অভাগা নাকি অবমূল্যায়িত!

সম্ভাবনার আলোকশিখা নিয়ে কত প্রদীপ-ই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এসেছে কিন্তু অনেকেই পরিনত হয়েছে আক্ষেপে। কেউ পারেনি নিজ প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে, কেউ আবার হারিয়ে গিয়েছেন নানা কারনেই। তবে নাঈম ইসলামের বাদ পড়ার কারন এদের মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত বটে। নাঈম ইসলাম ছিলেন একজন ব্যাটসম্যান যিনি পার্ট টাইম বোলার হিসেবেও কার্যকর ছিলেন অথচ ফর্মে থাকা অবস্থায়ও বারবার তাঁকে বাদ পড়তে হয়েছিল টিম কম্বিনেশনের অজুহাতে

সম্ভাবনার আলোকশিখা নিয়ে কত প্রদীপ-ই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এসেছে কিন্তু অনেকেই পরিনত হয়েছে আক্ষেপে। কেউ পারেনি নিজ প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে, কেউ আবার হারিয়ে গিয়েছেন নানা কারনেই। তবে নাঈম ইসলামের বাদ পড়ার কারন এদের মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত বটে। নাঈম ইসলাম ছিলেন একজন ব্যাটসম্যান যিনি পার্ট টাইম বোলার হিসেবেও কার্যকর ছিলেন অথচ ফর্মে থাকা অবস্থায়ও বারবার তাঁকে বাদ পড়তে হয়েছিল টিম কম্বিনেশনের অজুহাতে

গাইবান্ধার এক গ্রামে ১৯৮৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন নাঈম। ছোটবেলাতেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় নাঈম ইসলামের। প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে নাঈম ইসলামের অভিষেকে হয় রাজশাহী বিভাগের হয়ে। ২০০৪ থেকে ২০০৮, এই চার বছর তিনি খেলেছিলেন রাজশাহীর হয়ে। শুধু খেলেছেন বললে ভুল হবে, তিনি পারফর্ম ও করেছেন দারুণভাবে

২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে প্রথমবার ওয়ানডে দলে ডাক পান তিনি। নয় অক্টোবর ২০০৮ সালে কিউইদের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। অভিষেক ম্যাচেই করেছিলেন ৪৬ রান। একই সিরিজে টেস্ট দলেও ডাক পান তিনি। অভিষেক টেস্টে ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে করেছিলেন ৩৩ রান, আর বল হাতে পেয়েছিলেন একটি উইকেট।

২০০৮ সাল থেকেই জাতীয় দলে নিয়মিত হয়ে উঠেন নাঈম ইসলাম তৎকালীন কোচ জেমি সিডন্সের বেশ প্রিয় শিষ্য ছিলেন তিনি। ৮ টি টেস্ট ম্যাচে ৩২ গড়ে করেছিলেন ৪১৬ রান। একটি শতক এবং অর্ধ শতক ছিল নাঈমের টেস্ট ক্যারিয়ারে। তৎকালীন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে এমন পারফরম্যান্স-কে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারও দীর্ঘ হয়নি নাঈমের। মাত্র ১০টি ম্যাচ খেলেই চলে গিয়েছিলেন আড়ালে। ১১৪ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ১৩০ রান।

অন্য দুই ফরম্যাটের তুলনায় তুলনামূলক দীর্ঘ হয়েছিল ওয়ানডে ক্যারিয়ার। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে ৫৯ ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন নাঈম ইসলাম। ২৭ এর একটু বেশি গড়ে রান করেছিলেন ৯৭৫। কোন শতকের দেখা না পেলেও ৫টি ফিফটি রয়েছে নামের পাশে। বল হাতেও নিজের কাজটা করেছিলেন নাঈম ইসলাম। বল হাতে নিয়েছেন ৩৫ উইকেট, ইকোনমি মাত্র ৪.৮৪! একজন পার্ট টাইম বোলাট হিসেবে যথেষ্ট ভাল বলতেই হয়।

শারীরিক গড়নে হার্ড হিটার মনে না হলেও ২০০৯ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে ৬ বলে ৬ টি ছক্কা হাঁকিয়ে রীতিমতো ‘ছক্কা নাইম’ বনে যান দর্শকদের কাছে। সে বছরই জিম্বাবুয়ে’র বিপক্ষে স্মরনীয় এক জয় এনে দেন তিনি। শেষ উইকেটে দলের যখন প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান তখন টানা তিন ছক্কা হাঁকিয়ে একাই করেছিলেন ৩৩ রান। চোখে লেগে থাকার এক জয় সেদিন পেয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট।

তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাঈম ইসলাম তার প্রতিভার সবটুকু ব্যবহার করতে পারেননি। বাদ পড়ার আগের টেস্টেই করেছিলেন শতক! তবুও কোনো এক অজানা কারণে বাদ পড়েন দল থেকে। এরপর নিয়মিত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট তুলেছেন রানের ফোয়ারা। ১৫৩ ম্যাচে রান করেছেন ৯৪৪৭। পাশাপাশি ঘরোয়া ওয়ানডেতে তার সংগ্রহ ৬৮৮৯ রান।

এবারের ২০২১-২২ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ ক্রিকেটে রীতিমতো রান মেশিনে পরিনত হয়েছেন নাঈম ইসলাম। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ৯ ম্যাচে করেছেন ৬৬৯ রান। গড়টা ৮০ এর উপরে। চারটি ফিফটি করেছেন যার তিনটিতেই আবার আউট হয়েছেন নব্বইয়ের ঘরে। পাশাপাশি সেঞ্চুরিও করেছেন দুইটি।

সর্বশেষ ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা নাঈম ইসলাম ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করলেও আর ফিরতে পারেননি জাতীয় দলে। নিয়মিত সুযোগ পেলে হয়তো সাকিব কিংবা মাহমুদউল্লাহদের মতই ভরসাযোগ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারতেন, দেশসেরা ক্রিকেটার হয়ে উঠার সব সম্ভাবনা-ই ছিল নাঈম ইসলামের মাঝে। ঠিকমতো সুযোগ আর পরিচর্যা পেলে হয়তো আজ থাকতেন বাংলাদেশের হয়ে অনেক উপরে। কিন্তু প্রতি বছর ঘরোয়া লিগে পারফর্ম করেও জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়তে পারেননি। কিংবা নির্বাচকরা-ই হয়তো ভাবেনি তাঁকে নিয়ে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...