জিনেদিন জিদান ছিলেন ফুটবলের আভিজাত্যের প্রতীক। মিডফিল্ডারদের বেঞ্চমার্ক, যোগ্য দলনেতা। ম্যানেজার হিসেবে ফুটবলকে পরিণত করেছেন একেবারে সহজ একটি খেলায় । সাফল্য যেন এসে ধরা দেয় ফুটবলের মহান এই শিল্পীর কাছে। তাঁর সাফল্যের সাথেই জড়িয়ে আছে রিয়াল মাদ্রিদের এই শতাব্দীর সব সাফল্য । কিন্তু ফরাসি কিংবদন্তি ফুটবলের এলিট কাতারে এসেছিলেন নব্বই দশকের শেষাংশে।
সিরি ‘এ’ তখন তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের চূড়াই। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের ঠিকানা ছিল ইতালি। লিগে অন্তত পক্ষে ছয়টা দল ছিল যারা লিগ জিততে সক্ষম। জুভেন্টাস আর এসি মিলান আধিপত্য ভাগাভাগি করছিল। ইন্টার মিলানও তৈরি করেছিল শক্তিশালী স্কোয়াড। লাজ্জিও, পার্মা, ফিওরেন্টিনা মত দলগুলো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছিল লিগের ফেভারিটদের।
তারকা আর প্রতিভায় পরিপূর্ণ সিরি ‘এ’। রোনালদো ইতালির সেরা ডিফেন্ডারদের নাভিশ্বাস তুলছিলেন তার অতিমানবীয় ফুটবল কৌশলে, বাজ্জিওর দৌড়ে তখনো ছিল অনেক গতি, বাতিস্তুতা গোল করে যাচ্ছিলেন রাইফেলের গুলি ছোড়ার গতিতে। এরকম প্রতিভায় ঠাসা লিগে জিদানের শুরুটা ছিল নড়বড়ে – কিন্তু সময়ের সাথে তিনিও নিজেকে নিয়ে গেছেন বিশ্ব সেরার কাতারে।
ফ্রান্স জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড়, খেলেছেন ৯৬ ইউরো। একই বছর বোরডক্সের হয়ে খেলেছেন উয়েফা কাপ ফাইনাল – তারপরও মাত্র তিন মিলিয়ন পাউন্ডের ট্রান্সফারটা নিয়ে বিয়াঙ্কোনারি ফ্যানদের মধ্যে সন্তুষ্টি ছিল না। ফরাসি মিডফিল্ডারের আগমন ছিল সংশয়ে ভরা।
দুর্দান্ত কোন্তে আর স্বদেশী দিদিয়ের দেশ্যমের সাথে মিলে তৈরি করেছিলেন জুভেন্টাসের মিডফিল্ড ত্রয়ীর অবিস্মরণীয় এক বলয়, কিন্তু জিদানকে দেয়া হয়েছিল ডিপ-লেয়িং প্লে-মেকারের দায়িত্ব – ওর জন্য ছিল অপরিচিত একটা পজিশন। যার পায়ে ছিল আক্রমণের সহজাত কৌশল, সেই জিদান ব্যর্থ হলেন রক্ষণ দায়িত্ব পালন করতে। সেই সাথে ফর্মের সামান্য চ্যুতি এবং হারালেন প্রথম একাদশের জায়গা, তবে মাত্র এক ম্যাচের জন্য।
কোন্তে লম্বা সময়ের জন্য ইনজুরিতে পড়লেন। কোন্তের জন্য যেটা দুর্ভাগ্য সেটাই সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে আসে জিদানের জন্য। একাদশে ফিরলেন, তবে এবার লিপ্পি সাজালেন ৪-৪-২ ফর্মেশন। চারজনের মিডফিল্ডে জিদানের স্বাধীনতা বেড়েছে, কিন্তু তার ফেরার ম্যাচে দেল পিয়েরোও না থাকায় জুভেন্টাস প্রথম লিগ ম্যাচ হারে ওই মৌসুমে, সেই সাথে মৃদু সমালোচনারও মুখে পড়েন। কিন্তু জিদান জানেন কখন জ্বলে উঠতে হয়।
২০ অক্টোবর ১৯৯৭, দুই লিগ ফেভারিট জুভেন্টাস এবং ইন্টার মিলান মুখোমুখি। তখনো হারের দেখা মেলেনি ইন্টারের, অন্যদিকে আগের ম্যাচে হেরেছে জুভেন্টাস। ইন্টারে তখন খেলছেন আরেক ফরাসি ইউরি জোরকেইফ, তখন পর্যন্ত তার পারফর্মেন্স ছিল নজর কাড়া। জিদান তখন ধুঁকছিলেন। দু’দলের জন্যই মৌসুমের প্রথম ‘বড় ম্যাচ’।
