ভারতের নিদারুণ ব্যর্থতার নেপথ্যে…

সারাবিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীরা চেয়েছিলেন ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের পুনরাবৃত্তি। কিন্তু পাকিস্তান নিজেদের কাজটা ঠিকমতো করতে পারলেও পারলো না ভারত। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা। ম্যাচ হারের পাশাপাশি গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই সমালোচকদের খোরাক জুগিয়েছে টপ অর্ডারে ভারতের ধীর গতির ব্যাটিং।

টি টোয়েন্টিতে ম্যাচ জিততে গেলে টপ অর্ডারে ঝড়ো সূচনার বিকল্প নেই। সব দলই চায় পাওয়ার প্লেতে ফিল্ডার রেস্ট্রিকশনের সুবিধা নিয়ে রানের গতি বাড়িয়ে নিতে। যেন মাঝের ওভারগুলোতে খানিকটা দেখেশুনে খেলা যায়। টি টোয়েন্টির এই বেসিক নিয়মটাই যেন ভুলতে বসেছে ভারত, এবারের বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচেই তাঁদের ওপেনিং জুটি জ্বলে উঠেনি। বরং রাহুল-রোহিত জুটির ধীরগতির ব্যাটিং প্রতি ম্যাচেই সমস্যায় ফেলেছে দলকে। 

কখনো বিরাট কোহলির অতিমানবীয় ইনিংস, আবার কখনো সুরিয়াকুমার যাদবের অবিশ্বাস্য ফর্মের সুবাদে গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলোতে ভারতের ব্যাটিংয়ের এই দুর্বলতা বেরিয়ে আসেনি। কিন্তু সেমিফাইনালের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই যেন চোখে আঙুল দিয়ে তাঁদের ভুলগুলো দেখিয়ে দিলেন জস বাটলার-অ্যালেক্স হেলসরা। প্রথম ১২ ওভারে ভারত যেখানে তুলতে পেরেছে মাত্র ৮৩ রান, অপরপক্ষে দুই ইংরেজ ওপেনার তুলেছেন বিনা উইকেটে ১২৫ রান।

আদিল রশিদ-লিয়াম লিভিংস্টোনের নির্বিষ স্পিনের সামনে রীতিমতো হাঁসফাঁস করেছেন রোহিত শর্মা। তাঁদের রেখে যাওয়া চাপের কারণেই শুরু থেকেই আক্রমণাত্নক হতে গিয়ে মাত্র ১৪ রানে আউট হন সুরিয়াকুমার যাদব। যদি ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ ছোট হতো তাহলে তবু এমন রক্ষণাত্নক ব্যাটিংয়ের জবাব থাকতো। অথচ সাত কিংবা আটে নামা আক্সার প্যাটেল-রবিচন্দ্রন অশ্বিনরাও ব্যাট চালাতে জানেন। সুতরাং ইনিংসের শুরুতে এমন ধীরগতির ব্যাটিংয়ের কোনো ব্যাখ্যাই নেই ভারতীয় টপ অর্ডারের কাছে। 

রাহুল দ্রাবিড় কোচ হয়ে আসার পর থেকেই ভারতীয় ব্যাটারদের মাঝে থিতু হয়ে তারপর মেরে খেলার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। রোহিত শর্মা যদি পূর্বের ফর্মে থাকতেন, তাহলে হয়তো প্রশ্ন তোলার জায়গা থাকতো না। সেরা ফর্মের রোহিত একবার সেট হয়ে গেলে ধবংসাত্নক ইনিংস খেলে প্রতিপক্ষকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলতেন। কিন্তু রোহিত সেই সময়টা পেছনে ফেলে এসেছেন বহু আগেই, এখনকার রোহিত যেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ।

ফর্ম এবং ফিটনেসের সাথে লড়াই করছেন, আগের সেই দৌড়ানোর ক্ষমতাও যেন কমে গেছে। একমাত্র নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচটাতে ১২০ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন। তিন ম্যাচে তো ছাড়াতে পারেননি ১০০ স্ট্রাইকরেটও। এতোটা প্রভাব পড়তো না দলের ব্যাটিং এ যদি না তাঁর সঙ্গী লোকেশ রাহুল নিজের সেরা ফর্মে থাকতেন। কিন্তু রাহুল নিজেও রানের মধ্যে নেই বহুদিন, ফলে তিনিও উইকেটে সময় কাটাতে চাইছেন। দুয়েমিলে ভারতের টপ অর্ডার হয়ে গেছে নির্বিষ, যারা কিনা প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর সামান্যতম আঁচড়ও কাটতে পারছেন না। 

গ্রুপপর্বের ম্যাচের মতো আজকের ম্যাচেও তাঁদের ব্যর্থতা আড়াল হয়ে যেতো হার্দিক পান্ডিয়ার সুবাদে। তাঁর ঝড়ো ৬৩ রানের সুবাদে লড়াই করার মতো সংগ্রহ পেয়েছিল ভারত। কিন্তু ইংল্যান্ড তো আর বাংলাদেশ কিংবা জিম্বাবুয়ে নয় যে চাপের মুখে ভেঙে পড়বে।

২০০ রানের পিচে তাই ১৬৮ রান কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তাঁদের জন্য, ভারতীয় বোলারদের নাকের পানি চোখের পানি এক করে ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের ওপেনাররা। সে কারণেই কিনা ২০০৭ নয় বরং ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালের পুনরাবৃত্তিই ঘটবে এবার মেলবোর্নে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link