ইদানিং ফেসবুকে এই কৌতুকটা খুব দেখা যায়। বাংলাদেশ হারলে একটা ছবি পোস্ট করে বলা হয়, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে দাওয়াত দেওয়া হোক।
অর্থটা পরিষ্কার – বাংলাদেশের জয় পাওয়ার এখন একমাত্র ভরসা ও নিশ্চয়তা ওই জিম্বাবুয়ে।
বাকি সব ফরম্যাটে এই কথা হয়তো পুরো সত্যি না। কিন্তু টেস্টে গত তিন বছর ধরে এটা একেবারে সর্বান্তকরণে সত্যি কথা। গত তিন বছরে বাংলাদেশ দল জিম্বাবুয়ে ছাড়া আর কোনো দলের বিপক্ষে কোনো টেস্ট জিততে পারেনি।
গত তিন বছরে বাংলাদেশ ১৪ টি টেস্ট খেলেছে; এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটা ড্র আছে। বাকি ১৩ ম্যাচের মধ্যে কেবল দুটি জয় আছে। আর দুটিই এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। একটা ঢাকায় এবং একটা হারারেতে। এ ছাড়া চলমান টেস্টটি ছাড়া ১০ টি ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। চলমানটিও ইনিংস ব্যবধানে হারার ঘোরতর শঙ্কা আছে।
এই ১০ টি হারের মধ্যে পাঁচটি ইনিংস ব্যবধানে হার আছে এবং দুটি দুই শতাধিক রানের হার আছে।
সোজা কথায় বাংলাদেশ যেনো প্রতিপক্ষের সাথে নুন্যতম লড়াইটাও করতে পারছে না। নতুন বলেই হারিয়ে ফেলছে তারা ৪-৫ উইকেট। বল হাতে সাফল্যের কোনো দেখা নেই। কোনোক্রমে মান বাচানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। যেনো এই বাংলাদেশ শুরুতে ফিরে গেছে।
শুরুতেও কী বাংলাদেশ এতোটা খারাপ ছিলো?
২০০৩ সালেও তো বাংলাদেশ লড়াই করেছিল। পাকিস্তানে গিয়ে পেশোয়ার বা মুলতানে শোয়েব আখতারদের বল খেলেছিলো বুক চিতিয়ে। জিততে জিততে ম্যাচ হেরেছিল। সেই শোয়েব আখতার নেই। কিন্তু আজকের শাহীন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলী বা সাজিদ খানরা যেন বাংলাদেশের কাছে শোয়েবদের চেয়ে ভয়ানক হয়ে উঠেছেন!
অথচ এই বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট জিতেছে। একটা সময় মনে হচ্ছিলো, টেস্ট খেলাটা অন্তত শিখে গেছে তারা। কিন্তু সেখান থেকে আবার কী করে পথ হারালো?
নাকি বাংলাদেশ আসলেই সাকিব-তামিম-মুশফিকদের বাইরে আর কিছু জিততে শেখেনি?
দেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল গত বেশ কিছুদিন খেলতে পারছেন না। সাকিবও নিয়মিত নন; খেললেও খুব ভালো ছন্দে আছেন, তা নয়। মুশফিকও আগের ছন্দে নেই। এবং এটা পরিষ্কার যে, সাকিব-তামিম-মুশফিকদের সেরা দিন না এলে বাংলাদেশ আর পারছে না।
টেস্ট ইতিহাসে নিজেদের অন্যতম বাজে সময় কাটাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ঘরের মাটিতে এর আগে ১০০ এর নিচে মাত্র দু’বার অলআউট হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এর মধ্যে প্রথমটা নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্টে, ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। পরের নজীরটা ২০০২ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। মানে প্রায় দুই দশক আগের টেস্ট স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ দল।
সোজা কথায়, বাংলাদেশের একটা প্রজন্মান্তর চলছে। আর সেই অর্ন্তবর্তীকালে হাল ধরবেন, এমন কাউকে খুজে পাওয়া কঠিন হচ্ছে। তাহলে কী আরও খারাপ সময় অপেক্ষা করছে?