হোয়াট নেক্সট, বার্সেলোনা?

গত বছর দেড়েক ধরে মনে হচ্ছিলো সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তেমেউ চলে গেলেই বার্সেলোনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তেমনটা মনে করেই এই সভাপতিকে সরানোর জন্য মাঠে নেমেছিলেন ক্লাবটির সমর্থকরা। এমনকি খেলোয়াড়রাও তার বিদায়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু বার্তেমেউ চলে যাওয়ার পরই কী বার্সেলোনা আগে জায়গাতে ফিরে আসছে?

দৃশ্যত তা মনে হচ্ছে না।

চলতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জুভেন্টাসকে তাদের নিজেদের মাটিতে ২-০ গোলে হারানোর পর ক্লাবের চার ক্যাপ্টেনের একজন সার্জিও রবার্তো সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের খবরের জবাব হচ্ছে আজকের রেজাল্ট।’

সদ্য সাবেক ক্লাব প্রেসিডেন্টকে নিয়ে খেলোয়াড়দের মনে যে জমা অসন্তোষ, এক কথাতেই তা যেন বুঝিয়ে দিলেন মিডফিল্ডার থেকে রাইটব্যাক বনে যাওয়া স্প্যানিশ রবার্তো। মনে হচ্ছিলো বার্সেলোনা যেন আবার তাঁদের হারিয়ে ফেলতে বসা ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার পথে এক ধাপ এগোলো।

কিন্তু চলমান লীগে প্রথম ছয় ম্যাচে মাত্র আট পয়েন্ট নিয়ে গত আঠারো বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজেভাবে মৌসুম শুরু করে প্রমাণ দিলো বার্সার সমস্যার সমাধান সহসাই আসছে না। টানা চার ম্যাচে জয়হীন থাকা বার্সা রিয়েল বেটিসকে গত সপ্তাহে ৫-২ গোলে হারিয়ে লিগে জয়ের পথে ফিরলেও, বার্সার খেলোয়াড়দের মধ্যে কোথাও যেন সেই আগের সর্বজয়ী ভাবটা দেখা যাচ্ছে না।

ইউরোপ সেরার মর্যাদা সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে দলটি প্রায় পাচ বছর আগে! এর মধ্যে গত মৌসুম তো গেলো ট্রফিশূন্যই; এমন মৌসুমের সাথে বার্সা সমর্থকরা পরিচিত নয় বিগত তেরো বছরেই। গত এক বছরে কোচ পরিবর্তন হয়েছে তিন বার যা বার্সেলোনার দর্শনের সাথে যায় না। চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা দুই বার তিন গোলের লিড নিয়েও ফিরতি লেগে ভরাডুবি, বায়ার্নের কাছে লজ্জার ৮-২, ক্লাব প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ নিয়ে গত কয়েকবছর ধরেই সমর্থকদের আকুতি, সর্বকালের সেরাদের একজন ক্লাবের আইকন মেসির ক্লাব ছাড়তে চাওয়া, সব মিলিয়ে বার্সেলোনা যেন মধ্য সাগরে ডুবতে বসা এক তরী!

বিশ্বজুড়ে চলমান এক অভাবনীয় স্বাস্থ্যসমস্যার মধ্যেও ক্লাব সোশিওদের অনাস্থা ভোট ক্লাব প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করলো তার পদ থেকে পদত্যাগ করতে। তিন মাসের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট আসবে, বার্সা কি পারবে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে!

কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বার্সেলোনার সমস্যা আরও অনেক গভীরে! করোনা আক্রমণে যখন গত বছর ফেব্রুয়ারীতে লীগের খেলা বন্ধ হয়ে যায়, ক্লাবের সব খেলোয়াড়রা তাদের চুক্তির বাইরে যেয়ে কম বেতনে খেলতে রাজী হয়ে যায়। কিন্তু বার্সেলোনার আর্থিক সংকট এখন এতটাই প্রবল যে জানুয়ারি মাসের মধ্যে আরও এক ধাপ বেতন না কমালে, ক্লাবের পক্ষে খেলোয়াড়দের বেতন দেওয়াই অসম্ভব হয়ে পড়বে।

পদত্যাগ করার একদিন আগেই সাংবাদিক সম্মেলনে সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বার্তেমেউ দাবি করেন, ‘বার্সেলোনা এখনও পৃথিবীর অন্যতম সমাদৃত এক‌টি প্রতিষ্ঠান।’

সমাদৃত!

