আজকের যুগের সাথে তখনকার সময়টা একদমই মেলানো যাবে না। না ক্রিকেট, না জীবন। জীবনটাও আজকের মত গতিশীল ছিল না, তবে ক্রিকেটে আজকের দিনের চেয়ে বেশি প্রাণ ছিল।
বলছি ষাটের দশকের কথা। সাদাকালো যুগ। উপমহাদেশীয় ক্রিকেট তখন একটু একটু করে এগোচ্ছে। তখন ১৯৬৬-৬৭ মৌসুম। ভারত সফরে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল।
সেই দলের সুপারস্টার ছিলেন স্যার গ্যারি সোবার্স, সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার তাঁকে বললেও মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না। ক্যারিবিয়ান এই গ্রেটের এই ভারত সফরটা দারুণ কাটে। হ্যাঁ, মাঠে তো বটেই, তবে শুধু মাঠে নয় – মাঠের বাইরেও।
৩৪২ রান করেন তিন টেস্টে, আর উইকেট পান ১২ টি। ভারতীয় কন্ডিশনের পুরোটাই কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। তবে, মাঠের বাইরে যা ঘটে যায় – সেটা অবিশ্বাস্য, অভিনব, দুর্দান্ত ও রোমাঞ্চকর!
সেই সফরটাকে অন্য একটা বিশেষ কারনেও মনে রাখতে পারেন সোবার্স। মুম্বাইয়ের স্মৃতি তাঁর আজীবন মনে থাকার কথা। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সোবার্সরা জিতেছিল ছয় উইকেটে। তবে, মুম্বাইকে সোবার্স মনে রাখবেন এক নারীর জন্য।
তিনি হলেন আঞ্জু মাহেন্দ্রু। প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী ও ফ্যাশন ডিজাইনার। সেবার মুম্বাইয়েই আঞ্জুর সাথে সোবার্সের দেখা হয়। আঞ্জুর বয়স তখন মাত্র ১৭। কোনো এক পার্টিতে দু’জনের চোখাচোখি হয়, এক দেখায় প্রেম।
সেই পার্টিতেই দু’জন বাহুডোরে নেচেছিলেন। নিজের আত্মজীবনীতে আঞ্জুকে ‘ভীষণ সুন্দরী এক তরুণী অভিনেত্রী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন সোবার্স। বোঝাই যায়, সম্পর্ক চুঁকেবুকে গেলেও কখনোই আঞ্জুকে ঠিক ভুলতে পারেননি সোবার্স।
আঞ্জু তখনও বলিউডে জায়গা পেতে সংগ্রাম করছেন। পরিবার অবধি গড়িয়েছিল এই প্রেমের সম্পর্ক। সোবার্স ইংল্যান্ড চলে যান, নটিংহ্যাম্পশায়ারের হয়ে কাউন্টি খেলতে। আঞ্জুকে বিয়ে করে নিয়ে যেতেও রাজি ছিলেন।
যদিও, আঞ্জুর পরিবার ছিল একটু পুরনো মন-মানসিকতার। ভিনদেশির সাথে প্রেমের সম্পর্কে তারা রাজি ছিল না। তাই সম্পর্ক আর এগোয়নি। যদিও, এই সম্পর্কের সুবাদে বলিউডে খ্যাতি পেয়ে গিয়েছিলেন আঞ্জু।
সোবার্সও আঞ্জুর অপেক্ষায় থাকেননি। ১৯৬৯ সালের সেপ্টেম্বরে নিজের অস্ট্রেলিয়ান প্রেমিকা প্রু কিরবিকে বিয়ে করেন সোবার্স। সেই বিয়ের আসরে বসে, সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে থাকা প্রেমিকার কথা কি আদৌ মনে পড়েছিল? কে জানে।
আঞ্জু অনেকদিন বাদে একটা সনি টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে এসে বলেন, ‘সোবার্সের সেন্স অব হিউমার খুব দারুণ ছিল। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যার দিকে যেকোনো তরুণী তাকাতে বাধ্য হবে।’
আঞ্জু আজও অভিনয় জগতে আছেন। দিব্যি কাজ করে চলেছেন। অন্যদিকে সোবার্স মাঠের জীবন অনেকদিন আগেই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে, ক্রিকেটের সাথেই আছেন। আলাদা আলাদা ভাবে দিব্যি এগিয়ে চলেছে দু’জনের দু’টি জীবন। তবে, একটু এদিক সেদিক হলেই দু’টি জীবন মিলতে পারতো একই মোহনায়।