প্রতিটি ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপের মঞ্চে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার। কিন্তু খুব কম সংখ্যক ক্রিকেটারেরই সেই সৌভাগ্য হয়ে উঠে। অনেক ক্রিকেটারেরই বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন পূরণ হতে পুরো ক্যারিয়ার কেটে যায়। আবার অনেকেই সুযোগটা পেয়ে যান খুব অল্প বয়সেই, নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই।
অস্ট্রেলিয়াতে আসন্ন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের খেলবেন কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার। অভিজ্ঞতায় তারা কম হতে পারেন, কিন্তু প্রতিভা-সামর্থ্যে তারা পিছিয়ে নন মোটেই। নিজের দিনে একাই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেবার সামর্থ্য রয়েছে তাদের। আসুন দেখে নেয়া যায় প্রতিটি দলের তরুণ ক্রিকেটারদের যারা হয়ে উঠতে পারেন বিশ্বকাপের ট্রাম্পকার্ড।
- ট্রিস্টান স্টাবস (জন্মদিন: ১৪ আগস্ট, ২০০০) – দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ ব্যাটসম্যান ট্রিস্টান স্টাবস মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য এরমধ্যেই বিশ্বমঞ্চে নাম কুড়িয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া টি টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে প্রায় ১৮৩ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে প্রথম সবার নজরে আসেন এই তরুণ। দারুণ পারফরম্যান্সের সুবাদে জাতীয় দলে সুযোগ পেতেও খুব বেশি দেরি করতে হয়নি। অভিষেক সিরিজেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের সামর্থ্য।
আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি লিগগুলোর নিয়মিত মুখ স্ট্রাবস। বছরের শুরুতেই আইপিএলে অভিষিক্ত হয়েছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। সদ্য সমাপ্ত দ্য হান্ড্রেডেও ধরে রেখেছিলেন নিজের ফর্ম। ৯ ম্যাচে ১৫৭ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ১৫৭ রান। বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেদের চোকার্স তকমা কাটিয়ে উঠতে তাই ব্যাট হাতে স্ট্রাবসের জ্বলে উঠার দিকে তাকিয়ে আছে প্রোটিয়াবাসী
- নাসিম শাহ ( জন্মদিন: ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪) – পাকিস্তান
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপেই পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক হয়েছে পেসার নাসিম শাহের। মূলত শাহিন শাহ আফ্রিদির ইনজুরির সুবাদেই কপাল খুলে যায় নাসিমের। টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচেই শুরুতে বল করে পাকিস্তানকে বেকথ্রু এনে দিয়েছেন নাসিম।
টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এখনো পর্যন্ত সাত ম্যাচ খেলে ৭.৬৬ ইকোনমিতে সাত উইকেট সংগ্রহ এই পেসারের। দুর্দান্ত গতি আর সুইং এ ম্যাচের শুরুতে উইকেট তুলে নিতে পটু নাসিম। অস্ট্রেলিয়ার পেস সহায়ক কন্ডিশনে এই পেসার আনপ্লেয়েবল হয়ে উঠতে পারেন। এছাড়া শেষের দিকে নেমে ব্যাট হাতে বড় বড় ছক্কা হাঁকাতেও জানেন নাসিম। এশিয়া কাপেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে টানা দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে ম্যাচ জেতান। বিশ্বকাপের মঞ্চেও তাই নাসিমের দিকে তাকিয়ে থাকবে পাকিস্তানি সমর্থকরা।
- আর্শদ্বীপ সিং (জন্মদিন: ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯) – ভারত
জহির খান, আশিষ নেহরাদের পর ভালোমানের বাঁহাতি পেসার পায়নি ভারত। মাঝে খলিল আহমেদ, বারিন্দর স্রানদের দিয়ে চেষ্টা করানো হলেও তারা অঙ্কুরেই ঝরে গেছেন। সর্বশেষ জাতীয় দলে আসা আর্শদ্বীপ অবশ্য ইতোমধ্যেই আলো ছড়িয়েছেন, বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি হারিয়ে যেতে আসেননি। আইপিএলের গত দুই মৌসুমে পাঞ্জাবের হয়ে শিকার করেছেন ২৮ উইকেট। বেশিরভাগ সময় ডেথ ওভারে বল করা সত্ত্বেও তার ইকোনমি মাত্র ৭.৯৮।
আইপিএলের ফর্মটা আন্তর্জাতিক আঙ্গিনাতেও টেনে এনেছেন পাঞ্জাবের এই পেসার। ভারতের জার্সিতে ১১ ম্যাচে তার সংগ্রহ ১৪ উইকেট, ইকোনমি মাত্র ৭.৩৮। ম্যাচের শেষদিকে টানা ইয়র্কার করতে তার জুড়ি মেলা ভার। ভারতীয় দলে এই বাঁহাতি পেসারের আবির্ভাব দলের পেস লাইনআপে বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে। আসন্ন বিশ্বকাপেও বুমরাহর সাথে ডেথ ওভারে আর্শদ্বীপের উপরই ভরসা রাখবেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