বার্সেলোনা এইমুহুর্তে অনেকের কাছে পরিণত হয়েছে হাসির খোরাকে। তাদের ‘ক্লাবের চাইতেও বেশি কিছু’মোটো শুনে মনে হচ্ছে যেন কোনো বিকৃত কোনো কৌতুক! তাদের দল মাঠে হারছে দৃষ্টিকটুভাবে, আর বোর্ড মাঠের বাইরে নিত্যনতুন স্ক্যান্ডালে জড়াচ্ছে!

গতবছর বিবিসি রেডিও ফাইভের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রেসিডেন্ট বার্তামিউ দাবি করেছিলেন তারা তাদের মেয়াদ সর্বোচ্চ সফলতার সাথে সম্পন্ন করবে, ‘আমি ক্লাবকে শ্রেষ্ঠ অবস্থানে রেখে বিদায় নিয়ে নতুন প্রেসিডেন্টকে বলে যাবো, এটাই আমার লিগেসি।’

অথচ তিনি ক্লাব ছাড়লেন বার্সার অর্থনীতি ধ্বংস করে চরম এক সংকটে দাড় করিয়ে! তার লিগেসি হিসেবে থাকলো বিশৃঙ্খলা আর বিতর্ক! রেখে গেলেন বিভক্ত ক্যাম্প ন্যু এবং চরম ছত্রভঙ্গ অবস্থা। বার্তেমেউ’র পদত্যাগ এই অবস্থার রাতারাতি কোনো উন্নয়ন সাধিত করতে পারবে না। যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়েই গেছে। বার্সেলোনাকে গুছিয়ে উঠতে সময় লাগতে পারে আরও কয়েক বছর।

এফসি বার্সেলোনার প্রেসিডেন্সি কাতালুনিয়া রাজ্যের স্বশাসিত প্রেসিডেন্টের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পদ। যদিও এই পদ থেজে অর্থনৈতিক আয় নেই, তবে মর্যাদা ও ক্ষমতার দিক দিয়ে পুরো রাজ্যেই প্রভাব বিস্তারে ক্লাব প্রেসিডেন্টের ভূমিকা সুগভীর।

কিছুদিন আগেও বলা হতো জর্দি রোচে, বার্তেমেউর সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন, সেই তিনিই এখন আর নির্বাচনে লড়তে ইচ্ছুক নন। তিনি মনে করেন, বার্সার নতুন প্রেসিডেন্ট বিষাক্ত মদের পেয়ালা উত্তরাধিকারসুত্রে পেতে যাচ্ছেন! এখান থেকে বের হওয়ার পথ খুবই কঠিন।

গত সপ্তাহের গোড়ার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লস টুসকেটকে যখন জিজ্ঞেসা করা হয়েছিলো যে ক্লাবটি প্রশাসনে প্রবেশের ঝুঁকিতে রয়েছি কিনা, তিনি উত্তর দেন, ‘এইমুহুর্তে, না।’

ক্লাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে এইমুহুর্তে কিছুই বলা যাচ্ছেনা। বার্তামিউর ছয় বছরের দায়িত্ব নিখুঁতভাবে বোঝার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শুধু আমলের ব্যর্থতার জন্যই দায়ী নন; পরবর্তী প্রশাসনের সাফল্যের সম্ভাবনাগুলিও তিনি মারাত্মকভাবে হ্রাস করেছেন।

