ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিংয়ের বাইরেও ক্রিকেটের আরেকটি শৈল্পিক দিক রয়েছে, সেটি হলো অধিনায়কত্ব। দলকে নেতৃত্ব দেয়ার গুণ সবার থাকে না, সবাই পারে না চাপের মুখে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের পথ দেখিয়ে দিতে। তবে কেউ কেউ পারেন, নেতৃত্ব দেয়ার সক্ষমতা তাদের শিরা-উপশিরায় মিশে থাকে। কপিল দেব, আজহারউদ্দীন কিংবা সৌরভ গাঙ্গুলিরা এমনই কয়েকজন। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়কের তালিকায় সবার উপরে তাদের নাম থাকবেই।
আর এই কিংবদন্তিদেরও ছাড়িয়ে গিয়েছে আরেকটি নাম – মহেন্দ্র সিং ধোনি। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ধোনি শুধু ভারতের নয়, বরং ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের মধ্যে অন্যতম। আর এই ধোনির সাহচর্যে ছিলেন আরেকজন ক্যাপ্টেন, গৌতম গম্ভীর। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত টস করতে দেখা গেলেও জাতীয় দলে এই ওপেনারকে অধিনায়কের আসনে দেখা গিয়েছে কি না তা নিয়ে অনেকের মনেই হয়তো সংশয় আছে।
হ্যাঁ, কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাবেক অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরকে ভারতের আকাশি নীল জার্সি গায়ে টস করতে দেখা গিয়েছে। ধোনির অনুপস্থিতিতে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ছয় ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ২০১০/১১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ওয়ানডেতে অধিনায়ক ছিলেন গম্ভীর।
গম্ভীরকে আগামী দিনের নেতা বলেই মনে করা হত। বিশেষ করে সেভাবেই তাঁকে গড়ে তুলছিল ভারত। তবে, টুকটাক দায়িত্ব তো পাচ্ছিলেনই ধোনির সময়। তবে, অফফর্মে ছিটকে যাওয়া আর বিরাট কোহলি চলে আসায় সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। যদিও, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে অনেক উঁচুতে তুলেছেন গম্ভীর। আইপিএলের ইতিহাসেরেই সেরা অধিনায়কদের একজন তিনি।
তাই, জাতীয় দলের লম্বা সময়ের অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে দেখতে না পারাটা ভারতের জন্য একটা আক্ষেপই বটে। যদিও, গৌতম গম্ভীরের ক্যাপ্টেন্সিতে এমন কয়েকজন দুর্দান্ত ক্রিকেটার খেলেছেন। জাতীয় দলে গৌতম গম্ভীরের অধীনে খেলেছেন এমন সেরা তিন তারকাকে দেখে নেয়া যাক।
- জহির খান
ভারতের সর্বকালের সেরা বোলারদের একজন জহির খান। নতুন বলে সুইং আর পুরোনো বলে রিভার্স সুইং এই পেসারকে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সময় গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে দুই ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এসময় মোট ১৬ ওভার বল করে ৭১ রান খরচ করে ২ উইকেট শিকার করেছেন এই বাঁ-হাতি।
২০০০ সালের অক্টোবর মাসে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হয় জহির খানের। এরপর দ্রুতই তিন ফরম্যাটে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। ২০০৩, ২০০৭ এবং ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অংশ ছিলেন এই পেসার; এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ভারতের সফলতম বোলার তিনি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মোট ৬১০ উইকেট রয়েছে তাঁর নামের পাশে।
- যুবরাজ সিং
রঙ্গিন পোশাকে ভারতের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং ভক্ত-সমর্থকদের কাছে অতিপরিচিত এক নাম। ২০১০/১১ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজে গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে পাঁচ ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। নিজের পুরো ক্যারিয়ারে যেমন ব্যাটি-বলে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তেমনি কিউইদের বিপক্ষে সেই লড়াইয়েও ছিলেন উজ্জ্বল।
চার ম্যাচ ব্যাট করতে নেমে ৬০ গড়ে করেছিলেন ১২০ রান আর বল হাতে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। যুবরাজ সিং বরারবই বড় মঞ্চে পারফর্ম করেছেন। ২০১১ বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন এই বাঁ-হাতি, এছাড়া ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইটি ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলেছিলেন।
- বিরাট কোহলি
দীর্ঘসময় ভারতকে নেতৃত্ব দেয়া বিরাট কোহলি নিজেও খেলেছন গৌতম গম্ভীরের অধীনে। সে সময়কার তরুণ কোহলি গম্ভীরের ক্যাপ্টেন্সি করা ছয় ম্যাচেই খেলেছিলেন। এবং সে সময় ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের একজন ছিলেন।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে দুইটি হাফ সেঞ্চুরি এবং একটি সেঞ্চুরির সাহায্যে ২৯৩ রান করেছিলেন তিনি। এছাড়া উইন্ডিজের বিপক্ষে একমাত্র ওয়ানডেতে ৮৫ বলে ৮০ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলেছিলেন এই ব্যাটার। বিরাটের রান ফোয়ারা এখনো ছুটে চলছে, ভারতের নিজস্ব এই ‘রান মেশিন’ নিজেকে ইতোমধ্যে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য এক উচ্চতায়৷