২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লর্ডসের সেই উদ্বোধনী ম্যাচটা মনে পড়ে?
টানটান উত্তেজনার যে ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলো নেদারল্যান্ডস, কিংবা ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিলেটে মাত্র ১৩.৪ ওভারে ২০০’র কাছাকাছি রান তুলে পরের রাউন্ডে পৌঁছে গিয়েছিলো ডাচরা!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বরাবরই ডাচদের কাছে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মঞ্চ। ২০১৪র সেই টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডকে আবারও হারিয়েছিল সুপার ১০এর ম্যাচে তাঁরা, এমনকি তখনকার দুর্ধর্ষ দক্ষিণ আফ্রিকাকেও প্রায় হারিয়েই দিচ্ছিলো। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অ্যাসোসিয়েট দেশগুলোর মধ্যে গত কয়েক বছর বেশ ধারাবাহিক নেদারল্যান্ডস।
যদিও গত কয়েক বছরে তুলনায় কম ম্যাচ খেলার জন্য র্যাংকিংয়ে ১৭ নম্বরে অবস্থান করা ডাচ ব্রিগেড গত চার বছরে খেলা ৩৮ টি ম্যাচের মধ্যে ২০ টাই জিতেছে। সবচেয়ে বড় কথা ২০১৯ সালের আমিরশাহীতে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এই বিশ্বকাপে খেলতে নামছে। দারুণ সব প্রতিভাবান ও অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারে ভরপুর ডাচ ব্রিগেড এবারের বিশ্বকাপেও দারুণ সব চমক দেখানোর অপেক্ষায় আবারও।
- শক্তিমত্তা
ডাচ দলের মূল শক্তি তাঁদের অভিজ্ঞতা। রায়ান টেন দেশকাট, রোলফ ভ্যান ডার মারওয়ে, কলিন আকারম্যান, পিটার সিলার, টিম ভ্যান ডার গুগটেন, পল ভ্যান মিকারেন প্রমুখদের দীর্ঘদিনের ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামি ক্রিকেটারদের সাথে খেলার অভিজ্ঞতাই নেদারল্যান্ডস এর সবচেয়ে বড় সম্পদ।
২০১১’র ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে দুর্ধর্ষ খেলা টেন দেশকাটের দেশের হয়ে এটাই শেষ টুর্নামেন্ট, সুতরাং ডাচ ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার দেশকাটে বুটজোড়া তুলে রাখার আগে আবারও ঝলক দেখিয়ে যাবেন এ আশা করাই যায়। এর সাথে ভ্যান ডার মারওয়ে বা ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে বছর দুয়েক আগে বিশ্বরেকর্ড করা বোলিং করে শিরোনামে আসা ডাচ দলের সহ অধিনায়ক কলিন আকারম্যান ব্যাট ও বল হাতে নিজেদের দিনে দুর্দান্ত বলা চলে। ওপেনার ম্যাক্স ডি’ওউড এর দিকে নজর রাখতেই হবে, ঝাঁকড়া চুলের এই ওপেনার ও কিন্তু বিধ্বংসী হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখেন।
এর সাথে মিকারেন ও গুগটেন পেস বোলিং জুটি অনেক দলের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বিশেষত সদ্য ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলে আসা মিকারেন গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দারুণ পারফরম্যান্স করেন। সবমিলিয়ে যথেষ্টই ব্যালান্সড দল নিয়ে যাওয়া নেদারল্যান্ডস এবার আরো ভালো কিছু করার জন্য প্রস্তুত বলা যায়।
- দুর্বলতা
অন্যান্য অ্যাসোসিয়েট দেশগুলোর মত নেদারল্যান্ডস ও বড় দল বা ফুল মেম্বার দলগুলোর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন খেলার সুযোগ পায়নি (আয়ারল্যান্ড বাদে)। সেক্ষেত্রে গ্ৰুপে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ বা সুপার ১২ এ কোয়ালিফাই করলে বড় দলগুলোর সাথে খেলতে হলে খানিকটা চাপের হতে পারে।
এছাড়া বরাবর স্পিন খেলায় নেদারল্যান্ডস এর দুর্বলতা চোখে পড়ার মত। ২০১৪র বিশ্বকপেই রঙ্গনা হেরাথের সামনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল ডাচ ব্যাটিং। সুতরাং স্পিন খেলায় উন্নতি না করলে আমিরশাহীর উইকেটে ভালো কোয়ালিটির বোলিং এর সামনে সফল হওয়া কঠিন। গ্ৰুপেই কিন্তু হাসারাঙ্গা, ঠিকসানারা বড় পরীক্ষা নেবেন।
- নেদারল্যান্ডস দল ও তাঁদের সম্ভাবনা
আয়ারল্যান্ডের ডকরেলের মতো ডাচ অধিনায়ক পিটার সিলার ও বোলিং এর তুলনায় ব্যাটিং এ বেশি মনোনিবেশ করেছেন, ফলে অলরাউন্ডার সিলার এখন দলের মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়েও ভরসা। এছাড়া মিডল অর্ডারে চেনা মুখ বেন কুপার, টেন দেশকাটে, আকারম্যান ও ভ্যান ডার মারউইরা ভরসা দেবেন।
ব্যাট হাতে মাইবার্গ ও ম্যাক্স ও’ দৌড এর নিয়মিত ঝড় তোলা চাইবে ডাচ শিবির। বয়স বাড়লেও মাইবার্ঘ এখনও বিধ্বংসী হতে পারেন। উইকেটকিপার স্কট এডওয়ার্ডস এর দিকে নজর থাকবে, ‘ইনোভেটিভ’ সব শট স্লগ ওভারে মারায় যিনি যথেষ্ট দক্ষ। ভ্যান ডার মারউই, আকারম্যান, সিলারদের স্পিন আমিরশাহীতে বড় ভূমিকা নেবে ধরে নিলেও ডাচ পেস অ্যাটাক ও কিন্তু নজর কাড়ারই মতো।
গুগটেন, মিকারেনকে সাহায্য করার জন্য থাকবেন নিউজিল্যান্ড এর ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত মুখ বোলিং অলরাউন্ডার লোগান ভ্যান বিক। সবমিলিয়ে যথেষ্টই ব্যালান্সড ডাচ ব্রিগেড নিজেদের স্বাভাবিক ছন্দে খেললে অনেক দূর যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, এমনকি সুপার ১২ পর্যায়ে পৌঁছলে বড় দলকেও হারানোর ক্ষমতা রাখে। অরেঞ্জ ব্রিগেডের চমক দেখার জন্য আর কিছুদিনের অপেক্ষা।
- নেদারল্যান্ডস স্কোয়াড
পিটার সিলার (অধিনায়ক), ম্যাক্স ও’ডাউড, বেন কুপার, রায়ান টেন দেশকাট, কলিন অ্যাকরম্যান, রুলফ ভ্যান ডার মারউই, স্কট এডওয়ার্ডস, ব্যাস ডি লিড, পল ভ্যান মিকারেন, টিম ভ্যান ডার গুগটেন, ব্র্যান্ডন গ্লোভার, শেন স্নেটার, লোগান ভ্যান বিক, ফিলিপ বয়সেভেন, ফ্রেড ক্লাসেন, স্টেফান মাইবার্গ।