উরুগুয়ে ফুটবল দলের জার্সিটা কখনও মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেছেন কি? না দেখলে একটু গুগল করে দেখে নিন। ভাল করে খেয়াল করলে দেখবেন, তাদের জার্সিতে চারটি তারকা দেওয়া। এই একেকটি তারকার অর্থ হল একেকটি বিশ্বকাপ।
কিন্তু ব্যাপার হল, উরুগুয়ে তো বিশ্বকাপ জিতেছে দু’বার। প্রথমবার ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ফাইনালে নিজেদের মাটিতে তারা ৪-২ গোলে হারায় আর্জেন্টিনাকে। এরপর ১৯৫০ সালে খ্যাতনামা মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় লাতিন আমেরিকান দলটি। এখন অবধি ওখানেই শেষ, তাহলে, বাকি দু’টি তারকার অর্থ কি?
অতিরিক্ত দু’টি তারকার অর্থ হল দু’টি অলিম্পিক সোনা, যা উরুগুয়ে জিতেছিল যথাক্রমে ১৯২৪ ও ১৯২৮ সালে। তবে, এই গল্পের এখানেই শেষ নয়। যেমন আর্জেন্টিনার জার্সিতে দুটি তারকা। তারা ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপজয়ী দল। নীল-সাদা জার্সিতে ২০০৪ ও ২০০৮ অলিম্পিক ফুটবলের সোনাজয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই।
তাহলে, উরুগুয়ে কেন দুই অলিম্পিক সোনার জন্য বাড়তি দু’টি তারকা যোগ করার ‘সুবিধা’ পায়? এই উত্তরের জন্য একটু ইতিহাস ঘাটতে হবে। ফিফা ১৯০৪ সালে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজনের চিন্তা করে। অনেক আলোচনার পর ২০-এর দশকে ফাউন্ডেশনের প্রধান জুলে রিমে বিশ্বকাপ আয়োজনের ব্যাপারে সদস্য দেশগুলোর সম্মতি আদায় করেন।
তবে, তখন ফিফা অবকাঠামো কিংবা আর্থিক দিক থেকে আজকের মত স্বচ্ছল ছিল না। তাই, প্রথম দিকে তারা অলিম্পিকের সাথে সমন্বয় করে বিশ্বকাপ আয়োজনের চিন্তা করে। ১৯২৪ ও ১৯২৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজনটা ছিল মূল অলিম্পিক গেমসের ফুটবল আসরটাই। যদিও কালের ধারায় সেটা ফিফা বিশ্বকাপ নয়, বরং অলিম্পিক ফুটবল হিসেবেই পরিচিত হয়েছে।
ফিফার অন্তর্ভূক্তির আগে অলিম্পিক কমিটি এর ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহনের ব্যাপারে অনেক রকম বিধিনিষেধ আরোপ করত। ফিফার আগমনের ফলে সেসব নিয়ম শিথিল হয়। ওই দু’টো অলিম্পিক ফুটবল আয়োজিত হয় ফিফার দেওয়া নীতিমালা মেনেই। ফিফা তাই ওই দু’টি অলিম্পিক ফুটবলে সোনাজয়ী দলকে বিশ্বকাপজয়ী দল হিসেবে মানে। তাই উরুগুয়ে নিজেদের জার্সিতে বাড়তি দু’টি তারকা যোগ করার সুবিধা পায়।
বাকি অলিম্পিকগুলোর সাথে ফিফার সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। অলিম্পিকের সাথে তাঁদের চুক্তিও শেষ হয়ে যায়। তাই সেই সময় থেকে অলিম্পিকগুলো আর দশটা চ্যাম্পিয়নশিপের মত মর্যাদা ভোগ করে এসেছে।
১৯৩০ সালে ফিফা স্বাধীনভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করে। প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করে সেই উরুগুয়ে। দু’টো অলিম্পিক জয়ের সুবাদেই আয়োজক হিসেবে তাঁদের বেছে নেয় ফিফা। ফলে, বলা যায় ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে জড়িয়ে আছে উরুগুয়ের নাম।
এখানে একটু যোগ করা উচিৎ যে চারটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ (দুই বিশ্বকাপ ও দুই অলিম্পিক সোনা) ছাড়াও আরেকটি বড় শিরোপা জিতেছে উরুগুয়ে। ১৯৮০ সালে তারা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন্স গোল্ড কাপ জেতে। ফাইনালে তারা হারায় ব্রাজিলকে। তবে, এই শিরোপা উরুগুয়ের জার্সিতে বাড়তি কোনো তারকা যোগ করেনি। যদিও, এটা উরুগুয়ে ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় গুলোর একটি।
এই টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয়। ফিফার নীতিমালা বলছে ২০৩০ সালে, বিশ্বকাপের ১০০ বছর পূর্তিতে এই টুর্নামেন্ট আবারও আয়োজিত হবে। সেখানে শুধু সেই দেশগুলোই সুযোগ পাবে যারা কমপক্ষে একবার করে হলেও বিশ্বকাপ জিতেছে, ১৯৮০ সালেও তাই হয়েছিল।