সবার সেরা হবার দৌড়

আর মাত্র একটি ম্যাচ। বিশ্বকাপ মহাযজ্ঞ এখন প্রায় অন্তিম লগ্নে। ২০২২ আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্দা নামতে আর দেরি নেই। সংখ্যার হিসেবে আর দুটি রাত পেরোলেই মেলবোর্নের মহারণে দেখা মিলবে ইংল্যান্ড আর পাকিস্তানকে। শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে কে কাকে ছাপিয়ে যাবে? টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ইংলিশদের সাম্রাজ্য দখল নাকি আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানের বিশ্বজয়?  এ নিয়ে জল্পনা, কল্পনা, তর্ক, বিতর্ক যেন থামছেই না। 

তবে দলগত শ্রেষ্ঠত্বের পাশাপাশি টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় কে হবে, তা নিয়েও ক্রিকেট সমর্থকদের মাঝে রয়েছে প্রবল আগ্রহ। আইসিসিও সেই আগ্রহের মাঝে বাড়তি রসদ দিয়েছে। ফাইনালের আগে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্টের জন্য ৯ ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছে তারা। । 

ইংল্যান্ড আর পাকিস্তান, দুই ফাইনালিস্ট দল। সেরা খেলোয়াড় দৌড়ে তাই নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে আছে এ দুই দলের খেলোয়াড়। আইসিসির সে সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও এ দুই দলের খেলোয়াড়দের আধিক্য রয়েছে। ইংল্যান্ডের ৩ ও পাকিস্তানের ২ জন ক্রিকেটার আছেন এ তালিকায়। এছাড়া ভারত থেকে ২ জন, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কা থেকে রয়েছেন ১ জন করে ক্রিকেটার। 

টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যাট হাতে ভারতের হয়ে বিরাট কোহলি আর সুরিয়া কুমার যাদব, দুজনেই ছিলেন দুর্দান্ত। ভারতের পাওয়া ৪ ম্যাচ জয়ে এই দুজনেই হয়েছেন ২ বার করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ। তারপরও সেমিতে ভারতের এমন ভরাডুবিতে এই দুইজনের শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। 

একই কথা প্রযোজ্য সিকান্দার রাজা আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বেলাতেও। জিম্বাবুয়ের জেতা ৩ ম্যাচের ৩ টিতেই সিকান্দার রাজা ম্যাচ অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন। টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যাট হাতে যেমন রান করেছেন, বল হাতে তেমন উইকেটও তুলে নিয়েছেন। কিন্তু তারপরও দল সুপার-১২ এ বাদ পড়াতে টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে বেশ পিছিয়েই গেছেন তিনি। আর শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার।

কিন্তু তারপরও তাঁর সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়টাও সম্ভবত থেমে গেছে ইতোমধ্যেই। কারণ তাঁর দলও যে সুপার-১২ এর বাঁধা পেরোতে পারেনি। মূলত এ আসরের সেরা খেলোয়াড় হওয়া দৌড়ে চোখ থাকছে দুই ফাইনালিস্ট দল, ইংল্যান্ড আর পাকিস্তানের ৫ ক্রিকেটারের উপর। এই ৫ জনের মাঝে যে কেউই হতে পারেন ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট। 

 

প্রথমেই আসা যাক, পাকিস্তানের শাদাব খান প্রসঙ্গে। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং, সব জায়গাতেই এবারের বিশ্বকাপে শাদাব খান ছিলেন এক কথায় দুর্দান্ত। বল হাতে ১০ উইকেট নিয়েছেন। আবার ব্যাট হাতেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছিলেন বিধ্বংসী এক ইনিংস। সেমির ম্যাচে বল হাতে ছিলেন উইকেট শূণ্য। কিন্তু ডেভন কনওয়েকে দুর্দান্ত এক থ্রোতে রান আউট করেছিলেন তিনিই। সব মিলিয়ে কোনো না কোনো ম্যাচে পাকিস্তানের জয়ে তিনি অবদান রেখেছেন। সেই ধারাবাহিকতা মেলবোর্নের ফাইনালে থাকলে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারটা যেতেই পারে শাদাব খানের হাতে। 

 

এবারের বিশ্বকাপটা খেলারই কথা ছিল না অ্যালেক্স হেলসের। কিন্তু জনি বেয়ারস্টোর ইনজুরিতে কপাল খুলে যায় তাঁর। তিন বছর বাদে আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ হয় তাঁর। আর সেই প্রত্যাবর্তনটা এখন স্মরণীয় করার পথেই আছেন হেলস। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচে রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছিলেন। ৮৬ রান করে ইংল্যান্ডকে ফাইনালে তোলার ম্যাচে হয়েছেন ম্যাচসেরা। এ ছাড়া সুপার-১২ পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও পেয়েছিলেন ফিফটি।

আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডু অর ডাই ম্যাচে ৩০ বলে ৪৭ রান করে তিনিই ইংল্যান্ডকে সেমির পথে এগিয়ে দেন। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত রান করেছেন ২১১। সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটারদের মধ্যে যদিও হেলস সেরা পাঁচেও নেই। কিন্তু ইংল্যান্ডকে সুপার ১২ গণ্ডি পেরিয়ে সেমি, এবং তারপর ফাইনালে তোলার ক্ষেত্রে অ্যালেক্স হেলসের অবদান ছিল অনেক। তাই এবারের টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারটা হেলসের হাতে গেলে অবাক হওয়ার সামান্য কোনো কারণও থাকবে না। 

 

অধিনায়ক হিসেবে প্রথম কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট। আর প্রথম টুর্নামেন্টে এসেই ফাইনাল। পল কলিংউড, ইয়ন মরগ্যানের পরে জশ বাটলারের সামনে তাই আবারো কোনো ইংলিশ অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার হাতছানি। শুধু বিশ্বকাপ নয়, টুর্নামেন্ট সেরার দৌড়েও ভাল ভাবেই আছেন বাটলার। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ১৯৯ রান করেছেন। এর মধ্যে সেমিতে ভারতের বিপক্ষে ৮০ রানের ইনিংস ছাড়াও সুপার-১২ এ কিউইদের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৪৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস। এ ছাড়া উইকেট রক্ষক হিসেবে ডিসমিশালের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি ৬ টি ডিসমিশাল করেছেন বাটলার। অধিনায়কত্ব, উইকেটকিপিং আর ব্যাটিংয়ের নিপুণতায় তাই টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটার হতেই পারেন বাটলার। 

 

এ বারের বিশ্বকাপের শুরুটা একদমই ভাল যায়নি শাহীন আফ্রিদির। প্রথম দুই ম্যাচেই ছিলেন উইকেটশূণ্য। কিন্তু এরপরেই স্বরূপে ফিরে আসেন তিনি। টুর্নামেন্টের প্রথম ৩ ম্যাচে যেখানে শাহিনের ঝুলিতে ছিল একটি মাত্র উইকেট, সেখানে পরের ৩ ম্যাচে তিনি নেন ৯ টি উইকেট। এবারের বিশ্বকাপ এখন পর্যন্ত ১০ টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ফাইনাল ম্যাচেও তাই ইংল্যান্ডের অন্যতম হুমকি হবে এই শাহীন আফ্রিদি। আর মেলবোর্নের ফাইনালে পেস, সুইং দিয়ে নিজের চিরায়ত কারিশমা দেখাতে পারলে শাহীন আফ্রিদিও হতে পারেন এ বারের টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটার।

 

শাহীন আফ্রিদির মতো টুর্নামেন্টে ১০ উইকেট নিয়েছেন ইংলিশ পেসার স্যাম কারানও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এবারের প্রথম ম্যাচেই নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট নিলেও পরের ৫ ম্যাচ মিলিয়ে ইংলিশ এ পেসারের উইকেট ছিল ৫ টি। আপাতদৃষ্টিতে বাকি চারজনের চাইতে একটু পিছিয়েই রয়েছেন স্যাম কারেন। তবে ফাইনালে অনবদ্য কিছু করে দেখাতে পারলে ভিন্ন কিছুও ঘটতে পারে। 

শাদাব, শাহীন, বাটলার কিংবা হেলস, এ বারের টুর্নামেন্টে যে কেউই হতে পারেন টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটার। তবে সেটার জন্য দিনশেষে মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াবে, শিরোপা। কারণ এখন পর্যন্ত এ চার ক্রিকেটারের লড়াইটা সমানে সমান। বিশ্বকাপ জয় আর ফাইনালের পারফরম্যান্সেই যে কেউ এগিয়ে যেতে পারে এ তালিকা থেকে। তবে ব্যক্তিসেরা লড়াইয়ের চেয়ে নিশ্চিতভাবেই এ চারজন মুখিয়ে থাকবে মেলবোর্নে সেই অতি আকাঙ্ক্ষিত ট্রফি উঁচিয়ে ধরার দিকে। কারণ ক্রিকেট কিংবা ক্রিকেটার, সকলের মনযোগ ঐ একটি ট্রফি কিংবা শিরোপাতেই কেন্দ্রিভূত।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link