১৯৮৭ সালের রিলায়েন্স বিশ্বকাপ। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে চলছে স্বাগতিক পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২১৬ রানের জবাবে ব্যাট করছে পাকিস্তান দল। জয়ের জন্য শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। হাতে উইকেট আছে সর্বসাকুল্যে মাত্র একটা!
নয় নম্বরে নামা আবদুল কাদির ও শেষ ব্যাটসম্যান সেলিম জাফর। বোলার কিংবদন্তি কোর্টনি ওয়ালশ, আগের নয় ওভারে যিনি চার উইকেট পেয়েছেন মাত্র ২৬ রান খরচায়।
শেষ তিন বলে চাই ১০। স্লোয়ার ডেলিভারি দিলেন ওয়ালশ, স্টাম্প ছেড়ে জায়গা বানিয়ে লং অফের ওপর দিয়ে তুলে মারলেন কাদির। বল চলে গেল সীমানার বাইরে। ছক্কা! পরের বলে দুই রান নিলেন কাদির। শেষ বলে প্রয়োজন দুই।
ওয়ালশ যখন বলটা করতে যাবেন, শেষ মুহূর্তে দেখলেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে আগেই ক্রিজ ছেড়ে অনেকটা বেরিয়ে গেছেন জাফর। স্টাম্প ভেঙে দিলেই রান আউট জাফর, এক রানে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চলে যাবে সেমিফাইনালে। অথচ ওয়ালশ কী করলেন? বল করলেন না, স্টাম্পও ভাঙলেন না। কেবল মৌখিকভাবে ‘সতর্ক’ করে দিলেন জাফরকে!
এদিকে শেষ বলে দুই রান নিয়ে ঠিকই ম্যাচটা বের করে ফেলেন লেগ স্পিনের জাদুকর কাদির। আর টুর্নামেন্টের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ফাইনাল বঞ্চিত হল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। থার্ড ম্যান তখন সার্কেলের ভেতরে, ওয়ালশের ইয়র্কার থার্ড ম্যানে পাঠালেন কাদির। ব্যস, হয়ে গেল দুই রান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরপর আর কোনদিনই ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা হয়নি তাঁদের।
সেদিন চাইলেই জাফরকে মানকাডিংয়ের ফাঁদে ফেলে আউট করতে পারতেন; দলকে জিতিয়ে শেষ চারের ময়দানে তুলতে পারতেন। কিন্তু ওয়ালশ সেটা করেন নি। উইন্ডিজ সেদিন হেরেছিল ঠিকই কিন্তু জেন্টলম্যান্স গেমের সত্যিকারের জেন্টলম্যান ওয়ালশ জিতে নিয়েছিলেন অসংখ্য ক্রিকেটপ্রেমীর মন।
ওই ম্যাচ প্রসঙ্গে এক স্মৃতিচারণায় ওয়ালশ জানান, ‘১৯৮৭ বিশ্বকাপের ওই ঘটনার কারণে অনেকে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমার সতীর্থরাও ওই সময় আমার ওপর খানিক বিরক্ত ছিল। কিন্তু তারা জানত যে এটাই আমার স্বভাব, এটাই আমার নীতি। একই পরিস্থিতি যদি আবার কখনও তৈরি হত, তাহলে আবারও আমি একই কাজ করতাম।’
বিশ্বকাপ না জিতলেও, সেবার স্বয়ং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির জিয়া-উল-হকের কাছ থেকে উপহার পান ওয়ালশ। ওয়ালশের জন্য তিনি দামী একটা কার্পেট পাঠান।