প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল: কে এই ভ্যালেন্সিয়া?

অনেক জল্পনা কল্পনা আর দীর্ঘ প্রতিক্ষার প্রহর কাটিয়ে অবশেষে কাতারের মাটিতে বেজে উঠলো বিশ্বকাপের বাঁশি। মরুর বুকে প্রথম বিশ্বকাপ। তাই শুরুর ম্যাচ নিয়ে স্বাগতিক দেশ কাতার সহ বিশ্বের আগ্রহও ছিল তুঙ্গে।

কিন্তু, কাতারের এমন ঐতিহাসিক দিনে এক রকম হতাশাতেই ভাসিয়েছে কাতার ফুটবল দল। ইকুয়েডরের কাছে এ দিন ঘরের মাটিতে ঠিক পাত্তাই পায়নি তারা। আল বায়াত স্টেডিয়ামে কাতারের সহস্র দর্শককে হতাশায় ডুবিয়ে সম্পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করে ২-০ গোলে ম্যাচটি জিতে নিয়েছে ইকুয়েডর।

বিশ্বকাপ ফুটবলে ইকুয়েডরের ইতিহাস সমৃদ্ধ নয়। এবারেরটা ধরলে চতুর্থ বারের মত বিশ্বকাপ খেলতে মরুর মাটিতে পাড়ি জমিয়েছে তারা। অপরদিকে গ্রুপ পর্বে তাদের প্রথম প্রতিপক্ষ কাতার গেল বারের এএফসি এশিয়ান কাপে শিরোপা জিতেছিল। তার উপর কাতারের বিপক্ষে এর আগে একমাত্র দেখায় ৪-৩ গোলে হেরেছিল ইকুয়েডর। সব মিলিয়ে তাই এ ম্যাচের আগে অনেকটা আন্ডারডগ হিসেবেই খেলতে নেমেছিল ইকুয়েডর।

কিন্তু, ম্যাচের শুরু থেকেই সম্ভাব্য সব চিত্র পাল্টে দেন ইকুয়েডরের অধিনায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়া। ইকুয়েডরের মুহুর্মুহু আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে কাতারের রক্ষণ ভাগ। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই ভ্যালেন্সিয়ার  গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইকুয়েডর। কিন্তু অফ সাইডের কারণে সে যাত্রায় বেঁচে যায় কাতার।

তবে গোল পেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি ইকুয়েডরকে। ম্যাচের ১৬তম মিনিটে ইকুয়েডরের এনার ভ্যালেন্সিয়া বল নিয়ে বেশ দুর্দান্ত গতিতেই কাতারের ডি বক্সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে এসে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে কাতারের গোলরক্ষক সাদ আল শিব দ্বারা ফাউলের শিকার হন তিনি। আর এতেই বেজে ওঠে রেফারির বাঁশি। সে সংকেতেই পেনাল্টি পায় ইকুয়েডর।

স্পটকিক থেকে যখন এনার ভ্যালেন্সিয়া পেনাল্টি নিতে আসলেন তখন তাঁর সামনে  অনন্য এক রেকর্ডের এক হাতছানি। ইকুয়েডরের হয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপে ৩ টি গোল করেছিলেন ভ্যালেন্সিয়া।

এটা ইকুয়েডরের হয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে অগাস্টিন দেলগাডোর সাথে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ছিল। ভ্যালেন্সিয়া পেনাল্টি থেকে গোল দিয়ে সেই রেকর্ডটিই একদম নিজের করে নেন। একই সাথে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম গোলদাতা হিসেবে নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেন এনার ভ্যালেন্সিয়া।

ভ্যালেন্সিয়া সেখানেই থেমে ক্ষান্ত হননি। এশিয়ার সেরা দলটির বিপক্ষে পরের সময়ে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন তিনি। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে আবারও গোল করেন ভ্যালেন্সিয়া। এবার ডান প্রান্ত থেকে আসা ক্রসে বক্সে লাফিয়ে হেডে গোল করেন তিনি। ইকুয়েডর প্রথমার্ধ শেষ করে ঐ দুই গোলেই।

দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুর ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন ভ্যালেন্সিয়া। কিন্তু কাতারের ডিফেন্ডারদের বার বার ফাউলের শিকার হতে থাকেন তিনি। ম্যাচে সর্বোচ্চ ৪ টি ফাউলের শিকার তিনিই হন। তাই ম্যাচের ৭৭ মিনিটেই তাঁকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেন ইকুয়েডরের কোচ গুস্তাভো আলফারো।

ম্যাচে এনার ভ্যালেন্সিয়ার প্রভাব কেমন ছিল তা স্কোরলাইনের স্পষ্ট। তারপরও আরও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুরো ম্যাচে তাঁর শট একুরেসি ছিল ১০০%। এমনকি পাসের দিক দিয়েও তিনি ছিলেন বেশ নিখুঁত। ২১ টির মধ্যে ১৩ টি পাসই তিনি সফল ভাবে সম্পন্ন করেছেন। আর ড্রিবলিংয়েও দেখিয়েছেন নিজের মুনশিয়ানা। ৩ টি ড্রিবলের চেষ্টায় ২টিতেই তিনি সফল হয়েছেন।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচের ফলটা শেষ পর্যন্ত ২-০ তেই থেকে যায়। ঘরের মাঠে তাই এক রাশ হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়ে কাতারের ফুটবলাররা। আর প্রথম ম্যাচেই গুরুত্বপূর্ণ ৩ টি পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে গেল ইকুয়েডর।

আগের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হয়নি ইকুয়েডরের, একই সাথে ভ্যালেন্সিয়াও সেবার বিশ্বকাপটায় ছিলেন দর্শক হয়ে। আর এবারের বিশ্বকাপে এসেই হয়ে গেলেন প্রথম ম্যাচের নায়ক। বিশ্বকাপের প্রথম আলোটা কেড়ে নিলেন তিনিই। আজ এই ভ্যালেন্সিয়া তো শুধু এ ম্যাচেরই নায়ক নন, লাতিন আমেরিকার ঐ ছোট্ট দেশটিরও এক মহানায়ক বনে গেলেন। কারণ বিশ্বকাপে ইকুয়েডরের জয়ের মুহূর্ত যে সবসময় আসে না।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link