একতরফা খেলায় জুভেন্টাস জিতে ২-০ গোলে। সবাই খুব ভাল খেলেছিল, তবে সবার নজর কেড়েছিলেন ফরাসি নাম্বার টেন। ‘বিগ ম্যাচ প্লেয়ার’জিদান তাঁর অনবদ্য পারফর্মেন্সের মাধ্যমে জবাব দিলেন সমালোচকদের। সেই সাথে প্রমাণ করে দিলেন জোরকেইফ না, জিদানই ফ্রান্সের সেরা নাম্বার টেন।
ওই ম্যাচের পর সিরি ‘এ’-তে আর মাত্র দুই ম্যাচ হারে জুভেন্টাস। দারুণ প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ সেই মৌসুমে পার্মা থেকে মাত্র দুই পয়েন্ট এগিয়ে থেকে শেষ করে মৌসুম। এটা ছিল জুভেন্টাসের টানা দ্বিতীয় লিগ শিরোপা। কিন্তু ঘরোয়া লিগের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লিগও টানা জিতার দিকে নজর ছিল তুরিন জায়ান্টের।
গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষ ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ফানারবাচে এবং র্যাপিড ভিয়েন – তাদের কেউ হারাতে পারেনি জুভেন্তাসকে। কোয়ার্টার ফাইনালে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাস মুখোমুখি হয় রোজেনবার্গের। প্রথম লেগ ১-১ ড্র হয় এবং দ্বিতীয় লেগের প্রথমার্ধে জিদানের গোলে লিড নেয় জুভেন্টাস, পরে ২-০ তে ম্যাচ জিতে নেয়। আসল চমক থাকে পরের রাউন্ডে, অর্থাৎ সেমিফাইনালে জিদান নিজেকে বিশ্বের সেরাদের একজন হিসেবে প্রমাণ করে।
টানা তিনবার ফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে তুরিনে যায় আয়াক্স। অবশ্য প্রথম ম্যাচে ২-১ এ হেরে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য এবং দ্যা দেলে আল্পির দর্শকদের সৌভাগ্য – আয়াক্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে জিদান মঞ্চস্ত করে তার ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচগুলোর একটা। ৪-১ গোলের জয়ে জিদান অ্যাসিস্ট করেন তিন গোলে এবং নিজে করেন দলের চতুর্থ গোল।
সংখ্যাই বলে দিচ্ছে মাঠে জিদান কিভাবে রাজত্ব করেন। বল যেন আঠার মত লেগেছিল ফ্রেঞ্চম্যানের পায়ে। আক্রমণাত্মক কৌশলে জিদান কতটা ভয়ঙ্কর সেটা বড় মঞ্চে আবারো তুলে ধরেন ফরাসি তারকা। বল কন্ট্রোল, ড্রিবল, পাসিং, ফেন্সি স্কিল – সাথে সলো গোল এবং আরো তিন গোলে অ্যাসিস্ট। তুরিনের দর্শকরা সেদিন সাক্ষী হলো একজন অসাধারণ ফুটবলারের কিংবদন্তি হবার মুহূর্ত।
জিদানের অনবদ্য প্রদর্শনিতে ভর করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো জুভেন্তাস ফাইনালে ওঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের। অসাধারণ একটি মৌসুমের শেষ হয় হতাশায়। মিউনিখে অনুষ্ঠিত ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড এর কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায় জুভেন্তাস। জিদানের সম্ভাব্য আধিপত্যের কথা চিন্তা করে ডর্টমুন্ড বস শুধু জিদানকেই মার্ক করার দায়িত্ব দেন পৌল ল্যাম্বার্টকে, ম্যাচের নিয়ন্ত্রন হারায় জুভেন্তাস। অটোমার হিজফেল্ডের ট্যাকটিকেল নৈপূণ্যে টানা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ডিফেন্ড করতে ব্যার্থ হয় জুভেন্টাস।
