ম্যাচ শেষ, তবুও একদল তরুণ মাঠ ছাড়লেন না। ম্যাচ জয়ের আনন্দ নিয়ে বাকি ৩৫ হাজার দর্শক ঠিকই ধরলেন বাড়ির পথ। এত মানুষের ফেলে যাওয়া কাগজের টুকরো, পলিথিন ব্যাগ কিংবা গ্লাস পরম যত্নে তুলে নিলেন ‘জিরো প্লাস্টিক’ গ্রুপের তরুণদল। এ যেন তাদেরই ঘর।
ফিফা বিশ্বকাপের সময় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল জাপানিজ দর্শকদের স্টেডিয়াম গ্যালারি পরিষ্কারের ঘটনা। নিতান্ত এক সভ্য জাতি হিসেবেই জাপানিজরা নিজেদের ভাবমূর্তিকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য এক উচ্চতায়। কিন্তু এই লঙ্কান তরুণদের চিন্তাভাবনা নিজেদের ভাবমূর্তির বাইরে। তারা বরং রক্ষা করতে চান নিজেদের মাতৃভূমি, লড়াই করতে চান ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’- এর বিরুদ্ধে।
শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ একটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডি শহরে। পাহাড়ে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু এই ক্যান্ডি, এটা অবশ্য শ্রীলঙ্কারও কেন্দ্র। যেদিকে চোখ যাবে, অবর্ণনীয় সৌন্দর্যের মোহনীয় ঘোরে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এমন এক শহর দূষিত হোক, তা চান না জিরো প্লাস্টিক গ্রুপের সদস্যরা।
প্লাস্টিক মাটির জন্যে, সর্বোপরী পরিবেশের জন্যে ঠিক কতটা ভয়ংকর- সেটা বেশ ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন এরা প্রত্যেকে। তাইতো পরম মমতায় নিজের মাতৃভূমিকে পরিষ্কার ও বসবাসযোগ্য রাখার চেষ্টা। তাদের মধ্যে একজনের সাথে কথা বলে জানতে চাওয়া, কেন সবাই চলে গেলেও তারা চলে গেলেন না?
‘আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে ভালবাসি। আমাদের দেশ রক্ষা করা গেলেই তো ক্রিকেটকেও রক্ষা করা যাবে। আমরা জানি জলবায়ু পরিবর্তন ভীষণ উদ্বেগের কারণ। আর এর এই পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় কারণ প্লাস্টিক। অতএব আমরা চাই না আমাদের এই সুন্দর দেশটা জলবায়ু পরিবর্তনের থাবায় সমুদ্রতলে হারিয়ে যাক।’
উন্মাতাল এক জনসমুদ্রের ফেলে যাওয়া সমস্ত উচ্ছিষ্ট চোখের পলকে পরিষ্কার করে ফেলেন জিরো প্লাস্টিক গ্রুপের প্রত্যেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। তারা যেন রীতিমত এক যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন পরিবেশ দূষণের বিপক্ষে। তাইতো প্ল্যাস্টিক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে ও নিজের ঘর আর নিজের ঘরের স্টেডিয়ামকে পরিচ্ছন্ন করবার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
কোন কিছুর পাওয়ার আশায় নয়, স্রেফ দেশটাকে ভালবেসেই তারা এমনটি করছেন। তারা বরং এই পৃথিবীকেই ভালবাসছেন, নতুন করে ভালবাসার জন্যে উদ্বুদ্ধ করছেন। সবার প্রতি এক নিরব বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।