মিলনের মোহনায় দুই সাকিব

এশিয়া কাপের আগে গত কয়েক দিন ধরেই চলছে সাকিব আল হাসানের সিরিয়াস অনুশীলন। পারফরম করা ছাড়াও এবার টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবেও বাড়তি দায়িত্ব যে নিতে হবে তাঁকে।

তবে সাকিবের সেই অনুশীলনে দেখা গেল এক মন কেড়ে নেয়া দৃশ্য। অবিকল সাকিবের মত বোলিং অ্যাকশনেই একটা ছোট্ট ছেলে নেটে বোলিং করছে সাকিবকে। সাকিবও ধীর হয়ে আসা সেই বলগুলো তাঁর ব্যাটে আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছেন।

এক ক্রিকেট মহাতারকা ও একজন ক্ষুদ্র ভক্তের এই মিলনমেলা আপ্লুত করে যে কোন মানুষকেই। যে সাকিবকে নিয়ে এত বিতর্ক এত আলোচনার ঝড়, সেই সাকিবই তো আবার দেশের ক্রিকেটের বড্ড আপন মানুষ।

তাইতো ছোট্ট নাঈম শেখ নিজেই নিজের নাম পালটে রেখেছে সাকিব আল হাসান। কারণ, নাঈম হতে চাইতো সাকিবের মত। ক্রিকেটের এমন খ্যাপাটে, আবেগী ক্ষুদে ভক্তের দেখা তো আর রোজ রোজ মেলে না।

অবশেষে আজ মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সাকিব আল হাসানের দেখা মিললো। ছোট্ট সাকিবের বাড়িতে তাই আজ যেন ঈদের আনন্দ। এত আনন্দের উপলক্ষ বোধহয় এই ছোট্ট ঘরটায় আর কখনো আসেনি।

খেলা ৭১-এ প্রচারিত করা নাঈমের সাক্ষাৎকার অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়েছিল। হ্যাঁ, এটা সেই নাঈম, যে একটাবার শুধু সাকিবকে একবার দেখার জন্য রোজ দাঁড়িয়ে থাকতো মিরপুর স্টেডিয়ামের গেটে। অচেনা সাংবাদিকদের অনুরোধ করতে, একটাবার ভিতরে ঢোকার ব্যবস্থা করার।

অনেক ক্রিকেটার, অনেক সাধারণ মানুষই নাঈমকে সাহায্য করতে চেয়েছেন। তবে, নাঈমের স্বপ্নের নায়ক সাকিবের কাছেও যে এই আঁকুতি পৌঁছে যাবে সেটা কখনো ভাবতেও পারেনি ছেলেটা।

সাকিব আল হাসান নাঈমকে কাছে টেনে নিয়েছেন। ছোট্ট সাকিবকে আগামীকাল জার্সি ও জুতা কিনে দিবেন বলেও কথা দিয়েছেন। এই মুহূর্তগুলো, এই ছবিগুলোই তো বলে দেয় দেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান কী এক অনন্য উচ্চতায় থাকেন।

নাঈম সাকিব হতে চান। কিন্তু, সাকিব হতে চাইলে তো ব্যাট-বল থাকাটা প্রাথমিক শর্ত। কিন্তু, গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানো বাবার সেই সাধ্য আর কোথায়। কিন্তু, নাঈমের যে বড্ড জেদ। ক্রিকেটার তাঁকে হতেই হবে। খেলা ৭১-কেই বলেছিল, প্রয়োজনে ব্যাট-বল কিনতে সে রিকশা চালাবে।

না, সবার চেষ্টা আর ভালবাসায় রিকশা তাঁকে চালাতে হয়নি, হবেও না। এবার খোদ সাকিবই বাড়িয়ে দিলেন স্নেহের হাত। শুধু স্নেহই নয়, নেটে সাকিবের বিপক্ষে অবিকল সাকিবেরই বোলিং অ্যাকশনে বোলিং করেছেন। স্বপ্নটা সত্যি হয়েছে।

এবার পালা, স্বপ্নটাকে আরেকটু বাড়িয়ে নেওয়ার পালা। সাকিবের সাথে দেখা হয়ে যাওয়া নাঈম শেখরাও তো পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের জোরে আগামী দিনের সাকিব হওয়ারই সামর্থ্য রাখেন। এই নাঈমরাই তো আগামী দিনের সাকিব, দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ।

নাঈমের ভবিষ্যৎটা আজকের দিনের মতই সুন্দর হোক। আর সেই সুন্দর আগামীদে সবাই থাকুক তাঁর পাশে – এটাই প্রত্যাশা।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link