এখন পর্যন্ত পাকিস্তান ক্রিকেট বিশ্বকে অন্যতম সেরা কয়েকজন ক্রিকেটার উপহার দিয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সূচনার আগেই এই খেলোয়াড়দের অনেকেই ক্রিকেট থেকে সরে এসেছিলেন। অথচ ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণটি তাদের পারফরম্যান্সের জন্য বেশ উপযুক্ত ছিল।
এবার পাকিস্তানের প্রাক্তন খেলোয়াড়দের নিয়েই একটি কাল্পনিক টি-টোয়েন্টি একাদশ তৈরি করা যাক; যারা এই যুগে খেললে হয়তো বিশ ওভারের ফরম্যাটের সর্বেসর্বা হতে পারতেন।
- সাঈদ আনোয়ার
পাকিস্তান তো বটেই বিশ্বের সেরা ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাটসম্যানদের একজন ছিলেন সাঈদ আনোয়ার। এই বামহাতি ব্যাটসম্যান রান করতে পারতেন বেশ দ্রুতগতিতেই; টি-টোয়েন্টি যুগ আসার আগেই টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাট করতেন তিনি। ব্যাটিংয়ের সময় তাঁর টাইমিং ছিল সবচেয়ে উপভোগ্য।
এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান স্পিন এবং মিডিয়াম পেসের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী ছিলেন। এই যুগে ক্রিকেট খেললে তিনি হয়তো সর্বকালের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি ওপেনার হতে পারতেন।
- আমির সোহেল
সাঈদ আনোয়ারের সঙ্গে জুটি গড়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে আমির সোহেলের চেয়ে ভাল কেউ বোধহয় নেই। ব্যাটসম্যান ছিলেন সোহেল সেরা না হলেও ফর্মে থাকা অবস্থায় তিনি রান করতে পারতেন ভাল স্ট্রাইক রেটে। বিশেষ করে উইকেটের স্কয়ারে শট খেলতে দক্ষ ছিলেন তিনি।
আগ্রাসনের কারনে এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান প্রায় দ্রুত আউট হয়ে যেতেন, তবে বর্তমান টি-টোয়েন্টি এমন ব্যাটারদেরই কদর বেশি। এছাড়া আমির সোহেল অফ স্পিনটাও করতে পারতেন। তাঁর বামহাতি অফ স্পিন দলের জন্য বেশ কার্যকরী ছিল।
- ইজাজ আহমেদ
বিশ্বের অন্যতম অদ্ভুতুড়ে ব্যাটিং স্ট্যান্স ছিল ইজাজ আহমেদের। তাকে এই স্ট্যান্সের জন্য ‘কুড়াল মানব’ বলা হতো। দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ইজাজ ছিলেন আগ্রাসনের প্রতিমূর্তি।
নিজের দিনে বিশ্বের যে কোনো বোলিং লাইন আপকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারতেন তিনি। আবার স্লিঙ্গা অ্যাকশনে বামহাতি ফাস্ট বোলিং করেও দলকে সাহায্য করতেন তিনি। সব মিলিয়ে এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট বেশ মানানসই ছিল তাঁর জন্য।
- জহির আব্বাস
পাকিস্তানের জহির আব্বাস ছিলেন টেকনিক্যালি সলিড একজন ব্যাটসম্যান। কাল্পনিক একাদশে চার নম্বরে ব্যাট করার জন্য তিনি সবচেয়ে পছন্দ।
‘এশিয়ান ব্র্যাডম্যান’ খ্যাত আব্বাস সবক্ষেত্রেই সেরা ছিলেন, তবে স্পিনের বিপক্ষে তার রান তোলার গতি ছিল দুর্দান্ত। সত্তরের দশকে যেখানে সবই ধীরেসুস্থে রান করতেন সেখানে এই পাকিস্তানির স্ট্রাইক রেট ছিল ৮৪.৮০।
- জাভেদ মিয়াঁদাদ
সীমিত ওভারের ফরম্যাটে পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। তাই কাল্পনিক একাদশের হয়ে শেষদিকে ঝড় তোলার দায়িত্ব তাকেই দেয়া হয়েছে।
কাট শট আর চমৎকার রিভার্স সুইপ জাভেদ মিয়াঁদাদের মূল শক্তি। এছাড়া রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও তিনি ছিলেন দারুণ। টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ফিনিশিংয়ের দায়িত্বে তাঁর চেয়ে ভাল খুব কম ক্রিকেটারই আছে।
