চলমান বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টির সবথেকে বড় অঘটন কিংবা সবথেকে আশ্চর্যান্বতি ঘটনা হতে পারতো স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ১৪০ রান তাড়া করে হেরে যাওয়া কিংবা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাত্র ৫৫ রানেই অলআউট হয়ে যাওয়া।
কিন্তু এই দু’টোর একটাও এই বিশ্বকাপের এখন পর্যন্ত ঘটা সবচেয়ে বড় অঘটন কিংবা আশ্চর্যান্বিত ঘটনার কোনটাই না। নামিবিয়ার কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। তাঁরা বিশ্বকাপের সহযোগী দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো খেলছে আইসিসির বৈশ্বিক কোন আসরের মূল পর্ব। স্বপ্নের যাত্রা!
তবে সব স্বপ্নের যাত্রার কিছু গল্প থাকে, কিছু না জানা গল্প। নামিবিয়ার সেই না জানা গল্পে যাওয়ার আগে চলুন একটু স্মৃতিচারণ করি তাঁরা এই বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে অভূতপূর্ব পারফর্মেন্স। নামিবিয়া বাছাই পর্বের ‘এ’ গ্রুপে লড়াই করেছেন শ্রীলঙ্কা, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে।
নিজেদের প্রথম বাছাইপর্বের ম্যাচে নামিবিয়া মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। অভিজ্ঞতা কিংবা দারুণ বোলিং আক্রমণের সামনে মাত্র ৯৬ রানে। ওই সেই অভিজ্ঞতায় হারতে হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তবে সেই ম্যাচ থেকেই হয়ত ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ খুঁজে পায় জেরার্ড এরাসমাসের নেতৃত্বাধীন নামিবিয়া।
পরবর্তী দুই ম্যাচেই জয় তুলে নেয় নামিবিয়া। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষের জয় নিসঃন্দেহের নামিবিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়। ডাচদের দেওয়া ১৬৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা নামিবিয়া ১৯ ওভারেই জিতে নেয় ম্যাচ। অলররাউন্ডার ডেভিড উইসের দূর্দান্ত ৬৬ রান ও অধিনায়ক এরাসমাসের দ্রুত ৩২ রানের ইনিংসের উপর ভর করে জয়ের বন্দরে পৌছে যায় নামিবিয়ার ছোট্ট নৌকা।
নামিবিয়ার তৃতীয় ম্যাচটি ছিল ‘এ’ গ্রুপের অলিখিত ফাইনাল। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিই ছিল কে সুপার টুয়েলভের যাত্রা নির্ধারণি ম্যাচ। দুই দলই একটি করে ম্যাচ জিতেছে এবং হেরেছে। সেই ম্যাচে জয়ের বিকল্প কিছুই ছিল না দুই দলের কাছে। নামিবিয়ান পেসার জ্যান ফ্রাইলিংক ও উইসের অনবদ্য বোলিং আক্রমণে মাত্র ১২৬ রানেই গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ডের ইনিংস। এই ম্যাচে আট উইকেটের বড় জয় পায় নামিবিয়ার অধিনায়ক এরাসমাসের দায়িত্বশীল অর্ধশতকে। তরী এবার ছুটলো তবে স্বপ্নের স্রোতস্বিনী ধরে।
তবে এই যে বিশ্বকাপের মূল আসরের যাত্রা এটা যে খুব মসৃণ ছিল তা নয়। নামিবিয়ার কোচ আফসোস করেই হোক কিংবা গর্ব করেই হোক, নামিবিয়ান কোচ ডি ব্রুইন জানিয়েছেন তাঁকে মাত্র ১৮ সদস্যের প্রাথমিক দল দেওয়া হয়েছিল সেখান থেকেই তিনি বিশ্বকাপের এই দল গঠন করেছেন। তিনি বলেন, ‘নামিবিয়া কোন বড় ক্রিকেটীয় দেশ নয়। আমাদের খুব বেশি সমৃদ্ধ ক্রিকেটীয় পাইপলাইন নেই, সম্পদের বিলাসিতা নেই।’
আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাংকিং এর ১৯তম দল নামিবিয়া। দেশ হিসেবেও ছোট্ট একটি দেশ। অধিনায়ক এরাসমাস বলেন, ‘আমাদের দেশটা ছোট দেশ। এখানে মানুষ কম এবং ক্রিকেট খেলা মানুষের সংখ্যাও নগন্য। আমাদের উচিৎ নিজেদের এমন পারফর্মেন্সে গর্ববোধ করা।’
মাত্র ২৫ লাখ মানুষের দেশ নামিবিয়া সুপার টুয়েলভে খেলবে দ্বিতীয় গ্রুপে যেখানে তাঁদের প্রতিপক্ষ সাবেক চ্যাম্পিয়ন ভারত, পাকিস্তান। এদের ছাড়াও নামিবিয়াকে লড়তে হবে আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও। ক্রিকেটের পরাশক্তিদের বিপক্ষে লড়তে মুখিয়ে আছে। তাঁদের কোচ ডি ব্রুইন বলেন, ‘আমরা বেশ উচ্ছ্বসিত। অবিশ্বাস্য এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এই মুহূর্ত যেমন উপভোগ করতে হবে। এর পাশাপাশি আমাদের বাছাইপর্বের পারফর্মেন্সের প্রতিফলন দেখাতে হবে মূলপর্বে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ডের মতো দলের সাথে খেলতে পারাটা দূর্দান্ত অভিজ্ঞতা হতে চলেছে আমাদের খেলোয়াড়দের জন্যে। তবে আমরা চাই প্রতিটি সেক্টরে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে। হোক সেটা ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিংয়ে।’
শুধু যে নামিবিয়া এই বিশ্বকাপের মূল পর্বে সুযোগ পেয়ছে তা নয়। নামিবিয়া ২০২২ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মুল পর্বেও জায়গা করে নিয়েছে। এই যে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের মূলপর্বে জায়গা করে নেওয়া নামিবিয়ার ভূখন্ডে ক্রিকেট জোয়াড় এনে দেবে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সেই জোয়াড় আরেকটু বেগবান হতে পারে মূল পর্বে তাঁদের ভাল পারফর্মেন্সে। তাঁদের স্বপ্নে যাত্রা অব্যাহত থাকুক, কেটে যাক খেলোয়াড় সংকট।