কাকতালীয় সেমিফাইনাল কাণ্ড

ক্রিকেট দুনিয়ায় কাকতালীয় ঘটনার দেখা মিলেছে বহুবার। হয়ত অতীতে ঘটে যাওয়া কোন একটি ঘটনার পুনঃরাবৃত্তির দেখা মিলেছে ক্রিকেটের সেই বাইশ গজে। কিন্তু পুরো একটা ম্যাচের হুবহু পুন:রাবৃত্তির ঘটার মতো ভৌতিক ঘটনা খুব কমই ঘটেছে ক্রিকেটের ইতিহাসে। এমন ঘটনা ইতিহাসের বুকে জায়গা করে নিয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের মধ্য দিয়ে।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। ঠিক এমন এক সেমিফাইনালে প্রায় বছর দশেক আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচেই মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। পার্থক্য শুধু আয়োজক দেশের। ২০১০ আসরের আয়োজন হয়েছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। অপরদিকে এবারের আসর বসলো আরব আমিরাতের মরুর বুকে।

এতেই কাকতালীয় ঘটনার ইতি ঘটছে না মশাই, এ তো কেবল শুরু। দুই ম্যাচের টসেই জিতেছিল অজিরা। দুই ম্যাচেই তাঁরা পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানায় আগে ব্যাটিং করবার। এখানেও থেমে যেতে পারতো কাকতালীয় ঘটনার অনুক্রম। না তেমটা আর হলো না। পাকিস্তানের পক্ষে দুই ম্যাচেই ওপেনিং এ নেমেছিলেন ভিন্ন দুই উইকেট রক্ষক। ২০১০ এ কামরান আকমল ও ২০২১ এ মোহাম্মদ রিজওয়ান। দুইজনই কাকতালীয় ঘটনার পরিক্রমা অব্যাহত রাখলেন অর্ধশতক হাকিয়ে। রানের ফারাক তবু আছে।

প্রত্যাশা করছেন এখানেই শেষ? না তা আর হতে কি করে দেওয়া যায়? খেলোয়াড়েরা যদি একই থাকতেন তাহলে নির্ঘাত আপনি ভাবতেন ক্রিস্টোফার নোলানের ইনসেপশন সিনেমার মতো কোন এক ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক বুঝে উঠতে পারতেন না কোন ঘটনাটি বাস্তবিকে ঘটছে আর কোনটি কল্পনায়। সেই যাই হোক পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া দুই সেমিফাইনাল ম্যাচের ঘটনার সমাপতন তখনও ঢের বাকি।

দুই ভিন্ন ম্যাচে পাকিস্তানের হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন দুই ভিন্ন মানুষ তথা ব্যাটার। ২০১০ এ নেমেছিলেন উমর আকমল ও ২০২১ এ এসে ফখর জামান। এই দুই ব্যাটারই তুলে নিয়েছিলেন অর্ধশতক। পাকিস্তানের ব্যাটিং ইনিংস দিয়েই এই দুই ম্যাচের মধ্যে ঘটা কাকতালীয় ঘটনার ইতি ঘটতেই পারতো। তবে পৃথিবী এক দশকে একই রকম ঘটনার পুনঃরাবৃত্তির পেছনেও নিশ্চয়ই কাজ করেছে কোন এক অলৌকিক শক্তি।

অব্যাহত রইলো এই অদ্ভুতুরে কাণ্ডের পথচলা। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ব্যাটিং করতে নামা দুই ম্যাচে দুই ওপেনার পেয়েছিলেন শূন্য রানে সাজঘরে ফেরা তিক্ত স্বাদ। ২০২১ অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ও ২০১০ সালে ডেভিড ওয়ার্নার।। তবে এক দশক আগের সেই শূণ্য রানে ফেরার দুঃখস্মৃতি ভুলতেই ২০২১ এর সেমিফাইনালে খেলেছেন ঝোড়ো ৪৯ রানের একটি ইনিংস। অনাকাঙ্খিতভাবে আউট না হয়ে গেলে সেখানেই হয়ত অবসান ঘটতো কাকতালীয় ঘটনার।

কিন্তু তখনও অদ্ভুতুরে কাণ্ডের বেশ খানিকটা বাকি। স্টিভেন স্মিথ ছিলেন ২০১০ এবং ২০২১ সালের অস্ট্রেলিয়ার দুই দলেই এবং দুই ম্যাচেই তিনি আউট হয়েছিলেন পাঁচ রান করে। মনে মনে পরিত্রাণের ইচ্ছে জাগ্রত হলেও আরো কিছুক্ষণ থেকে যান গল্পের সাথেই।

অস্ট্রেলিয়া দুইটি ম্যাচই জিতেছিল ছক্কা হাকিয়ে। তাছাড়া দুই ম্যাচেই ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সাত নম্বরে ব্যাটিং করতে নামা খেলোয়াড়েরা। ২০১০ সালে ম্যাচ সেরার মুকুট পড়েছিলেন মাইকেল হাসি এবং ২০২১ এ অজি উইকেট রক্ষক ব্যাটার ম্যাথু ওয়েড। শেষ একটি কাকতালীয় ঘটনা দিয়ে এই দুই ম্যাচের মাঝে ঘটা কাকতালীয়, অদ্ভুতুরে কিংবা ভৌতিক ঘটনার গল্প। ২০১০ এবং ২০২১ এর ভিন্ন দুই টি-টোয়েন্টি আসরের ভিন্ন দুই সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ছয় এবং সাত নম্বরে ব্যাটিং করতে নামা ব্যাটাররা পার করেছিলেন চল্লিশের ঘর রানের দিক থেকে।

ক্রিকেটের ইতিহাস ঘাটলে হয়ত  দেখা মিলবে এমনসব অদ্ভুত কাকতালীয় ঘটনার। ক্রিকেট মাঠে হরহামেশাই হয়ত ঘটে। কিছু ঘটনা রটে কিছু থেকে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। তবু এভাবেই ঘটনার পরে আরো ঘটনা যুক্ত হয়ে চলতে থাকুক ক্রিকেটের পথচলা, ক্রিকেটের পথে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link