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত কন্ডিশনে!

৫ বছরের ‘কিং’ এর পারফরম্যান্স ড্রপ নিয়ে কথা বলার কারণটা বোঝা গেল?

  • চূড়ায় ওঠার পর

২০২০ এর পর বিরাটের প্রতিটা ইনিংসের রান আমরা ইতোমধ্যেই জেনে ফেলেছি। তাও ২০১৯ এর পর কোহলির পারফরম্যান্স নিয়ে আরেকটু বলা প্রয়োজন। এ সময়ে বিরাট কোহলি রান করেছেন ২৮৮। গড়? ২৬.১৮! ঠিক এর আগের বছর অব্দি যেটা কিনা ছিল ৬২.১৫। এ সময়ে তিনি তিন ফিফটি করলেও , বিরাট কোহলির মত কেউ যখন ১১ ইনিংস মিলিয়ে মাত্র তিনটে হাফ সেঞ্চুরি করেন- সেটা কি একটু অবাক হবার নয়?

কিংবা ১১ ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে সব মিলিয়ে ৩০০ ও পার করতে না পারা?

  • বিরাট কোহলির কী আরেকটু উপর ওঠার আছে?

প্রশ্নটা এভাবে না করে যদি করা হত- বিরাট ইতোমধ্যেই চূড়াতে উঠে পড়েছেন কিনা ? কিংবা যদি বলা হত বিরাট এই চূড়ার আরো ওপরে উঠতে পারেন কিনা? অথবা যদি বলি বিরাট সাদা পোশাকে নিজের সেরা সময় ইতোমধ্যেই পার করে ফেলেছেন কিনা?

প্রশ্নগুলো বেখাপ্পা শোনাতে পারে, কিন্তু এই প্রশ্নগুলোর মধ্যে বাস্তবিকতাও কিন্তু কম নেই। আর সেই বাস্তবিকতার প্রমাণ তো উপরের পরিসংখ্যানই দিচ্ছে। ব্যাটিং গড় কমে গেছে, ম্যাচ উইনিং ইনিংস কমে গেছে, সেঞ্চুরি তো একেবারে নাই-ই হয়ে গেছে!

হ্যাঁ, বিরাট কোহলি হয়তো এর চাইতে ভাল করবেন, আরো রান করবেন, সেঞ্চুরি করবেন। আজকের প্রশ্নটা কিন্তু সেখানে নয়। আলোচনাটাও সেখানে নয়। অন্তত এটুকু সবাই মানে যে বিরাটের ব্যাটিং গড় ২৭ এর বেশি হতেই পারে। আজকের প্রশ্নটা হল, তিনি নিজের সেরা সময়টা কাটিয়ে এসেছেন কিনা? বিরাটের বয়স এখন ৩২, এই ৩২ এর পর নিজের ব্যাটিংকে আরো ঘষে মেজে তিনি ২০১৫-২০১৯ এর চাইতেও দুর্দান্ত হতে পারবেন কিনা- প্রশ্ন হল এখানেই!

 

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link