২০২১ সালে তার রাজত্বের পূর্বনির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আরেকটা চ্যাম্পিয়ন্সলীগ জয়ের আশায় কোনো পরিকল্পনার ছাপ না রেখেই নির্দ্বিধায় বেপরোয়াভবে অর্থ ব্যায় করেছেন। এন্টোনিও গ্রীজম্যান, ওসমান দেম্বেলে, ফিলিপে কৌতিনিউ দের মতো দামী খেলোয়াড়দের মূল্য চুকাতে ভবিষ্যতে কে কি করবে সেসব ভাবেন নি। উনি জানতেন, এসব তার অন্তত করতে হবেনা। উদাহারনসরুপ, ২০১৯ সালে কেনা গ্রীজম্যানের জন্য চুক্তিমূল্য ১২০ মিলিয়ন ইউরো আগামীবছর থেকে এ্যটলেটিকো মাদ্রিদকে প্রদান করা শুরু করবে। ততদিনে বার্তামিউ কিন্তু আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকতেন না!

বার্তামিউ সফলভাবে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ২০২১ সালের গ্রীষ্মে তার পদত্যাগের সময় নির্ধারিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পেমেন্টগুলি স্থগিত করে দিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ, বার্সেলোনার ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানান্তর ফি প্রদানের দায়িত্ব বর্তাবে তার উত্তরসূরির উপর।

এইমুহুর্তে যা দাড়িয়েছে, খেলোয়াড়রা যদি আরেক ধাপ বেতন না কমায়, তাহলে জানুয়ারির পর থেকে ক্লাবের পক্ষে তাদের বেতন দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।

কাতালানদের প্রাথমিক সমস্যা হচ্ছে, তাদের ত্রিশজনের বেশি পরিমাণ খেলোয়াড়দের দীর্ঘমেয়াদী এবং মোটা অংকের বেতন চুক্তি রয়েছে, আবার পুনরায় বিক্রয়মূল্যও আশংকাজনকভাবে কম। অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট টুসকেট ইতিমধ্যে স্বীকার করেছেন, তারা জানুয়ারির শীতকালীন দলবদল উইন্ডোতে বর্তমান স্কোয়াডের সদস্য বিক্রি করতে না পারলে ট্রান্সফার ফি দিয়ে কাউকে কিনতে সক্ষম হবেন না। তবে হ্যাঁ, যারা বিভিন্ন ক্লাবের ফ্রী এজেন্ট বা চুক্তিমেয়াদ অতিক্রম করেছেন -শুধুমাত্র তাদের দলে ভেড়াতে পারবে।

গ্রীষ্মকালীন দলবদলে লুইস সুয়ারেজ, ইভান রাকেটিচ এবং আর্তুরো ভিদালকে মাত্র ১.৫ মিলিওন ইউরোতে বিক্রি করা হয়!! বার্সেলোনার হাতে দ্রুত কোনো সমাধান আসলে এইমুহুর্তে নেই। বার্তামিউ চলে গেছেন, তার মানে এই নয় যে সমস্যাও তার সাথে চলে গেছে। সত্যি কথা বলতে বার্সেলোনা আসলে তাদের বিশ্বসেরা সব খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া বর্তমান টালমাটাল স্কোয়াডে সৃষ্ট গর্তগুলো ঢাকার মতো অবস্থায় নেই!

মনে রাখা উচিৎ, বার্তামিউ প্রকাশ্যে বলছিলেন, বার্সা বাজেটের ৭০ শতাংশ বেতনে চলে যায় এবং এটা নিয়ে তিনি সমস্যার কিছু দেখছেন না। করোনা ভাইরাস এসে তার এই বিশ্বাসকে খাঁটি মূর্খতা হিসেবে প্রমাণ করে গেলো। ২০১৯-২০ মৌসুমে ক্লাবের আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০ মিলিওন ইউরো যা ক্লাবকে সর্বমোট ৮০০ মিলিওন ইউরো দেনার সামনে এনে দাড় করিয়েছে।

 

