২০১৫ আইপিএলে ১২ এপ্রিল রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ২৫ বলে ৫৪ করেছিলেন দিপক হুডা। ৬ বছর পর, আরেক ১২ এপ্রিলে রাজস্থানের বিপক্ষে করলেন ২৮ বলে ৬৪।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ের কারণে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ আগে থেকেই তার নাম ‘হারিকেন হুডা’। মাস দুয়েক আগে ক্রুনাল পান্ডিয়ার সঙ্গে ঝামেলা পাকিয়ে অবশ্য বরোদা দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। সেসব পেছনে ফেলে আইপিএলে প্রথম ম্যাচে জ্বলে উঠলেন।
যাহোক, মূল প্রসঙ্গে আসি। এই মুহূর্তে যদি ভারতের ৫০ জনের টি-টোয়েন্টি দলও গড়া হয়, সেখানে হয়তো হুডার জায়গা হবে না। বড় বড় নামগুলির কথা বাদই দিলাম। তো, আমাদের দেশে একজন হুডা কোথায়?
হুডার আজকের ইনিংসের স্ট্রাইক রেট ২২৮.৫৭। বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই স্ট্রাইক-রেটে কোনো পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস নেই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কথা বাদই দিলাম। বিপিএলে এই স্ট্রাইক-রেটে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস কয়টা আছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের? তামিম ইকবালের ১৪১ রানের সেই ইনিংসটির স্ট্রাইক-রেট ছিল ২৩১। খুঁজলে আর দু-একটা পাওয়া যেতে পারে, নাও পারে।
আইপিএলে হুডার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক-রেট ১৩৪.৮৩। আপনি কি জানেন, বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের, আবার বলছি, কোনো ব্যাটসম্যানের বিপিএল ক্যারিয়ারে এই স্ট্রাইক-রেট নেই?
কমপক্ষে ১২৫ বল খেলেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিপিএলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্ট্রাইক-রেট মুশফিকের ১৩৩.৯২। এই মানদণ্ডে বিপিএলে সেরা স্ট্রাইক-রেটের তালিকায় মুশফিক আছেন ৩২ নম্বরে, ওপরের ৩১ জনই বিদেশি ক্রিকেটার। বাংলাদেশে মুশফিকের পরের নামটি কোনো ব্যাটসম্যানের নয়, মাশরাফির, ১২৯.৬৬।
নেপাল বা ওমানের বিপক্ষেও ১০ ওভারে নেমে ২৮ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলার মতো ব্যাটসম্যান কি এই মুহূর্তে আমাদের আছে?
উত্তর, ‘না’। ‘নেই’। হুটহাট একবার কেউ খেলে ফেলতে পারেন। নিয়মিত পারার ব্যাটসম্যান নেই।
এটার উত্তর যখন ‘না’, তখন দুটি ব্যাপার বুঝতে হবে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য সীমিত এবং আমাদের ক্রিকেট সিস্টেম সেই সামর্থ্য গড়তে বা বাড়াতে কোনো ভূমিকা রাখছে না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট সিরিয়াস ক্রিকেট হয়ে গেছে, সেটাও তো অনেক বছর হয়ে গেল!
মিরপুরে যে ধরনের উইকেটে আমাদের প্রায় ৯০-৯৫ ভাগ টি-টোয়েন্টি হয়, সেই উইকেটে ১৪০-১৫০ স্ট্রাইক-রেটে ব্যাট করতে হলে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের অন্তত একটি থাকতে হবে। হয় পেশিশক্তি থাকতে হবে, নইলে ক্রমাগত ইম্প্রোভাইজ করা, উদ্ভাবনী ও স্মার্ট ক্রিকেট খেলা জানতে হবে। আগেই বলেছি আমাদের ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য সীমিত। পেশিশক্তি আমাদের দেশের ধরনেই নেই। ক্রমাগত উদ্ভাবনী শট খেলা আমাদের ধাতে নেই।
সিস্টেমের ব্যাপার সেখানেই চলে আসে। বিপিএলের বেশির ভাগ ম্যাচ যে ধরনের ধীরগতির উইকেটে হয়, সেখানে আমাদের ব্যাটসম্যানদের ক্রমাগত শট খেলা কঠিন। বল পিচ করে ধীরে আসে, বাউন্স উঁচু-নিচু হয়, থ্রু দ্য লাইন শট খেলা যায় না। শট খেলার বিশ্বাস জন্মাবে কিভাবে?
দু-একটা উইকেট ধীরগতির হতে পারে, দু-একটি পেস সহায়ক। কিন্তু বেশির ভাগ ম্যাচ হতে হবে ব্যাটিং উইকেটে। সেখানে খেলতে খেলতে, মারতে মারতেই শটের রেঞ্জ বাড়বে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
এরপর, এক বিপিএল দিয়ে আর কত দিন? বিপিএলের বাইরে অন্তত আরেকটি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের দাবি অনেক দিন থেকেই আছে, যেখানে শুধু দেশের ক্রিকেটাররাই খেলবে। দায়সারা করে আয়োজন নয়, গুরুত্ব দিয়ে আয়োজন করা।
শুধু কথাই হয়, কাজ হয় না।
ভারতে আইপিএল আর সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি ছাড়াও তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ, কর্নাটক প্রিমিয়ার লিগ, এরকম বিভিন্ন রাজ্যে, শহরে অসংখ্য টুর্নামেন্ট হয়। পাকিস্তানে অসংখ্য হয়। আমাদের বিভাগীয় পর্যায়ে সেরকম মানসম্পন্ন কিছু হয়?
সবচেয়ে আক্ষেপের ব্যাপার, এসব করা তো বহুদূর, প্রক্রিয়াই শুরু হয় না কখনও। আমরা লিখি বা বলি যে ‘এটা নেই, ওটা নেই, এটা করা উচিত…’, কিন্তু যাদের এসব করার কথা, তাদের এসব নিয়ে ভাবনাও নেই। না ছিল অতীতের কোনো বোর্ডের, না আছে টানা ৮ বছরের বেশি সময় দায়িত্বে থাকা এই বোর্ডের।
দিপক হুডার এই ছবি আইপিএলের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া। বিপিএলের কি কোনো ওয়েবসাইট আছে? বিসিবির মূল ওয়েবসাইটের কি অবস্থা? এসব নিয়ে লিখতে গেলে আরেকটা হাজার শব্দের প্রবন্ধ লিখতে হবে। আরেকদিন নাহয় হবে!
– ফেসবুক থেকে