২০১১ বিশ্বকাপের জয়াবর্ধনে, মিস্টার এলিগ্যান্স

২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে সেরা ইনিংসটি কার – গৌতম গম্ভীরের না মহেন্দ্র সিং ধোনির – এই নিয়ে আজও প্রায়ই বিতর্ক চলে। আমার মতে কিন্তু সেই ম্যাচের সেরা ইনিংসটি বেরিয়ে এসেছিল এক শ্রীলঙ্কান শিল্পীর ব্যাট থেকে – মাহেলা জয়বর্ধনে। শ্রীলংকা ম্যাচটি হেরে যাওয়ায় যথেষ্ট মর্যাদা পায় নি সেই ইনিংস কিন্তু নিছক ক্রিকেটীয় সৌন্দর্যের বিচারে তার চেয়ে ভালো ইনিংস আমি বিশ্বকাপ ফাইনালে আজ অব্দি দেখি নি। হ্যাঁ, লয়েড, ভিভ, অরবিন্দা, পন্টিং – এদের সবাইকে হিসেবের মধ্যে রেখেই এই কথা বলছি (প্রথম দুটো অবশ্য রেকর্ডিং দেখেছি)।

একদিনের ক্রিকেটেও অনবদ্য স্ট্রাইক রেট রেখে যে শৈল্পিক ব্যাটিং করা যায়, মাহেলার এই ইনিংস তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। পরবর্তী কালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও বেশ কিছু ধুয়াধার ইনিংস খেলেছিলেন মাহেলা। সুতরাং ফাইনালের সেই ইনিংসটিকে কোনভাবেই ফ্লুক বলা যাবে না, ভালো স্ট্রাইক রেট রেখে ব্যাট করতে তিনি পারতেন। তবে আইপিএল-এর কোনও একটি ম্যাচে যুবরাজকে দেখেছিলাম লঙ অনে বল খেলে সিঙ্গল না নিয়ে ক্রিজে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

অন্যদিকের ব্যাটসম্যান মাহেলা জয়াবর্ধনে। যুবরাজকে কোন অসম্মান না করেই বলছি, সেদিন থেকে টি-টোয়েন্টি, বিশেষ করে আইপিএল-এর প্রতি ভক্তি চটে গেছিল আমার। যে ক্রিকেট মাহেলা (বা ভিভিএস) এর মতো ক্রিকেটারদের যথেষ্ট সম্মান দেয় না, সেটা ঠিকঠাক ক্রিকেট বলে মেনে নিতে কোথায় যেন বাঁধে।

সে যাক গে! সেই দিনের কথায় ফিরে আসি। সেদিন ব্যাটকে জাদুদণ্ডের মতো ব্যাবহার করেছিলেন মাহেলা। যেমন একদিকে তার বিখ্যাত ইন্সাইড আউট শট ছিল কাভারের ওপর দিয়ে, তেমনি ছিল স্কয়ার এবং লেট কাট। অন সাইডের পুল এবং ফ্লিকগুলোই বা না উল্লেখ করে থাকি কীভাবে?

তবে সেই ইনিংসের হাইলাইটস যদি দেখেন, সবচেয়ে চোখে পড়বে তার খেলা কাটের বৈচিত্র। উইকেট কিপারের পাশ থেকে আরম্ভ করে পয়েন্টের ডান পাশ দিয়ে – ইচ্ছেমত বলকে সেদিন সীমানার বাইরে পাঠিয়েছিলেন মাহেলা। ভারতীয় বোলারদের পক্ষে সবচেয়ে হতাশার জায়গাটা ছিল যে তাদেরই গতিকে ব্যবহার করে (এবং অবশ্যই নিজের কব্জি) এই শটগুলো খেলেছিলেন জয়বর্ধনে। আমাদের ভিশিও কাট খেলার জন্যে বিখ্যাত ছিলেন কিন্তু তার ব্যাটিং কোনদিন লাইভ দেখার সৌভাগ্য হয় নি।

সেই ক্ষোভ সেদিন কিছুটা প্রশমিত হয় জয়বর্ধনের ব্যাটিং দেখে। মূলত তারই ৮৮ বলে ১০৩-এর ওপর ভর করে বড়সড় একটা স্কোর খাঁড়া করে শ্রীলঙ্কা। জহির, শ্রীসান্ত, হরভজন, মুনাফদের সেদিন রীতিমত অসহায় দেখিয়েছিল তার সামনে। তবু শেষ রক্ষা হয়নি।

গম্ভীরের দৃঢ়তা এবং ধোনির ম্যাচ শেষ করার ক্ষমতার ওপর ভর করে দ্বিতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। সেই জয়ের আনন্দ, উত্তেজনার ফলেই সম্ভবত আমাদের স্মৃতিতে এই ইনিংস কিছুটা হলেও আবছা হয়ে গেছে। কিন্তু হওয়া উচিৎ নয়। কারণ মাহেলার এই ইনিংস অল্প কয়েকটি ইনিংসের মধ্যে একটি যা জয়-পরাজয়ের মত ছোটখাটো বিষয় থেকে মনকে তুলে ক্রিকেটকে ভালবাসতে শেখায়।

এই জন্যেই তো খেলা দেখা, তাই না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link