কোথাও একটা মৃদু ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কাতার নামক মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে কারা যেন উৎসব করছে। সেই উৎসবের কারণ নিশ্চয়ই কারও অজানা না। চার-চারটি বছরের অপেক্ষার অবসান। এবারের অপেক্ষা খানিকটা বেশি। মাস চারেক অপেক্ষার প্রহর বেড়েছে। সে মোতাবেক উত্তেজনার পারদ থাকার কথা আকাশ চুম্বী। কিন্তু কেন যেন সেই উত্তেজনায় এবার ভাটা পড়েছে।
বাংলাদেশে ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয়। তবে এই দেশের প্রতিটা মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফুটবল মিশে আছে। ঢাকার বাইরে ছোট-খাটো স্থানীয় টুর্নামেন্ট গুলোতেও মানুষের উপচে পড়া ভীড় হয়। আর ফুটবল বিশ্বকাপ এলে তো উত্তেজনা ছাড়িয়ে যায় সব কিছুর মাত্রা। ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে অন্য সব দেশেও যে উন্মাদনা ছড়ায় না তা কিন্তু নয়। কোন এক অজানা কারণে এবার সেই আমেজটা খানিকটা ফিঁকে।
এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে অসময়ে বিশ্বকাপ আয়োজন। কাতার যেহেতু মরুর দেশ সেখানটায় স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা বেশি। তাইতো চিরায়ত জুন-জুলাই মাসে বিশ্বকাপ আয়োজিত না হয়ে, খানিকটা বেলা করেই আয়োজিত হচ্ছে এবারে ফুটবল বিশ্বকাপ।
তবে, ক্লাব ফুটবল নিশ্চয়ই থেমে থাকেনি এর মাঝে। বরং পুরোদমে চলেছে ইউরোপ থেকে শুরু করে বিশ্বের নানান প্রান্তের ফুটবল টুর্নামেন্টগুলো। এমনকি বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র ছয় দিন আগেও ইউরোপের নানান লিগগুলোতে খেলা চলমান।
অথচ এর আগে ক্লাব ফুটবলের মৌসুম শেষেই আয়োজিত হত ফুটবল বিশ্বকাপ। মানুষ আগ্রহের সাথে তখন অপেক্ষা করত। দলগুলো আগেভাগেই আয়োজক দেশে নিজেদের ঘাটি গেড়ে বসত। প্রতিদিন অনুশীলন। খেলোয়াড়দের খুনশুটি, দুষ্টমির নানা খবর ছড়িয়ে যেতে পুরো বিশ্বে।
দলগুলোর শক্তি মত্তা নিয়ে আলাপের যেন কমতি থাকত না। তবে এবার তেমনটা হচ্ছে না, কারণ ফুটবল সংশ্লিষ্ট সবাই তো ব্যস্ত ক্লাব ফুটবল নিয়ে। এতেই খানিকটা দেরিতেই শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপকে ঘিরে আলোচনা।
অন্যদিকে কাতার বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যার কারণে ইউরোপের অধিকাংশ সমর্থক গোষ্ঠী কাতার বিশ্বকাপকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। সেটাও খানিকটা প্রভাব ফেলেছে। সাধারণত ইউরোপীয়দের ফুটবল নিয়ে বেশি মেতে থাকতে দেখা যায়।
তাছাড়া ফুটবল মিডিয়ার একটা বড় অংশের নজর থাকে ইউরোপে। সুতরাং সমর্থক গোষ্ঠীদের এমন চিন্তাভাবনা নিশ্চয়ই মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ছে অল্প বিস্তর। এসব কারণেও ঠিক আমেজ, উত্তেজনাটা টের পাওয়া যাচ্ছে না।
যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট চিন্তা করা যায় তবে এই ফুটবল পাগল দেশটিতে আমেজ কমের বহু কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় কারণ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। ফুটবল নিয়ে মেতে থাকা একটা বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত।
তাই হয়ত আমেজটা ঠিক জমছে না। তাছাড়া বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই নভেম্বর মাসের দিকেই অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পরবর্তী ক্লাসে উন্নিত হবার পরীক্ষা চলামান থাকে। সেটাকেও কারণ হিসেবে ধরা যায়।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও এই পরীক্ষার কারণেও উন্মদনা ছড়াচ্ছে খুব ধীরস্থির ভাবেই। সেই সাথে উপমহাদেশে আমেজের কমতির অন্যতম কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। উপমহাদেশের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। ফুটবল বিশ্বকাপ ঘেঁষে শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তাই আমেজের ঘাটতি ঘটানোর আরও এক কারণ।
তবে এত সব কারণের মাঝেও নিশ্চয়ই দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ তাঁর পুরনো জৌলুশ খুঁজে পাবে। অধিকাংশ দলই তাদের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। নানা প্রান্ত থেকে খেলোয়াড়রা একত্রিত হতে শুরু করেছে।
অতি শীঘ্রই ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা ছাড়িয়ে যাবে সব কিছুকে। অর্থনৈতিক নানা হুমকির মাঝেও, পুরো বিশ্ব আবার নেচে উঠবে ‘দ্য কাপ অব লাইফ’ অথবা ‘ওয়েভিং ফ্ল্যাগ’ এর সুরের ছন্দে।