সবই কী ছিল স্ট্যান্টবাজি!

এনামুল হক বিজয় পাওয়ার প্লের ১৪ টি বল খেলেছেন। সেখান থেকে সর্বসাকুল্যে করেছেন ৫ রান। আরেক ওপেনার নাঈম শেখ আট বল খেলে করেছেন ছয় রান। অর্থাৎ পাওয়ার প্লের ৩৬ বলের ২২ টিই খেলেছেন এই দুই ওপেনার। আর সেখান থেকে এসেছে মোট ১১ রান। দুই ওপেনারের সম্মিলিত স্ট্রাইক রেট ৫০.০০। এনামুল হক বিজয়ের স্ট্রাইক রেট ৩৫.৭১।

ম্যাচ শুরুর এই চিত্রটাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের করুণ অবস্থা পরিষ্কার করে ফুটিয়ে তোলে। এই সমস্যা অবশ্য নতুন কিছু নয় বাংলাদেশের জন্য। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা বাংলাদেশ দল তো এভাবেই খেলে আসছে। আর এই ফরম্যাটে টানা হারও বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়।

তবে, এবার এশিয়া কাপে যাবার আগে কথার ফুলঝুরি ফুটেছিল বেশ। সেটা বিসিবি কর্তা, টিম ম্যানেজম্যান্ট, কোচ, ক্রিকেটার সবার দিক থেকেই। বাংলাদেশ নাকি এই ফরম্যাটটায় নতুন করে শুরু করবে। এমন অনেক কিছুই হবে যা আগে কখনো দেখা যায়নি। মোদ্দা কথা নতুন ব্র্যান্ডের, ফিয়ারলেস ক্রিকেট খেলবে বাংলাদেশ।

তবে ভয়টা যে বাংলাদেশের শিরায় শিরায় ধাবিত হচ্ছে। এই অন্ধকার থেকে বাংলাদেশকে টেনে তুলবে কে? ফলে মাঠের ক্রিকেটেও এই ভয় নিয়েই নামলো বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে খেলতে যাওয়ার আগে যে কথা গুলো শোনা যাচ্ছিল সবই কী আসলে স্ট্যান্টবাজি। কারণ মাঠে তো সে সব কথার কোন প্রতিফলন দেখা গেল না।

একটু মনে করিয়ে দেয়া যাক। প্রথম বাংলাদেশ কোনভাবেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের জন্য ওপেনার খুঁজে পাচ্ছিল না। ফলে এশিয়া কাপে মেকশিফট ওপেনারের দিকে হাঁটবে বাংলাদেশ এমন কথাই শোনা যাচ্ছিল। ফলে শুরুতে স্কোয়াডে কোন ব্যাকআপ ওপেনারও ছিল না। মুশফিক, মিরাজদের ওপেন করার জন্য প্রস্তুতও করা হয়েছে।

তবে মাঠে নামের আগেই বাংলাদেশের মনে ভয় ধরেছিল। ফলে শেষ মুহূর্তে দলের সাথে যোগ করা হয় নাঈম শেখকে। যিনি কিনা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা কখনোই আক্রমণাত্মক ভাবে খেলতে পারেন নি। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ মাঠে  নামলো নিয়মিত দুই ওপেনারকে নিয়েই। যাদের কেউই আসলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজেদের কখনো প্রমাণ করতে পারেননি।

ব্যাটিং অর্ডারে সমস্যা ধরা পড়েছে আরও। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনেকদিন ধরেই নিয়মিত পারফর্ম করে যাচ্ছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ফলে অনেকদিন ধরেই তাঁকে প্রমোশন দেয়ার একটা আলোচনা হচ্ছিল। আর এবার এশিয়া কাপের আগে সেটার নিশ্চয়তাও মিলেছিল টিম ডিরেক্টরের কাছ থেকে।

আফিফের স্পেশালিটি নাকি বাংলাদেশ দল বুঝতে পেরেছে। ফলে আফিফকে এশিয়া কাপ থেকেই উপরে খেলানো হবে বলে জানিয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। এতদিন ছয়ে খেললেও এশিয়া কাপ থেকে আফিফ চারে খেলবেন বলেই শোনা যাচ্ছিল। তবে মাঠে এমন কিছুই দেখা গেল না। চারে সেই মুশফিকুর রহিমই থাকলেন। অথচ সিনিয়র এই ব্যাটারের টি-টোয়েন্টি ফর্ম নিয়েই আছে প্রশ্ন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজেও ছিলেন না দলে।

এশিয়া কাপে যাবার আগে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার কথাও হয়েছে অনেক। ব্যাটসম্যানরা যেন অন্তত ১৩০-৪০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করতে পারে সেই প্রস্তুতিই নিয়েছেন। তবে মাঠে সেই চিত্র দেখা গেল কই। এমনকি ১০০ স্ট্রাইকরেটেও ব্যাট করতে পারেননি বাংলাদেশের পাঁচ ব্যাটার। এনামুল হক বিজয়, নাঈম শেখ, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সবার স্ট্রাইক রেটই ১০০ এর কম।

তবুও দিনশেষে মান বাঁচিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। অন্য ব্যাটাররা যেখানে ১০০ স্ট্রাইক রেটেই ব্যাট করতে পারছেন না সেখানে সৈকতই বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক স্কোর এনে দিয়েছেন। ৩১ বল খেলে এই ব্যাটার করেছেন ৪৮ রান। ব্যাটিং করেছেন ১৫৪.৮৩ স্ট্রাইক রেটে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link