এক লজ্জার পাঁচ কারণ

পাঁচ উইকেটে হার। তাও আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এই ম্যাচের ময়নাতদন্ত করলে বাংলাদেশের পরাজয়ের পেছনে কারণের অভাব হবে না। যদি খুবই সরল মনে চিন্তা করে থাকেন, তারপরেও এ পয়েন্টগুলা আপনার মনের অগোচর হবে না নিশ্চিত।

  • হঠাৎ তামিম ইকবালের গিয়ার শিফট করা

গিয়ার শিফট বলতে সাধারণত আমরা ইতিবাচক কিছুই বুঝি৷ কিন্তু এক্ষেত্রে হয়েছে পুরোপুরি ওলটো। শুরু থেকেই একটা মানান সই স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে যাচ্ছিলেন তামিম। কিন্তু ৩৪ রানের পর থেকে তাঁর স্ট্রাইক রেট পড়তে শুরু করে। ৪০ এর ঘরে যাওয়ার পর যা আশঙ্কাজনক হারে কমে।

৪০ থেকে ৫০-এ যেতে তামিম খরচ করেন ৩০ বল। ক্রিকেটরসিকরা এ সময়টায় তাঁর ব্যাটিং দেখে থাকলে নির্ঘাত ‘নার্ভাস ফোরটিস’ নামে টার্মও বের করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে।

আসলে শুধু সংখ্যা দিয়ে পুরো ব্যাপারটা তুলে ধরা সম্ভব না। ওই সময়ে তামিমের অ্যাপ্রোচ, ইনটেন্ট ছিল যারপরনাই নেতিবাচক। একটা উদাহরণ দিই শুধু। ২৩ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়াইডিশ লং অনে বল ঠেলে লিটন সহজ দুইটা রান নিতে চাইলে তা নাকচ করে দেন তামিম।

কারণ তখন তিনি ছিলেন ৪৯ রানে এবং স্ট্রাইকটা নিজের কাছে পেতে চাইছিলেন। স্ট্রাইক নিজের হাতে রাখার জন্য এর আগে একের পর এক ডট খেলেও ২০তম ওভারের শেষ বলের পূর্বে সিঙ্গেল নেওয়ার বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন তিনি লিটনকে। যদিও ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক সংযোগ না হওয়ায় ওই বলটাও নষ্ট করেন তামিম।

শেষ পর্যন্ত নিজের ইনিংসটাকে লম্বা করতে পারেননি তিনি। কমাতে পারেননি অতিরিক্ত ডট খেলার সংখ্যাও।

  • শেষ ৫ ওভারে মন্থর ব্যাটিং

৪০-৪৫ ওভারের স্পেসে এনামুল হক বিজয় ও মুশফিকুর রহিম মিলে তুলেছিলেন ৫১ রান। কিন্তু এর পরপরই বিজয় আউট হয়ে গেলে শেষ ৫ ওভারে আসে মাত্র ৩৯ রান। অথচ বাংলাদেশের হাতে ছিল ৮টা (আদতে ৭টা যেহেতু লিটন পুনরায় ব্যাটিংয়ে নামার অবস্থায় ছিলেন না) উইকেট।

বিশেষ করে, শেষ ৫ ওভারে মুশফিক খুবই নিরাপদ ব্যাটিং করছিলেন। ৪০ এর ঘরে ঢুকে হাতে পাওয়া ৪ ওভারের অর্ধেকটা খেলে তিনি কেবল একটি বাউন্ডারি মারতে পেরেছিলেন। এ সময়ে তাঁর সঙ্গী রিয়াদের ব্যাটিংও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি বের করতে মুশির মতোই ব্যর্থ ছিলেন তিনি। যার ফলে উইকেট বিবেচনায় অন্তত ২০টা রান কম যোগ হয় বাংলাদেশের স্কোরকার্ডে।

  • লিটন দাসের চোট

লিটন আজ শুরু থেকেই সময় নিয়ে খেলছিলেন। যে কারণে অর্ধশতক পর্যন্ত পৌঁছাতে তিনি খরচ করেন ৭৫টা বল। কিন্তু ৫০ করার পরপরই গিয়ার শিফট করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে মারেন টানা তিনটা বাউন্ডারি।

তারই ধারাবাহিকতায় রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ৮৯ বল খেলে ৮১ রান করেন তিনি। কে জানে, হয়তো চোটের কারণে তিনি মাঠ না ছাড়লে ইনিংস শেষে বাংলাদেশের স্কোরকার্ডটা আরো পুষ্টই দেখাতো!

  • ফিল্ডিং মিসের মহড়া

এটা তো বাংলাদেশের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা! আজকেও ফিল্ডারদের মাখনমাখা হাত গলে ফসকেছে চারটার মতো ক্যাচ। স্টাম্পিং মিস করেছেন উইকেটরক্ষক আর গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে মিসের পাশাপাশি ফিল্ডারদের ক্ষিপ্রতায়ও ছিল যথেষ্ট অভাব।

  • এক বোলার কম নিয়ে মাঠে নামা

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও নিজেদের পছন্দের সংস্করণে রক্ষণাত্মক পরিকল্পনায় মাঠে নামতে হলো বাংলাদেশকে। ম্যাচের ক্রুশাল মোমেন্টে ১০ ওভারের একটা কোটা পূরণ করাই যখন আজ অধিনায়কের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক তখনই ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আসে শরিফুলের ইনজুরি। যদিও পরবর্তীতে তিনি মাঠে ফেরেন ঠিকই, কিন্তু চোট নিয়ে নিজের সেরাটা আর দিতে পারেননি।

এগুলা হলো বাংলাদেশের হারার ন্যূনতম কয়েকটা কারণ। যদি ক্রিটিক্যালি ভাবা হয়, তাহলে আরো কারণ পাওয়া যাবে। কিন্তু লাভ কি! এই কয়টা পয়েন্ট তুলেও যদি দলের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে উত্তর মিলবে এমন- ‘আজ হেরেছি বলে এত কথা। জিতলে তো এসব বলতেন না!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link