ম্যাচ সেরার আজব উপহার!

বিশ্বায়নের যুগে এসে যেকোনো খেলাই এখন অনেক দূর বিস্তৃত হয়েছে। এখানে তাই এখন অনেক রকমের টুর্নামেন্ট, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট যেমন এসেছে, তেমনি স্পন্সর বেড়েছে। স্পন্সররা তাদের ব্র্যান্ডের প্রচারের স্বার্থে প্রায়শই কিছু উদ্ভট কাজ করে বসেন।

ক্রিড়াবিদরা এমন সব পুরস্কার তাঁদের সূত্রে পেয়ে থাকেন যা দেখে চোখ ছানাবড়া হতে বাধ্য। অনেক সময় সেটা দৃষ্টিকটুও। বাংলাদেশের এক বডি বিল্ডার তো রানার আপ হয়ে ব্লেন্ডার পেয়ে তা লাথি মেরে উড়িয়ে দিলেন, নিষিদ্ধও হলেন।

তবে, শুধু স্পন্সরই সব সময় মূল ইস্যু নয়। সে যাই হোক। দেরি না করে শুরু করে। ম্যাচ সেরার এমন কিছু বিচিত্র পুরস্কার নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

  • লুক রাইট (ইংল্যান্ড): ব্লেন্ডার

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের সাথে অনেকদিন ধরেই আছে ইলেকট্রনিক পন্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। ২০১৩ সালে এই ওয়ানডে আসরে ঐতিহ্যবাহী দল আবাহনীর হয়ে খেলেন ইংল্যান্ডের লুক রাইট। সেখানে তিনি ম্যাচ সেরার পুরস্কার হিসেবে পান ওয়ালটনের ব্লেন্ডার। ম্যাচ শেষে মজা করে টুইট করেছিলেন যে, এমন বিচিত্র পুরস্কার তিনি ক্রিকেট মাঠে আগে কখনোই পাননি।

  • ঝাই রিচার্ডসন (অস্ট্রেলিয়া): শ্যু লেস ও ব্যাট গ্রিপ

২০১৮-১৯ মৌসুমে ভারত সফরে দারুণ করেন পেসার ঝাই রিচার্ডসন। এই অজি প্রথম ওয়ানডেতে ২৬ রানে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন। অথচ, পুরস্কার হিসেবে পান শ্যু লেস ও ব্যাট গ্রিপ। সেটা তাঁর জন্য বিরাট বিচিত্র এক অভিজ্ঞতা ছিল। কারণ, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) কখনোই পুরস্কার দেওয়ার ব্যাপারে কার্পণ্য করে না। তবে, ভারত সফরে এসে সেবার মূদ্রার অন্য পিঠটা দেখেন ঝাই।

  • ইয়ন মরগ্যান (ইংল্যান্ড): রাইস কুকার

এবারকার ঘটনাও ঢাকা প্রিমিয়ারি ডিভিশন ক্রিকেট লিগে। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান খেলতে এসেছিলেন। ম্যাচ সেরার পুরস্কার হিসেবে তিনি পান ওয়ালটনের রাইস কুকার। সেটাও ২০১৩ সালের ঘটনা।

বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক পুরস্কারটা পেয়ে একটু ভড়কে গিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, চাপের মুখে ভাল করার প্রতীক হিসেবে তিনি রাইস কুকার। যদিও, পরে তাঁর ভুল ভাঙিয়ে দেওয়া হয়।

  • ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল): সানশাইন স্ন্যাক্স

২০১৩ সালে প্রথম শুরু হয় সিপিএল। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি এই আসরের স্পন্সর ছিল সানশাইন স্ন্যাক্স। ম্যাচ সেরাদের তাই এই প্রতিষ্ঠানের একটা উপহার বক্স দেওয়া হত। তাতে নানা রকম বাদাম, চিপস ও কুকিজ থাকত।

  • কাশ্মির ক্রিকেট: আড়াই কেজির মাছ

খুব বেশি আগের কথা নয়, ২০২০ সালে কাশ্মীরের স্থানীয় একটা ম্যাচে বেশ আজব একটা পুরস্কারের দেখা মেলে। সেখানে সেরা খেলোয়াড় পেয়েছিলেন একটি মাছ। তাঁর ওজন ছিল আড়াই কেজি। ঘটনাটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনার ঝড় তোলে। তা, এত কিছু থাকতে মাছ কেন!

  • ভূপাল: পাঁচ লিটার পেট্রোল

ভারতের ভূপালের স্থানীয় এক  ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় সালাউদ্দিন আব্বাসির হাতে তুলে দেওয়া হল পাঁচ লিটার পেট্রোল। পুরস্কার আবার দিলেন কংগ্রেস নেতা মনোজ শুকলা।

ঘটনা ২০২১ সালের। তখন ভারতের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম হুট করেই বেড়ে যায়। পুরস্কারের গায়ে আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ব্যাঙ্গ করে আঁকা কার্টুনও শোভা পাচ্ছিল।

  • মাখায়া এনটিনি (দক্ষিণ আফ্রিকা): ঘাস কাটার যন্ত্র

২০০৩ সালের ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সফর। আইরিশদের বিপক্ষে একটা প্রস্তুতি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা জেতে ১৩২ রানে। ম্যাচ সেরা হন ফাস্ট বোলার মাখায়া এনটিনি। সেখানে তিনি পুরস্কার হিসেবে পান একটা লনমোয়ার, মানে ঘাস কাটার যন্ত্র।

আইরিশরা অবশ্য উদ্ভট পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ বিখ্যাত। ১৯৭৮ সালে ডেনমার্ক এসেছিল আয়ারল্যান্ডে খেলতে। তখন আইরিশ অধিনায়ক ডেরমড মনটেইথ ম্যাচ সেরার পুরস্কার হিসেবে পান স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের ক্যান্ডি!

  • বোনাস: আফ্রিকান ফুটবল

এতক্ষণ যা পড়লেন, তা আসলে ট্রেইলার। আসল সিনেমা এখন শুরু। অদ্ভুত পুরস্কার দেওয়াকে রীতিমত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে আফ্রিকান ঘরোয়া ফুটবল।

দক্ষিণ আফ্রিকায় একবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার দেওয়া হয় পাঁচ গিগাবাইট মোবাইল ডাটা। জিম্বাবুয়েতে দেওয়া হয় বিয়ারের বোতল, বতসোয়ানাতে নিত্য প্রয়োজনীয় এক ঝুড়ি বাজার। তবে, এই সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে ঘানা। তাঁরা ম্যাচ সেরার পুরস্কার হিসেবে দিয়েছিল এক জোড়া স্যান্ডেল।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link