শোয়েব আখতার মানেই ছিল জীবন, শোয়েব আখতার মানেই ছিল গতি। গতি-পেসের মিশেলে নিজের দিনে যেমন আনপ্লেয়েবল ছিলেন, অপ্রতিরোধ্য ছিলেন বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের কাছে – তেমনি এমন সব ভুতুড়ে বিতর্কে ক্যারিয়ারজুড়ে তিনি জড়িয়েছেন নিজেকে – যা দিয়ে তাঁকে বোঝা দুস্কর। এমন খামখেয়ালি গতিবান দানব ক্রিকেটে আর আসেননি নি:সন্দেহে।
গতির দুনিয়ার তিনি একক অধিপতি। আর সেই সাম্রাজ্যের মুকুট তাঁর মাথায় উঠেছিল ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল। যদিও, অনানুষ্ঠানিক ভাবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লাহোরে চলছিল এক ওয়ানডে ম্যাচ। সামনে ছিলেন ক্রেইগ ম্যাকমিলান। প্রথমবারের মত কোনো বোলার সেদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিংবা যেকোনো স্বীকৃত ক্রিকেটে ঘণ্টায় ১০০ মাইল গতির বল ছুড়েছিলেন।
শোয়েব আখতারের করা সেই ডেলিভারির গতি ছিল ১০০.০৪ মাইল/ঘণ্টা (১৬১ কিলোমিটার/ঘণ্টা।) যদিও সেই ডেলিভারিটা সেদিন আইসিসির স্বীকৃতি পায়নি। কারণ, আইসিসি দাবি করে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সেদিন গতি মাপার জন্য স্ট্যান্ডার্ড কোনো যন্ত্র ছিল না।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) অবশ্য আইসিসি স্বীকৃতি দিল কি দিল না – সে নিয়ে খুব বেশি ভাবিত হয়নি। পিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার সেদিন খুব গর্ব করেই সেদিন বিবৃতি পাঠিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন
শোয়েব আখতারও বলেছিলেন, ‘এটা আমার জন্য খুব বেশি ম্যাটার করে না যে কেউ আমাদের স্পিড গানকে স্বীকৃতি দিল কি দিল না। আমার জন্য এটা খুব আত্মতৃপ্তির বিষয় যে আমি পৃথিবীর ইতিহাসের দ্রুততম ডেলিভারিটা করেছি।’
তবে, আর যাই হোক না কেন – নিশ্চয়ই হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন কিংবদন্তি জেফ থমসন। ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান এই দানব ঘণ্টায় ৯৯.৮ মাইল/ঘণ্টা গতির এক ডেলিভারি করেছিলেন। আইসিসির রেকর্ডবুকে সেটাই টিকে গিয়েছিল। যদিও, থমসনের এক নম্বরে থাকা এক বছরের বেশিদিন দীর্ঘায়িত হয়নি।
২০০৩ সালে ছিল বিশ্বকাপ। আর বিশ্বকাপের মঞ্চেই গতির চূড়ায় উঠে যান রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস। আর আজ অবধি সেই চূড়া থেকে তাঁকে কেউ নামাতে পারেননি। ব্রেট লি, শন টেইট কিংবা মিশেল স্টার্করা কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন বটে – কিন্তু তাতে শোয়েবের মসনদ কাঁপেনি।
বিশ্বকাপের সেই ম্যাচটা ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের নিক নাইটের বিপক্ষে করা সেই মেইডেন ওভারের শেষ ডেলিভারিটায় যখন ১৬১.৩ কিলোমিটার/ঘণ্টা (১০০.২ মাইল/ঘণ্টা) গতিতে উঠলো তখন আইসিসি সেটাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হল।
ব্রেট লি এই সেঞ্চুরির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন। কিন্তু, সামান্য ব্যবধানে তাঁর গতির শতক ছোঁয়া হয়নি। কিন্তু, শন টেইট ঠিকই ছুঁয়েছিলেন। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খ্যাতনামা লর্ডসের মাঠে তিনি ১০০.১ মাইল/ঘণ্টা গতিতে বল ছুড়েন। তবে, শোয়েবকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি।
গোটা ক্যারিয়ার জুড়ে গতি ও বিতর্কের ঝড় তোলার পরও শোয়েব আখতারকে নিয়ে অনেক আক্ষেপ দিব্যি করা যায়। কারণ, তিনি সামর্থ্যের তুলনায় পেয়েছেন খুবই সামান্য। ১৭৮ টি টেস্ট উইকেট আর ২৪৭ টি ওয়ানডে উইকেট আসলেই তাঁর গ্রেটনেসের তুলনায় খুবই কম।
এর পেছনে শোয়েবের নিজের দায়ও কম নয়। মাঠের ঘটনার চেয়ে মাঠের বাইরের ঘটনাতেই তিনি খবরের শিরোনাম হতেন বেশি। নিজেকে একটু সামলে নিলে হয়তো তাঁর সাফল্য কোথায় গিয়ে ঠেকতো সেটা অনুমানও করা যায় না!