কেন অধিনায়ক পাল্টাল ভারত!

আজকাল কিছু লিখতে-টিখতে গেলে যেন হাত পা কাঁপে! একদিকে সেই বড় বড় বিজ্ঞদের জ্ঞানের ভাণ্ডার আর অন্যদিকে ঐ কি যেন ‘ফ্যানবয়’দের দাপট। আর মাঝখান থেকে আমরা যারা দুটো ফুটেজ খাওয়ার জন্যে পোস্ট করি, আমরাই এখন পড়েছি জাঁতাকলে। তাই এই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মতপ্রকাশ করবার ইচ্ছে আর জাগে না! এর চেয়ে সবকিছু দেখেশুনে বরং লম্বা একটা ভাতঘুম দেওয়া ভালো, কেন শুধু শুধু বিজ্ঞদের কাছে ভদ্রভাষায় ইনসাল্টেড হব আর কেনই বা ফ্যানবয়দের গালি শুনতে যাব ক্রমাগত?

তবে আজ একটা হ্যাজ নামাব বলে ঠিক করেছি। ‘বিজ্ঞ’ আর ‘ফ্যানবয়’ দুই গোষ্ঠীকেই স্বাগত। বিজ্ঞেরা বড় বড় লজিক দিয়ে কাউন্টার-হ্যাজ নামান আর বাকিরা নিশ্চিন্তে গালি দিন আমায়। চলুন।

ব্যাপারটা হলো, বিরাট কোহলিকে ওয়ানডে অধিনায়কের পদ থেকে সরানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে পড়ে গেছে ধুন্ধুমার! এবারে একদল মানুষ ভাবছেন যে কোহলি বাজে রাজনীতির শিকার হলেন, তাঁকে অপমান করা হলো, একপ্রকার হেনস্থা করানো হল তাঁকে। এদ্দুর অব্দি কোনো সমস্যা নেই। কেন না ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭০ শতাংশ জয় থাকার পরেও ৩৩ বছর বয়সী একজন অধিনায়ককে অপসারিত করা হলে এসব প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

কিন্তু, পরিস্থিতি এতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এই বিষয় নিয়ে সৌরভ, দ্রাবিড়দেরও যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে সেটা নিয়েই সমস্যা। দেখুন, আমিও ব্যাক্তিগতভাবে চাইনি অধিনায়কত্বে বদল আসুক, অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বক্রিকেটে বিরাট যেভাবে তাঁর শাসন চালিয়েছেন তা সত্যিই অসাধারণ। এখন রোহিতের পালা, ভারতীয় সমর্থকরা চাইবে বিরাটের মতোই অধিনায়ক রোহিতেরও শাসন চলুক ক্রিকেটবিশ্বে, আর সাথে কিছু আইসিসি ট্রফিও ঘরে আসুক।

কিন্তু, সত্যিই কি এটাই চাইছে সকল ভারতীয় সমর্থক? নাহ্! একটা বড় ধরনের গোষ্ঠীর লোকজনেরা চাইছেন যে রোহিত অধিনায়ক হিসেবে চরম ব্যর্থ হোন, তাতে তাদের ক্ষোভ উগরে দেবার সুযোগ আসবে আরো বেশি করে। শুধু তাই নয়, প্রশাসক হিসেবে সৌরভ, কোচ হিসেবে দ্রাবিড় সক্কলে চরম ব্যর্থতায় যেন মুখ থুবড়ে পড়েন তারই কামনা করছেন প্রচুর মানুষ এবং সেটা মনে মনে নয়, বরং তা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের মতে দিনশেষে কোহলির আজ এই অবস্থার জন্যে দায়ী রোহিত-সৌরভ-দ্রাবিড়রা। স্বভাবতই এদের সাফল্যে বিন্দুমাত্র প্রসন্ন হওয়া চলে না, সে তাতে ভারতীয় ক্রিকেটের যতই উন্নতি হোক না কেন!

