ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট। কিন্তু এই ভদ্রলোকের খেলা এখন পর্যন্ত অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছে। এদের মধ্যে বল টেম্পারিং, ম্যাচ ফিক্সিং সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। তবে মাঠের বাইরের ঘটনা বিবেচনায় আনলে ক্রিকেটারদের জীবনে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা নেহায়েত কম নয়।
অভিযোগ ওঠার পরে কেউ হয়তো দোষী প্রমাণিত হয়েছে, কারও ক্ষেত্রে আবার সেসব ছিল গুজব। কিন্তু নারী কেলেঙ্কারির কারণে বহুবার ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে; একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে বড় ক্ষতির কারণ হয়েছে।
শুধু যে গড়পরতা ক্রিকেটাররাই এমন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন তা নয়; অনেক তারকা খ্যাতি পাওয়া খেলোয়াড়ের গায়েও লেগেছে এই কলঙ্ক। এমনই কয়েকজন তারকা ক্রিকেটারকে নিয়ে কথা বলা যাক, যারা নিজেদের সময়ে ছিলেন ক্রিকেটের ব্যাড বয়।
- শেন ওয়ার্ন
অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে অন্যতম সেরা ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন। ক্রিকেটের পাশাপাশি বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রেও সেরা ছিলেন ওয়ার্ন। তাঁর ক্যারিয়ারে প্রথম বিতর্কের শুরু হয় ২০০০ সালে।
সে সময় ব্রিটিশ সেবিকা ডোনা রাইটকে মেসেজ এবং ফোন কলে হয়রানি করেন অজি স্পিনার যা পরে প্রকাশিত হলে জাতীয় দলের সহ-অধিনায়কত্ব ছাড়তে হয় তাকে। এর তিন বছর পর আরও গুরুতর কাজ করে বসেন শেন ওয়ার্ন। মেলবোর্নের অ্যাডাল্ট মডেল অ্যাঞ্জেলা গ্যালাগারের তিন মাসের সম্পর্কের কথা জনসম্মুখে আসে।
তবে ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে ২০০৬ সালে। সেই বছর শেন ওয়ার্ন দুইজন ব্রিটিশ মডেলের সঙ্গে এক বিছানায় ক্যামেরাবন্দী হন। ক্রিকেটের বাইরে বারবার এমন সব ঘটনার জন্য আলোচনায় উঠে আসতেন অজি কিংবদন্তি।
- ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড)
ইংলিশ কিংবদন্তি ইয়ান বোথাম তাঁর স্ত্রী ক্যাথি বোথামের সঙ্গে প্রতারণা করে নিন্দিত হয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার ওয়েট্রেস কাইলি ভেরেলসের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। এই জুটি দুই বছর এই অবৈধ সম্পর্কে ছিলেন এবং তাদের প্রায় বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলে ছদ্ম নামে অবস্থান করার খবর জানা যায়।
এমনকি ইয়ান বোথাম তাঁর স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে কাইলিকে বিয়ে করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত অবশ্য কথা রাখেননি বোথাম। মজার ব্যাপার, কাইলি এই ঘটনা নিয়ে অভিযোগ করলে স্বয়ং ক্যাথি বোথাম তাঁর স্বামীকে সমর্থন করেছিলেন।
- হার্শেল গিবস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকার হার্ড হিটার হার্শেল গিবসের কেলেঙ্কারির কথা তিনি নিজেই সামনে আনেন। নিজের লেখা আত্মজীবনী ‘টু দ্য পয়েন্ট’-এ গিবস তাঁর খারাপ দিকগুলো তুলে আনেন। গিবস জানান ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার জন্য তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল একজন নারী, যার সাথে তিনি এর আগে রাত কাটিয়েছিলেন।
আবার ১৯৯৭/৯৮ সালে এক অ্যাডাল্ট মডেল গিবসকে তাদের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানায় এবং বলাই বাহুল্য, গিবস সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করেছিলেন। এছাড়া টু দ্য পয়েন্ট বইতে এই প্রোটিয়া ক্রিকেটারের আরও কয়েকটি নারী কেলেঙ্কারির কথা লেখা রয়েছে।
- ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম ক্রিস গেইল কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রেও ছিলেন অগ্রণী। আলো ঝলমলে পার্টিতে মগ্ন থাকা গেইল সব সময় পাশে নারী সঙ্গী কামনা করেন। ২০১২ সালে বিশ্বকাপ চলাকালীন হোটেল রুমে গেইল এবং তাঁর কয়েকজন সতীর্থের সাথে তিনজন ইংলিশ নারীকে দেখা যায়।
এমন কি ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে এক হোটেল স্টাফকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে ক্রিস গেইলের নামে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ান উপস্থাপিকাকে অশ্লীল ইঙ্গিত করে সমালোচিত হন ক্যারিবীয় তারকা।
- কেভিন পিটারসেন (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ডের তৎকালীন ড্রেসিংরুমে অনেক ভদ্র ক্রিকেটারের মাঝে কেভিন পিটারসেন ছিলেন উচ্চ বিলাসী একজন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন পিটারসেন।
এ সময় বিউটি গার্ল খ্যাত ভেনেসা নিম্মোর সাথে কেভিন পিটারসেনের অবৈধ সম্পর্কের কথা প্রচার হয়ে যায়। মূলত পিটারসন কর্তৃক প্রতারিত হওয়ার পরে ভেনেসা জনসম্মুখে ইংলিশ ব্যাটারকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বেশকিছু ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কথাও প্রকাশ করেন এই তরুণী।
- শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)
পাকিস্তানি তারকা শহীদ আফ্রিদি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেটার। তবে ক্রিকেট জীবনের একেবারে শুরুতে ২০০০ সালে নারী ঘটিত কারণে খবরের শিরোনাম হন এই অলরাউন্ডার। এসময় হাসান রাজা, আতিক উজ জামানদের সাথে আফ্রিদিকে কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
অবশ্য পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা দাবি করেছিলেন এরা তাদের ভক্ত এবং সেখানে শুধু আড্ডা দিতেই এসেছে। তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) তাদের সাময়িক সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং পরবর্তী সময়ের জন্য সাবধান করে।
এদের ছাড়াও নারী কেলেঙ্কারির কারণে ড্যারেল টুফে, আন্ড্রে নিল, ইমাম উল হক, সাব্বির রহমানের মত অনেক বিখ্যাত খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ারে দাগ লেগেছিল।
- রুবেল হোসেন (বাংলাদেশ)
রীতিমত ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল বাংলাদেশের এই পেসারের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ আর কেউ না, করেছিলেন তাঁরই সাবেক প্রেমিকা। সেই অভিযোগে শুধু গ্রেফতার নয়, তিনদিন তাঁকে হাজতেও থাকতে হয়।
জামিন পেয়ে তিনি ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলতে যান, সেখানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলকে ঐতিহাসিক এক জয় উপহার দেন। অভিযোগদাতা নাজনীন আক্তার হ্যাপি অবশ্য এরপরে অভিযোগ তুলে নেন। তাঁর আইনজীবী দাবী করেন, হ্যাপি আর আইনী লড়াই চালিয়ে যেতে চান না।