- টিম ডেভিড (জন্মদিন: ১৬ মার্চ, ১৯৯৬) – অস্ট্রেলিয়া
গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বজুড়ে টি টোয়েন্টি লিগগুলোতে নিয়মিত মুখ সিঙ্গাপুরে জন্ম নেয়া টিম ডেভিড। ম্যাচের শেষদিকে নেমে ঝড়ো ব্যাটিং করে খেলা শেষ করতে তিনি অদ্বিতীয়। এই গুণাবলীর কারণেই এবারের আইপিএলে তাকে ৮.২৫ কোটির বিনিময়ে দলে ভিড়িয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। তিনিও পারফরমেন্স দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের সামর্থ্য।
সিঙ্গাপুরে জন্ম হলেও বিশ্বকাপ খেলার নেশায় বিভোর ডেভিড জাতীয় দলের প্রশ্নে তাই বেছে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়াকেই। ইতোমধ্যে অজিদের হয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচও খেলেছেন ডেভিড। বড় বড় ছক্কা হাঁকাতে সিদ্ধহস্ত ডেভিড অফস্পিনও করতে পারেন। আসন্ন বিশ্বকাপে অ্যারন ফিঞ্চের দলের জন্য এক্স-ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন এই হার্ডহিটার।
- ফিন অ্যালেন (জন্মদিন: ২২ এপ্রিল, ১৯৯৯) – নিউজিল্যান্ড
গত কয়েক বছর ধরেই নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছেন ফিন অ্যালেন। ইনিংসের শুরুতে তার ভয়ডরহীন ব্যাটিং প্রশংসা কুড়িয়েছে চারিদিকে। নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি টোয়েন্টি সুপার স্ম্যাশে ওয়েলিংটনের হয়ে ওপেনিং এ নেমে ১১ ম্যাচে ২০০ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ২৮০ রান।
ঘরোয়া ক্রিকেটের ফর্মটা তিনি টেনে এনেছেন জাতীয় দলেও। কিউইদের হয়ে ১৩ টি টোয়েন্টি খেলে তার সংগ্রহ ৩৩৪ রান। স্ট্রাইকরেটটাও ঈর্ষণীয়, ১৬৯.৫৪। বিশ্বকাপেও নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং এর শুরুটা অ্যালেন দুর্দান্তভাবে এনে দিতে পারলে এবারো ফাইনালের স্বপ্নটা দেখতেই পারে কিউইরা।
- হ্যারি ব্রুক (জন্মদিন: ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯) – ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয় হ্যারি ব্রুককে। কেবল কাউন্টি নয়, পিএসএল এবং বিগ ব্যাশেও সমানতালে পারফর্ম করে গেছেন তিনি। পিএসএলে ১৭১ স্ট্রাইকরেটে ১০ ম্যাচে সংগ্রহ করেছেন ২৬৪ রান।
মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো ব্যাটিং এ যেকোনো সময় ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাই তার উপরেই নির্ভর করে থাকবে ইংল্যান্ড।
- হাসান মাহমুদ (জন্মদিন: ১২ অক্টোবর, ১৯৯৯) – বাংলাদেশ
গত কয়েক মৌসুম ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের পেস বোলিংয়ের ভবিষ্যত হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছিল হাসান মাহমুদের নাম। নিয়মিত ১৪০ কি.মি. গতিতে বল করতে পটু হাসান ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপ মিস করলেও ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বকাপগামী দলে।
লক্ষীপুরে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটার বিপিএলসহ ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোতে নিয়মিত আলো ছড়িয়েছেন। তার গতি আর বাউন্সারে বারবার পরাস্ত হয়েছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। ঘরোয়া টি টোয়েন্টিতে ৮.০৬ ইকোনমিতে তার শিকার ২৪ উইকেট। সাম্প্রতিক সময়ে টি টোয়েন্টিতে বাজে সময় কাটানো বাংলাদেশ তাই আসন্ন বিশ্বকাপে তাকিয়ে থাকবে হাসান মাহমুদের উপরে।
- মোহাম্মদ সালিম সাফি (জন্মদিন: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০০২) – আফগানিস্তান
আফগানিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ মোহাম্মদ সালিম সাফি প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বকাপগামী দলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ১২ ম্যাচে নিয়েছেন ৪১ উইকেট। শাপগিজা ক্রিকেট লিগে মাত্র ৬.৬৩ ইকোনমিতে শিকার করেছেন ১১ উইকেট।
আফগানিস্তান থেকে রশিদ খান, মুজিব উর রহমানের মতো স্পিনাররা উঠে আসলেও পেস বোলিং এখনো কেউ আলো ছড়াতে পারেননি। এখন দেখার বিষয় মোহাম্মদ সালেম বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজের আগমনী প্রতিভার জানান দিতে পারেন কিনা।