- মুশতাক মোহাম্মদ
ইমরান খানের আগমনের আগ পর্যন্ত মুশতাক মোহাম্মদই ছিলেন পাকিস্তানের সর্বশ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডার। এছাড়া তার মস্তিষ্ক ছিল থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মত কার্যকর। মুশতাক একজন দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান ছিলেন যিনি অপ্রথাগত স্ট্রোক খেলতে সক্ষম।
তাই টি-টোয়েন্টি লাইন আপের যেকোনো পজিশনে খেলতে পারতেন তিনি। এছাড়া তাঁর লেগস্পিন বেশ বিপজ্জনক ছিল ব্যাটারদের কাছে। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি দলের এক্স-ফ্যাক্টর হতে পারতেন মুশতাক মোহাম্মদ।
- ইমরান খান
নি:সন্দেহে পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার এবং অধিনায়ক ছিলেন ইমরান খান। কাল্পনিক এই একাদশের অধিনায়কত্বের পাশাপাশি সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব পালন করবেন ইমরান খান। পাওয়ার হিটিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং লাইন আপে ধ্বস নামলে সেটি সামাল দেয়ার সক্ষমতাও আছে তাঁর।
আবার বল হাতে গতি আর সুইংয়ের ব্যাটারদের নাকাল করতে জুড়ি নেই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের। এছাড়া তাঁর ভান্ডারে আছে দুর্দান্ত ইয়র্কার যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেশ ফলপ্রসু।
- মঈন খান (উইকেটরক্ষক)
পাকিস্তানের উইকেট কিপার রশিদ লতিফ এবং মঈন খান দুই জনেরই সামর্থ্য আছে টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা করে নেয়ার। তবে তুলনামূলক বেশি আগ্রাসী হওয়ায় বেছে নেয়া হয়েছে মঈন খানকে। সুইপ শটে ছয় হাঁকাতে নিজের দক্ষতার পরিচয় প্রায় দিয়েছেন তিনি।
- ওয়াসিম আকরাম
পাকিস্তানের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম নিশ্চিতভাবেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সর্বেসর্বা হতে পারতেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দ্রুতগতিতে বোলিং করলেও পরবর্তীতে গতির চেয়ে সুইং এবং অ্যাকুরেসির দিকেই মনোযোগ দেন তিনি।
দুই দিকেই সুইং করানো ছাড়াও বাউন্স এবং ইয়র্কার করতেও পারদর্শী ছিলেন আকরাম। আবার ব্যাট হাতে বড় শট খেলতে পারতেন এই ফাস্ট বোলার।
- সাকলাইন মুশতাক
স্পিনার হয়েও সীমিত ওভারের ফরম্যাটে শেষদিকে বল করতে পারতেন সাকলাইন মুশতাক। রান আটকানো এবং উইকেট তুলে নেয়া দুইটি কাজই ভালোভাবে করতে পারতেন এই স্পিনার। সাকলাইনের দুসরা তাঁকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনন্য করতে পারতো। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তাঁর টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতাও আছে।
- ওয়াকার ইউনুস
পেস আক্রমণে ওয়াসিম আকরামের সঙ্গী ওয়াকার ইউনুস। নিজের সেরা সময়ে ইউনুসের চেয়ে ভাল বোলার কেউ ছিল না বললেই চলে। ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং আর এরই সাথে বলের বাঁক; দুইয়ের মিশ্রণে ওয়াকার ইউনুস ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।
ইনজুরির কারণে পরবর্তীতে গতি কমে গেলেও সুইং, অ্যাকুরেসিতে আরো নিঁখুত হয়ে ওঠেন তিনি। এছাড়া টো-ক্র্যাশিং ইয়র্কারে ব্যাটসম্যানকে নাস্তানাবুদ করতেও পটু ছিলেন এই কিংবদন্তি।