জিদানের ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের যাওয়ার গুজবগুলো তখন অতীত। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে জিদান খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে বিশ্বসেরার কাতারে নিয়ে গিয়েছেন। জুভেন্তাসের মিডফিলদ মায়েস্ত্রো এখন দলের অন্তপ্রাণ জিদান এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সদ্য পঁচিশে পা দেয়া ছয় ফুট লম্বা জিদানের খেলা আরো ধারালো ও কার্যকর হয়ে লাগলো।
তাঁর সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর জন্য ফর্মেশনে আসল পরিবর্তন। আয়াক্স থেকে আসলেন এজার ডেভিডস, ভিয়েরির স্থালাভিষিক্ত আগের মৌসুমের টপস্কোরার ইনিজাগি। ৩-৪-১-২ ফর্মেশনে জিদানের অবস্থান ‘নাম্বার টেন’-এ। ডেভিডসের ডিফেন্সিভ দক্ষতা জিদানকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিল শুধু আক্রমণভাগে মনযোগ দেয়ার। আর জিদানের ভিশনকে কাজে লাগানোর জন্য সামনে আছেন তুরিন রাজপূত্র দেল পিয়েরো আর সুযোগ সন্ধানী ফিলিপে ইনজাগি।
তিনজন সেন্টার ব্যাক; ডেভিডস, দেশ্যম সমৃদ্ধ সেন্ট্রাল মিড এবং ফর্মের তুঙ্গে থাকা ফ্রন্ট থ্রি – পরিবর্তিত ফর্মেশনে তাই গোল এবং জয় আসছিল ধারাবাহিকভাবে। জিদান, দেল পিয়েরোতে ভর করে টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর দেখা হয় ইন্টার মিলানের। নেরাজ্জুরিরাই জুভেন্তাসের প্রধাণ প্রতিদ্বন্দ্বী সেই মৌসুমে। সেবার তারা দলে ভিড়িয়েছে অপ্রতিরোধ্য রোনালদোকে।
সাথে আছে সিমিওনে, রেবেকাদের মতো তারকা। ওই ম্যাচে জুভেন্টাসস হেরে যায় মিলান ক্লাবের কাছে। কিন্তু এরপর আর মাত্র এক ম্যাচ হেরে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মৌসুমে পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে টানা দ্বিতীয় সিরি ‘এ’ শিরোপা জিতে জুভেন্টাস।
কিন্তু, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিদানের আসল মঞ্চ। সেবার গ্রুপ পর্বে জিদান করেন দুই গোল। গ্রুপ রানারাপ হয়ে কোয়ার্টারে প্রতিপক্ষ ছিল ডাইনামো কিয়েভ। সেই ম্যাচে জিদান আবারো ম্যাচের মূল চরিত্রে অবতীর্ণ হন।
প্রথম লেগে নিজের মাঠে ১-১ ড্র করে ইউক্রেনে যায় জুভেন্টাস। সেখানে রচিত হয় আরেকটি জিদান কাব্য। ডাইনামো কিইভের মূল লক্ষ্য ছিল বাস পার্ক করে কোন গোল না খাওয়া, কারণ তাদের একটি এওয়ে গোল আছে হাতে। কিন্তু সেদিন জিদানের কাছে অসহায় আত্নসমর্পন করা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা তাদের। মন্ত্রের যাদুতে যেন ফরাসি শিল্পি প্রতিপক্ষকে তার পায়ে লুটিয়ে পড়তে বার বার বাধ্য করেছেন। জিদান যেন খেলছিলেন ভিন্ন ডাইমেনশানে।
বলে সুক্ষ্ম ছোঁয়া, চারপাঁচ জনকে একসাথে বারবার ড্রিবলে পরাস্ত করা, পাল্টা আক্রমণে যাওয়া – এই সব কিছু দেখে মনে হচ্ছিল জিদান অনেক বেশি সময় পাচ্ছিলেন কাজগুলো করতে আর ঠাণ্ডা মাথায় একেকটা বাঁধা পার করছিলেন। ইনজাঘির হ্যাট্রিকের ম্যাচে জিদান অ্যাসিস্ট করেন তিন গোলে। প্রথমটিতে ইনজাগিকে সহজ একটি গোলের সুযোগ করে দেন, দ্বিতীয়টি আসে পিন-পয়েন্ট কর্ণার কিক থেকে। কিন্তু তৃতীয় অ্যাসিস্টটা ছিল স্পেশাল!
