এক ঝড় এসে ভেঙে দিয়ে গেল

এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে! স্বপ্নটা যেন মাঝ আকাশে ভেঙে পড়া বিমানের মতো—মেঘের আড়ালে যে বিমানটা হারিয়ে যায় চিরতরে!

তাঁর চোখে ছিল দেশের হয়ে ১০০ টেস্ট খেলার স্বপ্ন। প্রতিভা ছিল, ব্যাটে ছিল প্রতিশ্রুতি — ভবিষ্যতের অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং স্তম্ভ হয়ে ওঠার সক্ষমতাছিল। কিন্তু, ২৭ বছর বয়সেই উইল পুকোভস্কি থেমে গেলেন। চুপচাপ, ক্লান্ত, কিছুটা দু:খ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে নিয়তির কাছে হেরে গিয়ে বলে দিলেন— ‘আমি আর ক্রিকেটই খেলব না।’

একটা টেস্ট। শুধুমাত্র একটা। সিডনিতে, ভারতের বিরুদ্ধে। যেখানে নিজের অভিষেকে ফিফটি করেছিলেন — সেখানেই গল্পটা শেষ হয়ে যাবে, কে জানত! একশো টেস্ট খেলার স্বপ্ন ছিল, কিন্তু বাস্তবে নামের পাশে রইল শুধুই একটা টেস্ট — গল্পটা যেন অচেনা কোনো ট্র্যাজিক নভেল থেকে উঠে আসা।

যাঁকে ঘিরে স্বপ্ন বুনেছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, সেই উইল পুকোভস্কির নাম আজ লেখা থাকবে ‘হোয়াট কুড হ্যাভ বিন’-এর তালিকায়। মাত্র ২৭ বছর বয়সে, যখন একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার সাধারণত গতি পেতে শুরু করে, সেই ২৭ বছর বয়সেও লিখে ফেলতে হল ক্যারিয়ারের এপিটাফ।

২০২৪ সালের মার্চে, শেফিল্ড শিল্ডে রাইলি মেরেডিথের একটি বাউন্সার। সেটাকে অন্য দশটা ডেলিভারির মতো মনে হলেও পুকোভস্কির জীবনে সেটাই ছিল চূড়ান্ত গন্ত্য। ব্যাট নামেনি, মাথায় লাগল বল, আর তারপর – ক্যারিয়ারের আলো নিভে যেতে লাগল ধীরে ধীরে।

উইল পুকোভস্তি বলেন, ‘ওই কনকাশনের পর হাঁটাচলা করাটাও কঠিন হয়ে পড়েছিল। বাড়ির কাজ করতে পারতাম না, সারাদিন ঘুমিয়ে থাকতাম। প্রথম কয়েকটা মাস ছিল বিভীষিকাময়।’

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) মেডিক্যাল প্যানেল তখনই তাঁকে অবসরের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু, তিনি মানতে চাননি। কে চায় নিজের স্বপ্নকে এভাবে গলা টিপে মারতে।  তিনি বলেন, ‘আমি অপেক্ষা করছিলাম, যদি উপসর্গগুলো চলে যায়। কিন্তু যায়নি। আসলে আমি চাইতাম ঠিক হয়ে যাই, আবার ব্যাট তুলে নিই। আমি চেয়েছিলাম দলের ব্যাটিং লাইনআপের নেতা হতে। ১০০ টেস্ট খেলার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেটা আর হলো না। একটাতেই শেষ। সব কিছু শেষ!’

এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে! স্বপ্নটা যেন মাঝ আকাশে ভেঙে পড়া বিমানের মতো—মেঘের আড়ালে যে বিমানটা হারিয়ে যায় চিরতরে! কিন্তু, জীবনের চেয়ে ১০০ টেস্ট বড় নয়, বেঁচে থাকার চেয়ে ক্রিকেট বড় নয়। প্রতিটা মুহূর্ত নিশ্বাস নিতে পারার যে দারুণ অনুভূতি, বাইশ গজ সেখানে তুচ্ছ!

Share via
Copy link