অবশ্য আমি কোনোদিনই বিশ্বাস করিনা যে বিরাটের জায়গায় রোহিত অধিনায়ক হয়ে গেলেই ভারত একের পর এক বিশ্বকাপ জিতে যাবে। কিন্তু অপরদিকে এটাও তো ভাবার বিষয় যে, এই ভারতীয় ক্রিকেট বরাবর ‘এক অধিনায়ক’ -এ বিশ্বাসী। আর সাদা বলের দুই ফরম্যাটে দুই অধিনায়ক মানেই তাঁর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দলের ওপর।

এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেরই প্লেয়িং ইলেভেন প্রায় একই, সেখানে একজন খেলোয়াড় দুদিন অন্তর আলাদা আলাদা অধিনায়কের অধীনে খেলতে নেমে মানসিকভাবে কতটা কমফোর্টেবল থাকবে তা আমার জানা নেই যেখানে আবার বিরাট আর রোহিত দুজনের চিন্তাভাবনা ভিন্ন প্রকৃতির। হয়তো দ্রাবিড়-সৌরভরা চাইছেন যে ড্রেসিংরুমে যেকোনো একটাই পরিবেশ থাকুক। এক্ষেত্রে কোহলিকে টেস্ট অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দিলেও অবাক হবার কিছু নেই।

তবে হ্যাঁ, মনে-প্রাণে এখনও মানি যে এই মুহূর্তে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ভারতের সেরা অধিনায়ক বিরাট কোহলিই, আপাতত পরিসংখ্যান তাই বলছে। কিন্তু বোর্ডের সিদ্ধান্তকে একেবারে বাজে বলেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সৌরভ-দ্রাবিড়রা কখনোই চাইবেন না ভারতীয় ক্রিকেটে অধ:পতন আসুক, ছাড়ুন, কমপক্ষে নিজেদের সাফল্যের কথা তো ভাববেন একবার। বোর্ডও জানত কোহলিকে সরানোর পর বিশাল জনরোষের মুখে পড়তে হবে তাদের, তাই সময় নিয়ে একপ্রকার অনেক ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্তে এসেছে।

আর বিকল্প হিসেবে কাছে বাছা হয়েছে? রোহিত! রোহিত যে খারাপ ক্যাপ্টেন নন সেটা কমবেশি সবাই জানেন, সুতরাং এমনটা নয় যে রোহিত অধিনায়ক হবার পরই ভারতীয় ক্রিকেটে স্বর্ণযুগের অস্ত চলে গেল। কোনো না কোনো সৎ উদ্দেশ্যও তো রয়েছে এই অধিনায়ক বদলের পেছনে! তাই অযথা সৌরভ-দ্রাবিড়কে গালি দিয়ে নিজের ইগো স্যাটিসফাই করা ছাড়া আর কোনো লাভ আছে বলে তো মনে হয়না।

এবার আসি বিরাটের জায়গায়, খুব মারাত্মকভাবে কি অপমান করা হলো কোহলিকে?

কিন্তু ‘বিরাট কোহলি’ নামটার ঐতিহ্য বহন করতে অধিনায়ক বিরাট কতটাই বা ভূমিকা পালন করত? অধিনায়কত্বই তো বিরাটের মতো গ্রেটের একমাত্র প্যারামিটার নয়! তাই আমার মনে হয়না এই সামান্য অধিনায়কত্ব চলে যাওয়ায় ক্রিকেটবিশ্বে বিরাটের লেগেসির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে। এই মুহূর্তে কোহলি খেলা ছেড়ে দিলেও বিরাট কোহলি নামটা ‘দ্য গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’ এর তালিকায় জ্বলজ্বল করবে, শচীন-গাভাস্কারদের মতোই।

পরিশেষে সবার কাছে একটাই অনুরোধ, যদি আপনি ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে উদ্বিগ্ন হোন, তাহলে যাকে ইচ্ছা ট্রল করুন। কিন্তু কোনো এক নির্দিষ্ট প্লেয়ারের স্বার্থে সৌরভ-দ্রাবিড়দের বিরুদ্ধে যুক্তিহীনভাবে গর্জে ওঠার বা তাকে কুরুচিকরভাবে আক্রমণ করার অধিকার তো আপনাকে কেউ দেয়নি। ভুলে যাবেননা ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁদের অবদানও কম কিছু নয়।

আর নাহলে অধিনায়ক রোহিত শর্মার ব্যর্থ হবার জন্যে অপেক্ষা করুন, তখন আর বিরাটের হয়ে কাউকে গলা ফাটাতে হবেনা, দেখবেন যা চাইছেন তাইই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link