‘সম্ভাবনাময়’ শব্দে তো অনেকেই আটকে থাকেন। প্রতিভার সব নিংড়ে দিয়ে পরিস্ফূরণ ঘটাতে পারে কজন? আফিফ হোসেন ধ্রুব একটা বিশ্বাস জাগাতে বাধ্য করেছিলেন। দলের ক্রান্তিলগ্নে যিনি সকল স্নায়ুচাপ জয় করে জয়ের পথে হাঁটতে পারেন, তাঁকে নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে তাই দোষ ছিল না।
তবে সময়ের পরিক্রমায়, আফিফও যেন উল্টো কিছু ভাবতে বাধ্য করছেন। ধ্রুবকে যে আর দলে ধ্রুব ভাবা যাচ্ছে না। ব্যাট হাতে ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছেন। নামে ভারে বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে নেমেই যেন ক্রিজে থিতু হতে পারছেন না। সাবলীল ব্যাটিংয়ের চিত্র তো দূরে থাক, স্পিনারদের বিপক্ষে রীতিমত হাসফাঁস করছেন তিনি।
এখন পর্যন্ত ২৫ টা ওয়ানডে আর ৬০ টা টি-টোয়েন্টির ছোট ক্যারিয়ার আফিফের। স্যাম্পল সাইজ হয়তো খুব বড় নয়। তবে এর মধ্যে আফিফের দুর্বলতা চোখে পড়েছে প্রবলভাবে। আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিয়েই যেহেতু বাংলাদেশের এ বছরের প্রস্তুতি। তাই পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে আফিফের খেরোখাতা একটু বিশ্লেষণ করা যাক।
আফিফ এখনো সেঞ্চুরির স্বাদ পাননি। তবে তিনটা অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। তিনটার মধ্যে দুটি অর্ধশতকই ছিল ম্যাচ উইনিং ইনিংস। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে আর আফগানিস্তান হলেও ম্যাচ পরিস্থিতিতে সে দুটো ম্যাচের পারফরম্যান্সকে কোনোভাবেই নিচের কাতারে রাখা যায় না।
কিন্তু, শঙ্কার ব্যাপার হল, ব্যাট হাতে আফিফের সফলতা এখন পর্যন্ত ঐ দুটি ইনিংসেই আবদ্ধ হয়ে আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যদিও একটা ফিফটি পেয়েছে। তবে এ বাদে বড় দলগুলোর বিপক্ষে মোটাদাগে ব্যর্থ বাঁ-হাতি এ ব্যাটার।
সর্বশেষ দুই সিরিজে ভারত আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সব মিলিয়ে মোট ৬ টি ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু এ ৬ ম্যাচে রান করেছেন মাত্র ৬১। এর মধ্যে মাত্র দুইবার এক অঙ্ক টপকে দুই অঙ্কের ঘরে ইনিংস খেলেছেন। যার মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস মাত্র ২৩!
ভারত, ইংল্যান্ড বাদ দিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৩ টি ম্যাচ খেলেছেন আফিফ। কিন্তু ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সে ৩ ম্যাচে ব্যাট হাতে আরো বিবর্ণ ছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে নিজের নামের পাশে মাত্র ৯ টি রান যোগ করতে পেরেছিলেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যদিও ৭২ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস রয়েছে তাঁর। তবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে খেলা বাকি দুই ম্যাচে করেছেন মাত্র ১৭ রান। অর্থাৎ ২৫ ম্যাচের ছোট এ ক্যারিয়ারে বিচ্ছিন্ন কয়েকটা ম্যাচ বাদে সিংহভাগ ম্যাচেই হাসেনি আফিফের ব্যাট।
এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে যার পা পড়েছিল, তাঁর ব্যাটিংয়ে সমস্যাটা কোথায়? ক্রিকেট বিশ্লেষক থেকে শুরু সমর্থক, প্রায় সবাই এক বাক্যে মেনে, আফিফ টেকনিক্যালি অনেক সমৃদ্ধ।
কিন্তু, হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেওয়ার মতো ব্যাপার হল, আফিফের সীমাবদ্ধতাও তাঁর টেকনিকেই। এখন পর্যন্ত লেগ সাইডে লেন্থ বলে খেলতে বেগ পেতে হয় তাঁকে। সময় অনেক গড়িয়েছে। কিন্তু আফিফ সেই সমস্যা থেকে উতরাতে পারেননি। রয়ে গিয়েছেন আগের সমস্যা নিয়ে।
বাংলাদেশ দলে আফিফের মূল রোল মিডল অর্ডারে। আর মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে হলে স্পিন বলে ভাল খেলাটা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আফিফের ভীতির জায়গাটা তো সেই স্পিনেই। তাই মিডল অর্ডারে ব্যাটে নেমেই স্পিন খেলতে অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছেন তিনি। ফলত, ইনিংস বড় করতে পারছেন না। আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন দ্রুতই।
আফিফ স্পিন কতটা দুর্বল, যুক্তি সাপেক্ষে সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের কিছু পরিসংখ্যান টেনে আনা যেতে পারে। সে ডিপিএলে আফিফ ৬ বার আউট হয়েছেন স্পিনারদের বলে। আর স্পিনারদের বিপক্ষে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ৬৫.৩৮। অর্থাৎ স্পিনারদের বিপক্ষে ওভারপ্রতি ৪ করেও রান তুলতে পারেননি এ ব্যাটার।
আফিফের এ সব ব্যর্থতার চিত্রে তাই প্রশ্ন এসেই যায়, আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে কতটা কার্যকরী হবেন তিনি। ভারতের পিচে প্রচুর রান আসে। তবে তুলনামূলক স্পিনাররা উইকেট থেকে থেকে ভালই সুবিধা পান। তো এমন সব পিচে আফিফ আদৌ নিজের ছন্দটা দেখাতে পারবেন? সংশয়টা তাই থেকেই যায়।
সংশয়টা আরো তীব্র হয়, যখন সেটি আইসিসি’র টুর্নামেন্ট। এখন পর্যন্ত দুইবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছেন আফিফ। তবে সে দুই বিশ্বকাপে আফিফের পারফরম্যান্সের অবস্থা হতশ্রী বললেও ভুল হয় না। ১৩ ম্যাচ খেলেছেন। গড়টাও সেই ১৩ ই(১৩.৫৫)। কোনো ফিফটি নেই। সর্বোচ্চ ৩৮ রানের একটা ইনিংস আছে কেবল।
যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে একদিনের ক্রিকেট পুরোপুরিই আলাদা। তারপরও বড় আসর আসলেই আফিফ যেন বারবার পা হড়কে ফেলেন। তাই ২৩ এর ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফিফের দলে থাকা নিয়েও এক প্রশ্ন এসে যায়।
লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলার মতো শক্তি, সামর্থ্য কোনোটাই নেই। আবার তার সাথে রয়েছে স্পিনারদের না খেলতে পারার সীমাবদ্ধতা। সব মিলিয়ে দলে আফিফ হোসেন ধ্রুব’র জায়গাটা এখন বেশ নড়বড়েই বলা যায়। সময়ের ব্যবধানে, নিজের চেনা ছন্দে ফিরতে না পারলে ধ্রুব নিশ্চিতভাবেই আর দলে ধ্রুব থাকবেন না, পড়ে যাবেন অনিশ্চয়তায়।