নিজের কোয়ালিটির ষোল আনা প্রদর্শন বলতে যা বোঝায়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মুশফিকের ব্যাটিং নিয়ে অনেক দিন ধরেই সমালোচনা হচ্ছিল। তব বড় মঞ্চে, বড় ম্যাচে নিজের সেরাটাই দেখালেন মুশফিক। যেনো আবারো সেই সতেরো বছর বয়সে ফিরে গেলেন মুশি। টি-টোয়েন্টি সুলভ এক হাফ সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেকে ফিরে পেলেন মুশফিক, ছন্দ খুঁজে পেলো বাংলাদেশও।
সমালোচনটা অনেকদিন ধরে এবং শেষ কয়েকদিনে অনেকদূরই গড়িয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক রিয়াদ এটি নিয়ে নিজের অভিমানের কথাও জানিয়েছেন। তবে এসব কিছুতেই আসলে সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সমাধানটা একটা মুশিই দিতে পারতেন, একমাত্র বাইশ গজেই দেয়া যেত এমন একটা ইনিংস খেলে।
মুশফিক ব্যাট হাতে কী করতে পারেন সেটা নিয়ে কারো মনেই কোন সন্দেহ নেই। মুশফিক অফ ফর্মে থাকলে দল থেকে দর্শক সবাই তাঁকে সাপোর্ট করবে সেটাই হওয়ার কথা ছিল। তিনি তো ফিরে আসার মতই ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারে তা করে দেখিয়েছেন বহুবার। তবে এবারো চিত্রটা একটু ভিন্ন ছিল। শুধু ফর্মই আলোচনার বিষয় ছিল না। প্রশ্ন ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর কার্যকারিতা নিয়ে, প্রশ্ন উঠেছিল তাঁর ব্যাটিং ইনটেন্ট নিয়ে।
ফলে শুধু রানে ফিরলেই মুশফিক সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন না। আরো অনেক কিছুর জবাব দেয়ার ছিল। এর আগের ২০ ম্যাচে মুশি ১৪ গড়ে রান করেছেন। মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি এই সময়টাতে। তবে এরচেয়ে বড় সমস্যা ছিল তাঁর ব্যাটিং ইনটেন্ট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর স্ট্রাইকরেট। এই সময়ে তাঁর স্ট্রাইকরেট ছিল ১০০ এরও নিচে। গত বছর দুয়েক তাঁর ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল টি-টোয়েন্টির মেজাজটা ঠিক ধরতে পারছিলেন না মুশফিক।
যেমন স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও রান করেছেন। ৩৬ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তবে এতে জবাব দেয়া হয়নি। স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল। এইসব মন্থর ইনিংস দলের জন্য কতটা কার্যকর সেটা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। তবে মুশফিক সব উত্তরের জন্যই হয়তো প্রস্তুত ছিলেন। শুধু অপেক্ষা করছিলেন একটা বড় মঞ্চ, একটা বড় মুহূর্তের জন্য। বড় ক্রিকেটাররা তো তাই করেন।
ঠিক ১১ ইনিংস পরে মুশফিক আজকে আবার হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। শারজার উইকেটে রান করাটা খুব সহজ না। বল নিচু হয়ে আসছিল আজকেও। তবে মুশি নিজের কোয়ালিটিটা বিশ্বক্রিকেটে আরেকবার দেখালেন। উইকেট ও কন্ডিশিনের সাথে মানিয়ে নিয়ে একটি হাফ সেঞ্চুরি করলেন। শুধু একটি হাফ সেঞ্চুরি বলাতে ভুল হলো বোধহয়।
এই গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মত দল থাকলেও কন্ডিশন ও সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় এই ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এটাতে জয় তুলে নিতে পারলে দারুণ একটা মোমেন্টাম নিয়ে যাত্রাটা শুরু করতে পারে বাংলাদেশ। সেমিফাইনাল খেলাটাকে একটা বাস্তব স্বপ্নে পরিণত করা যেতে পারে। ফলে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এটিই। এবং আজকেই মুশফিকের এক্সিপিরিয়েন্স শো করার সবচেয়ে বড় দিন ছিল।
৫৭ রানের একটি ইনিংস খেললেন। কার্যকারিতা ও ইনটেন্ট নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল সেগুলো সপাটে হাকিয়েছেন। ৩৭ বলে ৫৪ রানের এই ইনিংসে ছিল ২ টি ছয় ও ৫ টি চার। একেবারে ইনিংসের প্রথম বল থেকেই ইনটেন্টটা পরিষ্কার। বড় সংগ্রহে নিয়ে যেতে চান দলকে।
তাই করলেন। যখন যেই বলটা যেখানে মারতে চেয়েছেন সেখানেই কানেক্ট করতে পেরেছেন। এই ইনিংসের স্ট্রাইকরেট, কার্যকারিতা, ইনটেন্ট কোন কিছু নিয়েই প্রশ্ন করার দুঃসাহস বোধহয় কেউ দেখাবে না। বিশ্বকাপে যেই মুশিকে আমাদের প্রয়োজন ঠিক সেটাই প্রথম দিন থেকেই পাওয়া গেল। আপনাকে স্বাগতম মিস্টার ডিপেন্ডেবল।