ক্রিকেটের মাঠে অধিনায়কের দায়িত্বটা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই। দলের সবাইকে আগলে রাখার কাজটা তাঁদের করতে হয় খুব নিষ্ঠার সাথে। এখানেই কি শেষ? – অধিনায়ককে তো আরো কত ধরনের ভুমিকা পালন করতে হয়!
টেস্ট ক্রিকেটে একটা জায়গায় অধিনায়কও যেন ব্যতিক্রম। এক সাথে অধিনায়কত্ব ও উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে অনেক অধিনায়ককেই দেখেছি। কিন্তু, কিন্তু, এদের মধ্যে গুটি কয়েক ছিলেন যারা ব্যাট হাতেও ইনিংসের সূচনা করতেন। সেই সংখ্যাটা মাত্র তিনজনের। তাঁদের নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
দেরি না করে শুরু করা যাক।
- পার্সি শেরওয়েল (দক্ষিণ আফ্রিকা)
একজন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার। দশ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন এই শেরওয়েল।
উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছেন ১৩ টেস্ট । ক্যারিয়ারে ১৩ টেস্টে ২২ ইনিংস ব্যাট করেছেন। ২৩ গড়ে মাত্র ৪২৭ রান করেছেন। একটা শতকের পাশাপাশি আছে একটা অর্ধ শতক ও। চার বার অপরাজিত ছিলেন।
তাঁর অভিষেক টেস্টেই ইংল্যান্ডকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ১৯০৬ সালে জোহানেসবার্গে ইংল্যান্ডকে হারাতে তাঁর অপরাজিত ২২ ইনিংসটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিল। শেষ উইকেটে সতীর্থের সাথে তাঁর ৪৮ রানের জুটিই দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দিয়েছিল এক উইকেটের জয়। ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরিটাও করেছেন ইংল্যান্ডের লর্ডসে।
উইকেটরক্ষক হিসেবে ২০ টা ক্যাচ নিয়েছেন। স্ট্যাম্পিং করেছেন ১৬ টা। শুধু ক্রিকেট নয়; শেরওয়েল টেনিসও খেলতেন। টেনিসে দক্ষিণ আফ্রিকান চ্যাম্পিয়নশিপ টাইটেল জেতার অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর।
তবে একটা জায়গায় তাঁর রেকর্ডটা এখনো কেউ টপকাতে পারেনি। টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে একইসাথে ব্যাটিং ওপেন ও উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করা প্রথম ক্রিকেটার তিনি। সাত বার এমন নজির দেখান তিনি।
- গ্যারি আলেকজান্ডার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
এই জ্যামাইকান ক্রিকেটার ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন ২৫ টেস্ট। তিনি ছিলেন মূলত উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ২৫ টেস্টে ৩৮ ইনিংসে ব্যাট করার সৌভাগ্য হয়েছিল তার। ৩০ গড়ে করেছেন ৯৬১ রান। একটা শতক আছে। সাতটা অর্ধশতকও আছে।
গ্লাভস হাতে ৯০ ডিসমিসাল আছে তাঁর। ৮৫ টা ক্যাচ; স্ট্যাম্পিং পাঁচটা। ১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মতো তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নেতৃত্ব দেন। জয়ও পেয়েছিল তাঁর দল। ব্যাটে ও উইকেটের পিছনে পারফর্ম ও করেন। সেকেন্ড টেস্টের সেকেন্ড ইনিংসে একটা গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসও খেলেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই তাঁর সাফল্যের পাল্লাটা ভারী। ক্যারিয়ারে একমাত্র সেঞ্চুরিটা এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই করেছিলেন। শুধু কী তাই? টেস্টে সাত ফিফটির ছয়টা তো তাদের বিপক্ষেই।
একটা রেকর্ডও আছে তাঁর। একই টেস্টে অধিনায়কত্ব, উইকেটরক্ষক ও ব্যাটিং ওপেন করার রেকর্ড। ইতিহাসের দ্বিতীয় ক্রিকেটার যিনি দুই টেস্টে একইসাথে উইকেটকিপার ও ওপেনিংয়ে ব্যাট করেছেন। তিনি আরেকটা কারণে বিখ্যাত, কারণ তিনি ছিলেন ওই প্রজন্মের শেষ শ্বেতাঙ্গ ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার।
- ইমতিয়াজ আহমদ (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট দলের অন্যতম সদস্য তিনি। তিনি মূলত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। মাঝেমধ্যে দলের প্রয়োজনে খেলতেন টপ অর্ডারেও। ব্যাটে হাতে ৪১ ম্যাচে ২ হাজারের উপরে রান করেছেন। তিনটা সেঞ্চুরি, ১১ টা হাফ সেঞ্চুরি আছে। একটা ডাবল সেঞ্চুরিও আছে তাঁর। ইতিহাসে প্রথম উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড তাঁরই।
উইকেটকিপার হিসেবেও সফল তিনি। ৯৩ টা ডিসমিসাল আছে। এরমধ্যে ৭৭ ক্যাচ; ১৬ টা স্ট্যাম্পিং। ইমতিয়াজ আহমদ টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় অধিনায়ক যিনি তিন ম্যাচে একই সাথে উইকেটরক্ষক ও ব্যাটিং ওপেন করেছিলেন।
নিকট অতীতে এমন রেকর্ড নেই বললেই চলে। হ্যাঁ, অধিনায়কত্ব ও উইকেরটক্ষকের ভুমিকায় ছিলেন অনেকেই। তবে, একই সাথে তিন ভুমিকায় দেখা গেছে এই তিনজনকেই।