কালিচরণ-লিলি দ্বৈরথ ও ‘আ স্পেল টু রিমেম্বার’

এই বোলিং আক্রমণকেই অবলীলায় পিটিয়ে তুলোধুনো করেছিলেন আলভিন; খেলেছিলেন ১৪ চার ও এক ছক্কায় সাজানো ৭৮ বলে ৮৩ রানের দৃষ্টিনন্দন এক ইনিংস। ঝড়টা সবচেয়ে বেশি গিয়েছিল ‘স্পিডস্টার’ ডেনিস লিলির ওপর দিয়ে। এক পর্যায়ে লিলির টানা ১০ বল থেকে ৩৫ রান (৪,৪,৪,৪,৪,১,৪,৬,০,৪) তুলে নেন তিনি!

১.

১৯৭৫ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ‘হাই-ভোল্টেজ’ ম্যাচে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে পরাজিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই দলেরই ছিল দুর্ধর্ষ বোলিং লাইন আপ। এর মাঝেও আলাদা করে নিজের জাতটা চিনিয়েছিলেন একজন, আলভিন কালিচরণ।

প্রথমে ব্যাট করে সবকটি উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ১৯২ রান। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই গ্রিনিজকে হারালেও আরেক ওপেনার রয় ফ্রেডেরিক্সকে (৫৮) নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ১২৪ রানের ম্যাচ উইনিং পার্টনারশিপ গড়েন স্টাইলিশ বাঁ-হাতি স্ট্রোকমেকার আলভিন কালিচরণ। লিলি, থমসন, ম্যাক্স ওয়াকারদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়ার বোলিং লাইন আপটা ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী।

অথচ এই বোলিং আক্রমণকেই অবলীলায় পিটিয়ে তুলোধুনো করেছিলেন আলভিন; খেলেছিলেন ১৪ চার ও এক ছক্কায় সাজানো ৭৮ বলে ৮৩ রানের দৃষ্টিনন্দন এক ইনিংস। ঝড়টা সবচেয়ে বেশি গিয়েছিল ‘স্পিডস্টার’ ডেনিস লিলির ওপর দিয়ে। এক পর্যায়ে লিলির টানা ১০ বল থেকে ৩৫ রান (৪,৪,৪,৪,৪,১,৪,৬,০,৪) তুলে নেন তিনি!

‘কালিচরণ ভার্সেস লিলি’র রোমাঞ্চকর দ্বৈরথের বিবরণ দিয়ে উইজডেন লিখেছিল, ‘Kallicharran’s silken smooth strokes were in evidence right from the start. He was particularly severe on Dennis ‘Tiger’ Lillee. The great pacer was left bewildered as he had rarely been treated with such disdain. As Kallicharran waded into him, Lillee bowled faster, only to be hit harder by the elegant left-hander.’

২.

১৯৮৩ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ‘হাই ভোল্টেজ’ ম্যাচে মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অস্ট্রেলিয়া। এই ম্যাচেই ক্রিকেট ক্লাসিক্সে ঠাঁই পাবার মত স্মরণীয় এক স্পেল উপহার দিয়েছিলেন ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার উইন্সটন ডেভিস। নামটা অচেনা লাগছে? লাগারই কথা। মার্শাল, গার্নার, হোল্ডিংদের তারকাখ্যাতির আড়ালে চলে যাওয়া এই গতিদানবকে ক’জনই বা চিনত তখন!

যাই হোক, ম্যাচ প্রসঙ্গে ফিরে আসি। প্রথমে ব্যাট করে ল্যারি গোমেজের ৭৮ রানের সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ৯ উইকেটে ২৫২। জবাব দিতে নেমে এক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ২ উইকেট ১১৪। ঠিক তখনই অজি ইনিংসের ওপর দিয়ে বয়ে গেল এক প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোন! পাঁচ ওভারের প্রথম স্পেলে ৩৭ রানে এক উইকেট পাওয়া ডেভিস ধারণ করলেন রুদ্রমূর্তি!

৩৩ বলের নিখুঁত এক স্পেলে গুঁড়িয়ে দিলে অজি মিডল অর্ডার; মাত্র ১৪ রানে নিলেন ৬ উইকেট! ১১৪/২ থেকে ১৫১ রানে অলআউট অস্ট্রেলিয়া! সব মিলিয়ে তাঁর ম্যাচ ফিগার দাঁড়াল ১০.৩-০-৫১-৭! বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড হিসেবে যেটি টিকে ছিল আরও অন্তত ২০ বছর।

উইন্সটন ডেভিসের দুর্ভাগ্য যে তিনি এমন একটা সময়ে জন্মেছিলেন যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ছিল ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার, সিলভেস্টার ক্লার্ক, ওয়েইন ড্যানিয়েলের মত জেনুইন কুইকের ছড়াছড়ি। ফলে লাইমলাইটে আসার সুযোগ খুব কমই পেতেন। কালেভদ্রে যাওবা একটু সুযোগ মিলত সেটা ‘ফোর্থ’ সিমার হিসেবে!

ছয় বছরের ছোট্ট ক্যারিয়ারে খেলেছেন মাত্র ১৫ টি টেস্ট (৪৫ উইকেট) আর ৩৫ টি ওয়ানডে (৩৯ উইকেট)। তবে তাঁর ফার্স্ট ক্লাস রেকর্ডই (১৮১ ম্যাচে ৬৮০ উইকেট) বলে দেয়, হি রিয়েলি ডিজার্ভড টু প্লে মোর।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...