তিন গোলে এগিয়ে থেকে খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল বলা যায়, তারপর জিদান তৈরি করেন একটি ম্যাজিকেল মোমেন্ট। জুভেন্তাস ডিফেন্স থেকে বল আসে অস্বাভাবিক উচ্চতায়। জিদান তখন মাঠের একেবারে মাঝখানে, সেখানে থেকে ডান পায়ের বাইরের অংশ দিয়ে বাতাসে থাকা অবস্থাতেই করেন চমৎকার ভলি থেকে পাস।
বিভ্রান্ত ডাইনামো ডিফেন্সের কোন জবাব ছিল না কারণ সেই পাসটি খোঁজে নেয় সামনে ছুটে চলা দেল পিয়েরোকে। তার দারুণ ফিনিশে ম্যাচ ৪-০ তে ম্যাচ জিতে জুভেন্তাস। ক্ল্যাসিক জিদান ম্যাজিক আবারো দেখালো সবচেয়ে টাইট সিচুয়েশনেও সে কতটা কার্যকর। জিদানের ভিশন, সুযোগ তৈরি করার সহজাত প্রতিভা এবং গোল করার ক্ষমতা জিদানকে বসিয়ে দেয় ইউরোপ সেরার কাতারে।
এরকম পারফর্মেন্স নিয়মিত আসছিল জিদানের পা থেকে। পৃথিবীর যেকোন দর্শকই তার খেলার ভক্ত হতে বাধ্য। সেমিফাইনালে স্বদেশী ক্লাব মোনাকোকে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৪ গোলে হারিয়ে আবারো ফাইনালে উঠে জুভেন্তাস। কিন্তু সেখানে আবারো ধরাশায়ী হয় তারা। এবার প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাবে তখনো গ্যালাকটিকো যুগের সুচনা হয়নি। কিন্তু দলে ছিল সিডর্ফ, কার্লোস, হিয়েরো এবং রাউলদের মতো তারকা। লিগে চতুর্থ অবস্থানে থেকে ধুঁকছিল মাদ্রিদ।
এদিকে আবার ৩২ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতার হাতছানি। আর জুভেন্টাস এসেছে লিগ নিশ্চিত করে। কিন্তু আবারো আরেক জার্মান কোচের কৌশলে ধরাশায়ী জিদান অ্যান্ড কোং। হেইঙ্কেসের জিদান-বধকারী ছিল জিদানেরই স্বদেশি ক্রিশ্চিয়ান কারেম্বেউ। জিদানকে পুরোপুরি বোতলবন্দি রেখে দুর্দান্ত জয় পায় রিয়াল মাদ্রিদ, সেই সাথে আবারো স্বপ্নভঙ্গ জিদানের।
সে বছর ঘরোয়া লিগের পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়ে জিতেন বিশ্বকাপ। ফাইনালে তার দুই গোলে ফ্রান্স ৩-০ গোলে হারায় ব্রাজিলকে। যোগ্য খেলোয়াড় হিসেবে জিতে নেন ব্যালন ডি’অর এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার।
বিশ্বকাপ শেষে তুরিনে ফেরেন। কিন্তু সেই মৌসুমটা জিদান এবং জুভেন্টাস এর কারোরই ভাল যায়নি। লিগ শেষ করে সাত নাম্বারে, সেই সাথে কোচ মার্সেলো লিপ্পির স্থলাভিষিক্ত হোন আনচেলোত্তি – তখনো অনভিজ্ঞ কোচ। পরের মৌসুমে জুভেন্টাস আবারো ফিরে নতুন উদ্যমে। কিন্তু ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে রোমান ক্লাব লাজ্জিও ছিল তাদের ইতিহাসের সেরা ফর্মে।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে জিদান আর নেদভেদ মুখোমুখি হয়। দুই কোচের রক্ষণাত্মক কৌশলে ম্যাচ ড্র হয়। এরপর নাটকীয় মৌসুমে মাত্র এক পয়েন্টে এগিয়ে থেকে লিগ জিতে লাজ্জিও। পরের মৌসুমেও আরেক রোমান ক্লাব এএস রোমা জুভেন্টাস থেকে মাত্র দুই পয়েন্টের ব্যাবধানে লিগ জিতে নেয়।
বলা যায়, জুভেন্টাস জিদান যুগের শেষ হয় ২০০০-২০০১ এর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ স্টেজে। সেবার তুরিন ক্লাব গ্রুপ পর্ব পার হতে ব্যার্থ হয়। হামবার্গের সাথে গ্রুপ ডিসাইডার ম্যাচে জখেন কেইন্টজকে ছয় বছর পর বিখ্যাত হওয়া হেড-বাটেই আঘাত করে লাল কার্ড দেখেন জিদান। এরমধ্যে অবশ্য ফ্লোরিন্তিনো পেরেজের লা গ্যাল্কটিকো প্রকল্পেরও কিক অফ হয়ে যায়। ফলে রেকর্ড ট্রান্সফারের বিনিময়ে ২০০১ সালে মাদ্রিদে আসেন জিদান।
জুভেন্তাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে না পারলেও জিদান জুভেন্তাসের সর্বকালের সেরা একাদশে স্থান করে নিবেন সহজে। দুইটা ইউরোপ ফাইনাল কিংবা শেষ দুই মৌসুমে ন্যুনতম ব্যাবধানে দুইবার লিগ রানার আপ হওয়া জিদানের আক্ষেপ বাড়াতে পারে। কিন্তু তাতে কি – নামের পাশে দুইটা সিরি ‘এ’ এবং ব্যালন ডি অর জিতেছেন জুভেন্টাসেই।
যে ট্রান্সফার নিয়ে জুভেন্তাস দর্শকদের সংশয় ছিল, সেই জিদানকে ঘিরে পরবর্তীতে জুভেন্টাসের কৌশল তৈরি হয়। জিদানে জুভেন্তাস ছিল প্রাণবন্ত, মায়াবি এবং একই সাথে চতুর। জিদানকে সবাই মনে রাখে ফ্রান্স এবং রিয়াল মাদ্রিদের জন্য, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জুভেন্টাসই জন্ম দেয় সত্যিকার জিদানের।