ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে মিরপুরে নিজেকে একটু ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন মাহমুদুউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের এই অধিনায়কের সামনে যে কঠিন পরীক্ষা। ব্যাটসম্যান হিসেবে ও অধিনায়ক হিসেবেও খুব একটা ভালো সময় পার করছেন না তিনি। অথচ এবছরই তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলবে এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মত আসরগুলো। বাংলাদেশের অধিনায়ক কী প্রস্তুত?
এবছর শ্রীলঙ্কাতে এশিয়া কাপ হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। এরপর অস্ট্রেলিয়াতে আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ফলে এবছর বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অথচ যে রিয়াদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার কথা তিনিই আছেন পিছনের সারিতে।
২০১৯ সালে সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হবার পর টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অধিনায়ক খুঁজছিল বাংলাদেশ। সাদা পোশাকের অধিনায়ক হয়েছিলেন মুমিনুল হক আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দায়িত্ব পরে রিয়াদের কাঁধে। তাঁর নেতৃত্বে এই ফরম্যাটটায় গুছিয়ে উঠতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে আজ প্রায় তিন বছর পর এসে এই ফরম্যাটটায় আরো যেন অগোছালো বাংলাদেশ।
একইসময় টেস্ট ক্রিকেটের দায়িত্ব নেয়া মুমিনুল হক ইতোমধ্যেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন। নতুন অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সাকিব আল হাসানের নাম। টেস্টে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স নিয়ে এবং মুমিনুলের ফর্ম নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক। শেষপর্যন্ত মোটামুটি বাধ্য হয়েই দায়িত্ব ছাড়তে হলো তাঁকে। অথচ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক রিয়াদ যেন সবার চোখের আড়ালে।
মুমিনুলকে যদিও টেস্টে কিছু সাফল্য পেয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছেন, দারুণ একটা পেস আক্রমণ গড়ে তুলেছেন এছাড়া টেস্টে বাংলাদেশের একাদশটাও অন্তত তিনি গুছিয়ে ফেলেছেন। তবুও বাংলাদেশ সাফল্য পাচ্ছিল না। স্বাভাবিক ভাবেই সমালোচনা হয়েছে, মুমিনুলও দায়িত্ব ছেড়েছেন।
একইচিত্র হবার কথা ছিল রিয়াদের ক্ষেত্রেও। কেননা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও বাংলাদেশের একই দশা। বলা ভালো, এই ফরম্যাটে অবস্থাটা আরো বেহাল। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রায় তিন বছর হয়ে যাওয়ার পরেও এখনো ঠিক নিজের দলটাই গুছিয়ে উঠতে পারেননি এই অধিনায়ক। ওপেনিং পজিশন, মিডল অর্ডার, স্লগার কিংবা বোলিং আক্রমণ প্রতিটি জায়গা নিয়েই আছে প্রশ্ন।
এমন একটা এলেমেলো দল নিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মেজাজটাও ঠিক ধরতে পারছেনা বাংলাদেশ। গতবছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও চূড়ান্ট ব্যর্থ হয়েছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। মূল পর্বের সবগুলো ম্যাচ তো হেরেছিলই এমনকি সুপার টুয়েলভে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও হেরেছিল বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপে এমন ভরাডুবির পরেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নতুন অধিনায়ক খোঁজার একটা গুঞ্জন উঠেছিল। তবে পরে সেই আলোচনা হঠাতই থেমে যায়। বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের সাথেও ঘরের মাঠে হেরেছিল বাংলাদেশ। তবুও আরেকটি বিশ্বকাপে রিয়াদেই কেন ভরসা সেই প্রশ্ন তোলাই যায়। নাকি ক্রিকেট বোর্ডের এই হাটাও আইন শুধু মুমিনুলদের জন্যই?
টি-টোয়েন্টি অধিয়ানক হিসেবে এখন পর্যন্ত একেবারেই ব্যর্থ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এছাড়া নিজের ব্যাটিংটা নিয়েও খুব একটা সুখকর অবস্থানে তিনি নেই। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ঠিক আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটা তিনি করতে পারছেন না। তাঁর কাছ থেকে দলের যে প্রত্যাশা সেটা মিটছে না। ফলে রিয়াদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়াও হচ্ছেনা।
মুমিনুলের ব্যাপারে বিসিবি তৎপর হয়ে উঠেছিল। টেস্ট ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক করা হয়েছে। তাহলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিয়ে কেন এই উদাসীনতা? নাকি এই সময়ে এসেও ঠিক টি-টোয়েন্টির গুরুত্বটা বুঝতে পারছেনা বিসিবি?