বার্সেলোনার নতুন প্রেসিডেন্ট এসে নতুন আরেক ঝামেলায় পড়বেন। তাদের সর্বকালের সেরা, পৃথিবীর ইতিহাসেরই সেরাদের একজন, লিওনেল মেসি বার্সা ছেড়ে যেতে চেয়েছিলেন। মেসিকে ক্লাবের সাথেই রেখে দিতে যে ধরনের সাপোর্ট সিস্টেম বার্সার তৈরি করা দরকার, সেটা নিয়ে বার্সার হবু প্রেসিডেন্ট কাজ করার আগে তাকে কাজ করতে হবে সাবেক বোর্ডের রেখে যাওয়া পাহাড়সম ঋণের বোঝা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুজঁতে! আগামী মৌসুমে মেসি ফ্রি এজেন্ট হয়ে যাবেন। তাকে পাওয়ার জন্য বিশ্বের সব ক্লাবই হাত বাড়াবে এটা নিয়ে সন্দেহ নেই, তার উপর কোনো অর্থও খরচ করতে হবেনা, বার্সার জন্য সেটি হবে তাদের কফিনে শেষ পেরেক!

মেসি প্রকাশ্যে গোল.কমের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি কেন ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন, ‘সত্যি বলতে ক্লাবের দীর্ঘদিন ধরেই কোনো উইনিং প্রজেক্ট নেই, তারা শুধু সাময়িকভাবে সৃষ্ট গর্ত ধামাচাপা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’

ইতিহাসের অন্যতম সফল ডিফেন্ডার এবং ক্লাবের তৃতীয় ক্যাপ্টেন জেরার্ড পিকে এই ঘটনা অস্বীকার করেন নি, বরং ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত এবং নাটকীয় দলবদলের এই ঘটনার সময় দলের অধিনায়ক মেসিকে একটা মেসেজ দিয়ে বলেছিলেন, ক্লাবের প্রশাসনে খুব দ্রুতই পরিবর্তন আসবে।

প্রত্যাশিত সময়ের আগেই বার্তেমেউর পদত্যাগ অবশ্য ড্রেসিংরুমে তার সবচাইতে দুই কঠোর সমালোচক মেসি এবং পিকের নৈতিক বিজয় হিসেবে দেখা গেলেও, আদৌতে ক্যাম্পন্যু তে সত্যিকারের কোনো বিজয়ী এখনও হয়নি। যেমন মেসি তার মন পরিবর্তন করে ক্লাবের সাথে নতুন চুক্তি করবেন এমন কোনো গ্যারান্টিও নেই।

মেসির ক্লাবের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু স্কোয়াড নিয়ে তার অসন্তোষও গোপন নয়। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, তিনি সাফল্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হন এবং বার্সার কাছে এক‌টি উইনিং প্রজেক্ট আশা করেন যেটি আসলে এইমিং বার্সার কাছে নেই এবং নিকট ভবিষ্যতে হবে তেমন সম্ভাবনাও নেই।

যে ক্লাবটি মাত্র পাঁচ বছর আগে ইতিহাসের প্রথম ক্লাব হিসেবে দ্বিতীয় ট্রেবল জয়ের রেকর্ড গড়েছিলো, সেই ক্লাবের এমন শোচনীয় অবস্থা আসলেই অকল্পনীয়। বার্লিনে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ী তর্কসাপেক্ষে ইতিহাস সেরা ফ্রন্টত্রয়ী এমএসএন (মেসি, সুয়ারেজ, নেইমার) তৈরিতে যে মানুষটার হাত ছিলো সবচেয়ে বেশি, সেই বার্তামিউই ছিলো এই ত্রয়ী ভাঙ্গার পেছনে মূল কারিগর।

প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন থেকে মার্কো ভেরাত্তিকে বার্সেলোনায় আনার চেষ্টা করেছিলেন ২০১৭ সালে, উল্টো দলের অন্যতম সেরা নেইমারকেই তাদের কাছে বিক্রি করে দেন। মেসির যোগ্য উত্তরসূরি হাতছাড়া হয়ে যাওয়া সবচেয়ে বড় আঘাত না হলেও, ছিলো ক্লাবের পিঠে হাতুড়ি আঘাত।

ব্রাজিলীয় সুপারস্টার কে বিক্রি করে পাওয়া অর্থমূল্য দিয়ে ডেম্বেলে এবং কতিনহোকে দ্রুত কিনলেও নেইমারের মতো সফল তারা এখনও হতে পারেন নি। বরং বার্তামিউ আমলে নেইমারের বিকল্প না আনতে পারার ব্যর্থতা বার্তামিউকে খাদের আরও কিনারায় এনে দাড় করিয়ে দিয়েছিলো। মাঝে নেইমারকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও হয়েছিলেন ব্যর্থ!

নেইমারকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা আদৌ বোর্ড করেছিলো কিনা সেটা নিয়েও প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করে বোর্ড আর ড্রেসিংরুমের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন বার্সা ক্যাপ্টেন মেসি।

গত সপ্তাহেই জেরার্ড পিকে, বার্সা লিগে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করা অবস্থায় সাবেক কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দেকে মধ্য সিজনে বরখাস্ত করাকে ‘অযৌক্তিক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি ‘বার্সাগেট কেলেংকারি’ তে জড়িত থাকা কর্মকর্তা জেমিই ম্যাসফেরারকে তার দায়িত্বে বহাল থাকা নিয়েও সমালোচনা করেন।

এমনকি মেসি পর্যন্ত ক্লাবের সাবেক স্পোর্টিং ডিরেক্টর এরিক আবিদালের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন গত মৌসুমে। আবিদাল দাবি করেন, ভালভার্দের বরখাস্তের পেছনে খেলোয়াড়দের হাত ছিলো। এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে মেসি বলেন, ক্লাবের ভেতর থেকে কিছু মানুষ খেলোয়াড়দের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছে যেটা খুবই দুঃখজনক!

এতকিছুর মধ্যেও বার্তামিউ বরাবর দাবি করে গেছেন, তিনি ক্লাবের ভালোর জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন। এবং বায়ার্ন ভরাডুবির পরেও পদত্যাগ না করে ভালো করেছেন। যখন ক্লাব সদস্যদের অনাস্থা ভোটে হেরে বসলেন, তখন দেখলেন পদত্যাগ না করে আর কোনো উপায় তার বোর্ডের হাতে অবশিষ্ট নেই। অবশেষে তিনি পদত্যাগ করলেন। আর রেখে গেলেন বিশৃঙ্খল বার্সেলোনাকে যেখানে দ্রুত শৃংখলা ফিরিয়ে আনা আপাতদৃষ্টিতে প্রায় অসম্ভব।

মনে রাখতে হবে, এই সেই বার্তামিউ যে তার পূর্বসূরী সান্দ্রো রোসেল কে সাথে নিয়ে নেইমারকে বার্সায় আনতে অর্থনৈতিক দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ক্লাবকে তার ইতিহাসের বিতর্কিত দলবদলের সামনে দাড় করিয়েছিলেন। কেবল এক সেকেন্ডের জন্য এটি বিবেচনা করুন: এই চুক্তির পিছনে এরা দোষী বলে প্রমাণিত হয়েছিল তা নয়, ক্লাব নিজেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলো। ফলস্বরূপ, রোজেল এবং বার্তেমেউ অনুমোদন ছাড়াই এই বিতর্ক থেকে বেঁচে যায়, বার্সেলোনা এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জালিয়াতির জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল।

এতকিছুর পরেও যে ব্যক্তি শীর্ষ পদ ছাড়েন নি, তার পদত্যাগের ঘোষণা কিছুটা বিস্ময়ের তো বটেই। তবে বার্সার সঙ্গে যুক্ত সবার কাছেই বার্তেমেউর পদত্যাগ স্বস্তির এক নিঃশ্বাস হিসেবেই এসেছে। যদিও দুঃখের বিষয়, বার্তামিউর প্রভাব আগামী কয়েক বছর পর্যন্ত বার্সেলোনা অনুভব করতে থাকবে। কারণ তার তৈরী ক্ষত এত সহজে সারবার নয়।

বার্তেমেউ ক্লাবটিকে ‘দুর্দান্ত অবস্থানে’ ছাড়তে চেয়েছিলেন। ছাড়লেন ব্যাংক দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে এনে। এটাই তার লিগেসি হিসেবে থাকলো। আর এজন্যই তাকে এফসি বার্সেলোনার সর্বকালের সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্মরণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link