রাসেল ডমিঙ্গোর বিদায়ের পর আলোচনায় ছিলেন অনেকেই। তবে সব আলোচনার অবসান ঘটিয়ে চান্দিকা হাতুরুসিংহে আবার ফিরেয়ে আনছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যদিও পরে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়েই চান্দিকা হাতুরুসিংহের সাথে কথা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল বিসিবি।
চান্দিকা হাতুরুসিংহের নিয়োগ চূড়ান্ত হবার পর তাই দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যান প্রবলভাবে আলোচনায় থাকা শ্রীধরন শ্রীরাম। তবে প্রধান কোচ হবার আলোচনায় থাকা শ্রীরাম সহ আরো কয়েকজন দেশি কোচ আছেন হাতুরুসিংহের ডেপুটি হবার আলোচনায়।
সহকারী কোচের ধারণা খুব একটা পরিচিত নয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। তবে সামনের প্রবল ব্যস্ত ক্রিকেট সূচীকে সামনে রেখে হাতুরুসিংহের একজন ডেপুটির প্রয়োজন বোধ করছে বিসিবি। এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানান শ্রীরাম এখনো আছে আলোচনায়।
সাথে বিকল্প হিসেবে আছেন আরো কয়েকজন স্থানীয় কোচ। জানা গেছে বিসিবির সম্ভাব্য তালিকায় মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, রাজিন সালেহ সোহেল ইসলামের মত স্থানীয় কোচরা আছেন। সহকারী কোচ হবার জন্য তাদের প্রস্তাব দিতে পারে বোর্ড।
এর আগেও ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর অনানুষ্ঠানিক ভাবে সালাউদ্দিনকে সহকারী কোচ হবার প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে তখন ব্যস্ততার কারণে জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে অপারগতা জানান তিনি। এবারও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবার আগেই প্রস্তাব পেলেও সহকারী কোচের দায়িত্ব নেবেন না বলেই জানিয়ে দেন সালাউদ্দিন।
তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি মনে করিনা বোর্ডে আমি ঠিকঠাক ফিট করতে পারব। যখন আমি কোথাও কাজ করতে যাব,তখন আমাকে পরিষ্কার হতে হবে যে কোচের কাজটি কি। আমি জানি না হাথুরুসিংহে কি ধরণের কোচ। আমি এখন যে বয়সে আছি তাতে আমার জন্য মানিয়ে নেয়াটা কঠিন। আমি গত ৫-১০ বছর ধরে হেড কোচ হিসেবে কাজ করছি। তাই আমি এখন সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করতে পারব কিনা সেটি নিয়েও আমাকে ভাবতে হবে।’
সালাউদ্দিন ছাড়াও ভালোভাবেই আলোচনায় আছেন আরেক স্থানীয় কোচ সোহেল ইসলাম। এর আগেও বেশ কয়েকবার স্পিন বোলিং ও ফিল্ডিং কোচ হিসেবে দলের সাথে কাজ করেছেন সোহেল। বর্তমানে রংপুর রাইডার্সের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করা সোহেল অবশ্য বিসিবির কোর্টেই বল ঠেলে দিয়েছেন।
খেলোয়াড়দের কাছে খুবই সোহেল ইসলাম। তাইজুল ইসলাম কিংবা মেহেদী হাসান মিরাজরা যেকোনো সময়ে পাশে পান তাঁকে। বিসিবির তালিকায় তাই আছেন ভালো ভাবেই। তাঁর অধীনে রংপুর দলের পারফরম্যান্সও বেশ ভাল।
জাতীয় দলে লম্বা সময় খেলার অভিজ্ঞতা বিবেচনায় এখানে আছে রাজিন সালেহ’র নামও। সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহ জানালেন, সুযোগ পেলে তিনি সহকারী কোচ হতে রাজি আছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সিলেট স্ট্রাইকার্সের প্রধান কোচ রাজিন। তার দল দুর্দান্ত পারফর্ম করছে। সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে তাঁর দল।
আগে জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব পালন করা রাজিন বলেন, ‘আমি জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে অন্তর্ভুক্ত হতে চাই। সহকারী কিংবা ব্যাটিং কোচ হলে তো কথাই নেই। ফিল্ডিং কোচের প্রস্তাব পেলেও রাজি আছি।’
সালাহউদ্দিন, সোহেল ইসলাম কিংবা রাজিন সালেহ ছাড়াও নাজমুল আবেদীন ফাহিম বা মিজানুর রহমান বাবুলদের মত ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ কোচরাও আছেন বিসিবির পছন্দের তালিকায়। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানান, ইংল্যান্ড সিরিজের আগেই সহকারী কোচ নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌছাতে চায় বিসিবি। তাই খুব শীঘ্রই হয়তো বহু দিন পর সহকারী কোচ পদে কাউকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে বিসিবি।
হাতুরুসিংহের প্রথম মেয়াদে নিজদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সময় কাটিয়েছে বাংলাদেশ। মাঠের ভেতরের রনকৌশল নিয়ে হাথুরুসিংহের সমালোচনা হয়নি কখনো। তবে বিপত্তিটা বেধেছিলো মাঠের বাইরের ইস্যুতে।
ড্রেসিংরুমে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সাথে হাতুরুসিংহের মনমালিন্য ছিল যেন অতি স্বাভাবিক ঘটনা। এছাড়াও বোর্ডের সাথেও সম্পর্ক কিছুটা শীতলই ছিলো হাতুরুর। তাই সহকারী কোচ নিয়োগ দিয়ে পুরো প্রক্রিয়ার একটা ভারসাম্য আনতে চাইছে বিসিবি। যিনি খেলোয়াড় আর প্রধান কোচের সাথে মেলবন্ধন করবেন।
আর এজন্যই কি না, এখানে খালেদ মাহমুদ সুজনের নামটাও আসছে অবধারিত ভাবেই। সুজন ঘরোয়া লিগের বেশ সফল কোচ। বোর্ডের পরিচালক ও সাবেক এই অধিনায়ক আগে পড়ে নানা ভূমিকায় কাজ করেছেন জাতীয় দলের সাথেও। দলের সবার সাথেও বেশ ভাল সম্পর্ক তাঁর। খেলোয়াড়দের মনোভাব বোঝেন তিনি। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, এর আগেও হাতুরুসিংসের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।
তবে, একটা ব্যাপার সহজেই অনুমান করা যায় যে, কোনো রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বোর্ড অবশ্যই হাতুরুসিংহের চূড়ান্ত মতামত নেবে।