এইতো বেশ কিছুদিন ধরেই ক্রিকেট দুনিয়াটা বেশ ‘দীপ্তিময়’ হয়ে আছে। মানকাডিং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন কিছ নয়। তবে, ভারতের দীপ্তি শর্মার মানকাডিং আলোচনার ঝড় তুলেছে সর্ব মহলে। অবশ্য বিষয়টি আইসিসির নিয়মে পুরোপুরি আইনসিদ্ধ। তবুও দীপ্তির ওই উইকেটের ধরণটি নিয়ে নৈতিক আলোচনা তুলছেন অনেকেই। ঘটনা আরেকটু খুলেই বলা যাক।
ঘটনা ভারত ও ইংল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটির শেষ ম্যাচে। ম্যাচের ৪৪ তম ওভারে বল করছিলেন দীপ্তি শর্মা। ক্রিজে ছিলেন শার্লট ডিন ও ফ্রেয়া ডেভিস। ওভারের তৃতীয় বলটি করার জন্য দৌড় শুরু করেন দীপ্তি। কিন্তু বল ডেলিভারির আগেই ক্রিজ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে যান নন-স্ট্রাইকার ব্যাটার শার্লট ডিন।
বিষয়টি নজরে আসতেই তৎক্ষণাৎ দীপ্তি স্টাম্পে বল লাগিয়ে উইকেটের আবেদন জানান। আইসিসির নিয়মানুযায়ী বোলার বল ছাড়ার আগেই নন স্ট্রাইকার ব্যাটার যদি পপিং ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান, সেক্ষেত্রে বোলার স্ট্যাম্প ভেঙে দিলে ‘মানকাডিং আউট’ বলে ধরা হয়। অর্থাৎ নিয়মানুযায়ীই তৃতীয় আম্পায়ার উইকেট দেন ডিনকে। দীপ্তিও নিয়মানুযায়ীই উইকেটটি শিকার করেন। কিন্তু এমন উইকেট চাক্ষুষ করে একেবারেই ইংরেজ শিবির ও ভক্তরা হজম করতে পারল না। সেজন্য সমালোচনার জলও ঘোলা হল বেশ।
ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন দীপ্তির এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। তিনিও একইভাবে আইপিএলে ইংল্যান্ডের ব্যাটার জস বাটলারকে ‘মানকাডিং’-এর ফাঁদে ফেলেছিলেন। অশ্বিন দীপ্তি শর্মার ‘উপস্থিত বুদ্ধি’র প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন যে, ‘বোলারকে উইকেটের কৃতিত্ব দেওয়া উচিত এবং তাকে সাহসিকতার পুরস্কার দেওয়া উচিত।’ যেহেতু বোলার কখনও রানআউটের জন্য কৃতিত্বের দাবিদার হন না, তাই সম্ভবত মজা করেই অশ্বিন এমন কথা বলেছেন।
বিশ্বের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী মুত্তিয়া মুরালিধরনের অবশ্য অশ্বিনের মন্তব্যটিকে ভালোভাবে নেননি। মুরালিধরন বলেন, ‘বুদ্ধির উপস্থিতি মানে কি? কোনও ক্রিকেটারের যদি বুদ্ধি না থাকে তবে সে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতোই না। আমি দীপ্তির (শর্মা) প্রশংসা করতাম যদি সে প্রথমে নন–স্ট্রাইকারকে সতর্কবার্তা দিত। তখনই কেবল ক্রিকেটের সত্যিকারের স্পিরিট বজায় থাকত।’
শ্রীলঙ্কান সাবেক এই বোলার আরও বলেন, ‘হ্যাঁ, আইনত, তিনি (দীপ্তি শর্মা) একজন নন-স্ট্রাইকারকে রান আউট করার ক্ষেত্রে ঠিক আছেন। তবে এটা আইনে আছে, কিন্তু খেলার স্পিরিটে নয়। এমনিতেই সাদা বলের ম্যাচ হল চাপের ম্যাচ। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে নন-স্ট্রাইকার তাড়াতাড়ি ক্রিজ ছেড়ে চলে যেতে পারে এবং যদি নন-স্ট্রাইকারের দ্বারা অ্যাকশনটি পুনরাবৃত্তি হয়, আমার মতে রান আউট ন্যায়সঙ্গত। অন্যথায় নয়।’
ভারতের সাবেক উইকেট–রক্ষক সৈয়দ কিরমানিও একমত পোষণ করেছেন মুরালিধরনের সাথে। অবশ্য দীপ্তি শর্মা নিজেই তার বিবৃতিতে বলেছেন তিনি আউটের আগে চার্লি ডিন এবং আম্পায়ারকে বারবার সতর্ক করেছিলেন। কারণ চার্লি ডিন একবার বা দুইবার নয়, অনেকবারই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। বারংবার সতর্কবার্তার পরও কর্ণপাত না করায়, দীপ্তি ‘অ্যাকশনে’ যেতে নাকি বাধ্য হয়েছিলেন।
সমালোচনা- প্রশংসার ভীড়ে দলের অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌরের সমর্থন পেয়েছেন দীপ্তি। ওদিকে এমসিসির আইনও বলে, এমন রান আউটে সমালোচনার কোনো সুযোগও নেই। তাই সমালোচকদের উচিত এক্ষুনি তাঁদের সমালোচনায় ফুলস্টপ দেয়া। কারণ আইন বলছে, কিন্তু আমি মানতে পারছিনা বলেই জগতের কোন নিয়ম বদলে যাবে না।