ওভালে ভারত বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার চতুর্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে ব্যাট করছিলো ইংলিশরা। ক্রিজে তখন সেট ব্যাটসম্যান ওলি পোপ এবং জনি বেয়ারস্টো খেলছিলেন।
হঠাৎ মাঠের বাইরে থেকে ভারতের জার্সি গায়ে বল হাতে ঢুকে পড়েন এক দর্শক! উমেশ যাদবকে টপকে স্ট্রাইকে থাকা ওলি পোপকে বল করার জন্য বোলিং মার্ক থেকে দৌড় শুরু করলেন। না, তিনি মোটেও অচেনা কেউ নন! ক্রিকেট পাড়ায় এখন বেশ আলোচিত একজন তিনি।
– হ্যাঁ, জারভো। যিনি ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে এখন ‘জারভো ৬৯’ নামেই বেশি পরিচিত। অবশ্য এটিই প্রথম নয়; এর আগের দুই টেস্টেও একই কাণ্ড করেছেন তিনি।
পুরো নাম ড্যানিয়েল জারভো হলেও ক্রিকেট পাড়ায় এখন তিনি জারভো ৬৯। যিনি পেশায় একজন কমেডিয়ান, নাট্যকার, প্র্যাঙ্কস্টার কিংবা ইউটিউবার। তিনি মূলত জারভো ৬৯ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করতেন। পুরো নাম ড্যানিয়েল জারভিস।
সাম্প্রতিক সময়ে মাঠের ঘটনায় আলোচনায় আসার পর তাঁর চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। বর্তমানে তাঁর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার আছেন ১ লাখ ২৩ হাজার প্রায়! মূলত এটাই ছিল তাঁর লক্ষ্য!
লর্ডসে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ভারত ফিল্ডিং করার সময় হুট করেই মাঠে প্রবেশ করেন জারভো। নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁকে ধরতে এলে ইশারায় বোঝান তিনি ভারতের হয়েই খেলতে নেমেছেন! সেই ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় জারভোকে নিয়ে আলোচনা।
পরের টেস্টে হেডিংলিতে আবারো একই কাণ্ড করেন জারভো। উইকেট পড়ার পর তখন ভারতের পক্ষে ব্যাট করতে আসার কথা কাপ্তান বিরাট কোহলির। কিন্তু বিরাট নামার আগেই জার্সি, প্যাড পড়ে ব্যাট হাতে মাঠে নেমে পড়েন জারভো! সেখান থেকেও নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে জোর করে মাঠ থেকে বের করে আনে।
পর পর দুইবার একই কাণ্ড ঘটানোর পর জরিমানার মুখে পড়েন জারভো। আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি আজীবন হেডিংলিতে নিষিদ্ধ করা হয় তাঁকে! এমন শাস্তির পরে নিজেকে শুধরে নিবেন তিনি এটাই ছিলো সবার প্রত্যাশা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ক্রিকেটীয় আলোচনার কেন্দ্রে থাকা জারভোর পর্বটা তাহলে বিদায় হয়েছে এমনটাই ভেবেছিলেন সবাই।
কিন্তু না! চলতি ওভাল টেস্টে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছেন জারভো। দ্বিতীয় টেস্টে ফিল্ডিং, তৃতীয় টেস্টে ব্যাটিংয়ের পর চলতি টেস্টে নেমে পড়েন বোলিং করতে! পুরো ওভালের দৃষ্টি তখন স্রেফ জারভোর দিকেই।
ভারতীয় পেসার উমেশ যাদব তখন বোলিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মাঠে ঢুকেই সোজা বোলিং মার্কে গিয়ে উমেশ যাদবকে টপকে বোলিংয়ের জন্য দৌড় শুরু করেন জারভো। স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা ওলি পোপকে বল করার উদ্দেশ্যে দৌড় শুরু করলেও বল রিলিজের ঠিক আগ মুহূর্তে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ধাক্কা খান তিনি!
এতে বেয়ারস্টোও অবশ্য কিছুটা চটে যান। উত্যপ্ত বাক্যও বিনিময় হয় দু’জনের মধ্যে। এরপর মুহূর্তের কিছু সময়ের মধ্যেই নিরাপত্তা কর্মীরা এসে তাঁকে মাঠের বাইরে নিয়ে যায়।
দ্বিতীয় টেস্টে কিছু না হলেও তৃতীয় টেস্টে আর্থিক জরিমানা ও আজীবন হেডিংলিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা পান জারভো। এরপরই চলতি টেস্টে সিরিজে তৃতীয় বারের মতো এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি করেন তিনি। যার কারণে বেশ চটেছেন সাবেক ক্রিকেটাররা।
ইতোমধ্যেই সাউথ লন্ডনের পুলিশ জারভোকে সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে থানায় নিয়েছে। বর্তমানে লন্ডনের জেল হেফাজতে আছেন তিনি। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক সহ টুইটারে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বিষয়টা হাস্যকর হলেও, নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়টা এখানে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
পর পর তিন টেস্টেই কিভাবে গ্যালারি থেকে নিরাপত্তা বলয় টপকে মাঠে প্রবেশ করেছেন জারভো সে নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সহ অনেক সমর্থকরাও। প্রশ্ন উঠেছে ইংল্যান্ডের নিরাপত্তা বেষ্টনি নিয়েও। মাঠে খেলা চলাকালীন দেখা যায়নি তেমন কঠোর কোনো নিরাপত্তা।
এদিকে লন্ডন পুলিশের ধারণা ‘অ্যাটেনশন সিক’ করতেই বার বার এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন জারভো নামের ওই ব্যক্তি। তাঁর উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন – বার বার তিনি কিভাবে নিরাপত্তার বলয় ভাঙতে পারছেন? তিনি পারলে নিশ্চয়ই যাদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে – তাঁরাও নিশ্চয়ই পারবেন!