আইপিএলকে আরো আকর্ষণীয় এবং জমজমাট করে তুলতে কর্তাব্যক্তিদের চেষ্টার কমতি নেই। এবারের মৌসুমেই যেমন নতুন দুইটি নিয়ম চালু হয়েছে – ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার এবং ওয়াইড-নো বলে রিভিউ নেবার সুযোগ। অর্থাৎ আইপিএল আর মোটে এগারো জনের ক্রিকেট থাকছে না, বরং পরিণত হচ্ছে বারো জনের খেলায়।
গত মৌসুমের শেষ ম্যাচের কথাই ভাবুন না, লক্ষনৌর বিপক্ষে ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রয়োজন ছিল ২১ রান। রিংকু সিংয়ের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সুবাদে সেই ম্যাচটাও প্রায় জিতে যাচ্ছিল কলকাতা, প্রথম তিন বল থেকেই ১৪ রান তুলে নিয়েছিলেন এই ব্যাটার।
কিন্তু, এভিন লুইস দুর্দান্ত এক ক্যাচে রিংকুকে ফেরানোর পর ম্যাচটা আর জেতা হয়নি কলকাতার। শেষ বলে জয়ের জন্য তিন রান দরকার ছিল দলটির, কিন্তু উমেশ যাদবের স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন মার্কাস স্টয়নিস।
কলকাতার প্রধান নির্বাহী ভেংকি মাইশোর বলেন, আমরা ম্যাচটা প্রায় জিতেই গিয়েছিলাম। শেষ বলে উমেশ ব্যাট করছিল, তখনো যদি ইম্প্যাক্ট খেলোয়াড়ের নিয়ম থাকতো তবে হয়তো কোচরা একজন ব্যাটসম্যানকেই ক্রিজে পাঠাতেন। পুরো ম্যাচের ফলাফলটাই বদলে যেতে পারতো।’
ইম্প্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়মটা কি আসলে? ব্যাপারটা অনেকটা ফুটবলে বদলি খেলোয়াড় নামানোর মতোই। ইনিংসের বিরতিতে কিংবা ম্যাচ চলাকালীন সময়েও দলগুলো চাইলে যেন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে সেই কারণেই এই নিয়মের আবির্ভাব।
নিয়মটা হলো প্রতি দল ম্যাচের একাদশের পাশাপাশি চারজন অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের তালিকা দেবে। এদের মাঝে একজনকে তাঁরা চাইলে ইম্প্যাক্ট খেলোয়াড় হিসেবে ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় মাঠে নামাতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে দেশি কিংবা বিদেশি ক্রিকেটারের আলাদা হিসাব আছে।
যদি একাদশে চার বিদেশি থাকে, তবে কেবলমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটারকেই ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নামানো যাবে। তবে যদি একাদশে তিনজন বিদেশি ক্রিকেটার রাখা হয়, তবে ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে বিদেশি কাউকে নামানো যাবে। এই নিয়মের অন্যতম উদ্দেশ্যই হলো তরুণ ভারতীয় প্রতিভাদের আরো বেশি ম্যাচের সুযোগ করে দেয়া।
ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটাররা চাইতে ব্যাটিং-বোলিং দুটোই করতে পারবেন। তবে একটি দলে ব্যাট করতে পারবেন যেকোনো এগারোজন ক্রিকেটারই। এছাড়া ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় ইনিংস বিরতির পর্যন্ত যেকোনো সময়ই নামানো যাবে ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়। তবে বৃষ্টিবাঁধা কিংবা কোনো কারণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য দশ ওভারের চেয়ে কমে এলে নামানো যাবে কোনো ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার।
বিসিসিআই প্রথমবারের মতো এই নিয়ম প্রয়োগ করেছিল সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে। তবে সেবারে নিয়মটা ছিল আলাদা, তখন টসের আগেই নির্ধারণ করে ফেলতে হতো কে হবে ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার এবং তাঁর বদলিটা হতে হতো ম্যাচের ১৪ ওভারের মাঝেই।
এবারের আইপিএলে তাই ট্যাকটিকসের লড়াইয়ে নতুন এক মাত্রা যোগ করবে ইম্প্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়ম। রয়েল চ্যালেঞ্জার্সের টিম ডিরেক্টর মাইক হেসন বলেন, ‘আমরা নিলামের আগেই ইম্প্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম এবং সেই অনুপাতেই নিজেদের দল সাজিয়েছি। আমরা চেয়েছি এই নিয়মের সর্বোচ্চ ফায়দা তুলে নিতে।’
তাঁদের কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার বলেন, ‘খেলাটা এখন ১১ জনের বদলে ১২ জন বনাম ১২ জনের হয়ে গেছে। দলগুলো এখন অলরাউন্ডারদের চাইতে স্পেশালিট ব্যাটসম্যান কিংবা স্পেশালিস্ট বোলার খেলাতেই বেশি আগ্রহী থাকবে।’
এছাড়া এবারের আইপিএল অনুষ্ঠিত হবে ভারতের ১২টি ভেন্যুতে। ফলে দলগুলো চাইলেই এই নিয়মের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারবে। একজন ট্যাকটিক্যাল অ্যানালিস্ট বলেন, ‘আপনি যখন চিপকে খেলবেন, তখন তিন স্পিনার নিয়ে খেলার কথা ভাবতেই পারেন। আগে ব্যাটিং করুন কিংবা বোলিং, আপনি যেকোনো পন্থাই বেছে নিতে পারে। যদি আগে বল করেন, তবে তিন স্পিনার দিয়ে শুরু করুন। পরে ব্যাটিং শুরু হলে স্পিনারের বদলে একজন ব্যাটসম্যানকে নামাতে পারবেন।’
ইতোমধ্যে আইপিএলের প্রথম ম্যাচে গুজরাট টাইটান্স এবং চেন্নাই সুপার কিংস দুই দলই ইম্প্যাক্ট প্লেয়ারের সুবিধা নিয়েছে। গুজরাট তো এক প্রকার বাধ্য হয়েই কেন উইলিয়ামসনের ইনজুরির কারণে নামিয়েছে তরুণ সাই সুদর্শনকে। এই তরুণ অবশ্য মন্দ করেননি, তিন নেমে ২২ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলেছেন।
অন্যদিকে, চেন্নাই ইনিংস বিরতিতে আম্বাতি রাইডুর বদলে নামায় পেসার তুষার দেশপান্ডেকে। কিন্তু তিনি ম্যাচে কোনো প্রভাবই রাখতে পারেননি, ৩.২ ওভারে হজম করেছেন ৫১ রান। ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটারদের গড়ে দেয়া ব্যবধানের কারণেই কিনা ম্যাচটাও জিতে নিয়েছে হার্দিক পান্ডিয়ার গুজরাট!