কাঁটার মুকুটের পালক

ভারতের সেরা অধিনায়ক কে? – এই প্রশ্নের জবাবে অধিকাংশর উত্তর-ই হয়ত থাকবে মহেন্দ্র সিং ধোনি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়, টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় – এর আগে ভারতের কোন অধিনায়কই বা এত সফলতা পেয়েছে। তবে একদলের মত দিবেন সৌরভ গাঙ্গুলি ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক! যে দলটা নিয়ে ধোনি বিশ্বমঞ্চে শিরোপা জিতেছে – সেই দলটার অধিকাংশ ক্রিকেটারকে নিজ হাতে তৈরি করেছেন সৌরভ।

ফিক্সিংয়ের কালো অধ্যায়ে যখন জর্জরিত ভারত দল। ঠিক সে সময় দলের দায়িত্ব নিয়ে ভঙ্গুর অবস্থা থেকে পুনরায় টেনে তোলেন সৌরভ। বেশ কিছু তরুণদের সুযোগ দেন, আস্থা দেখান – সেখান থেকে তারা বনে যান বিশ্ব সেরা একজন। শিরোপার বিচারে হয়ত ধোনি ঠিক এগিয়ে থাকবেন কিন্তু এই দলটা পুনর্গঠনের পেছনের কারিগর ছিলেন সৌরভ।

সৌরভকে কেন ভারতের সর্বকালের সেরা একজন অধিনায়ক মানবেন? তার কিছু কারণ আলোচনা করা যাক।

  • সতীর্থদের জন্য লড়াই

একজন সেরা অধিনায়ক তো সেই, যে নিজের খেলোয়াড়দের জন্য লড়াই করে। নিজের খেলোয়াড়দের আগলে রাখার জন্য গাঙ্গুলি ছিলেন জনপ্রিয় একজন। নির্বাচকদের উপেক্ষার কারণে হরভজন সিং ভারত ছেড়ে আমেরিকা পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন ভিন্ন কাজের জন্য। তবে নির্বাচকদের সাথে কথার লড়াই করে হরভজনকে দলে ফেরান এই ভারতীয় অধিনায়ক।

হরভজন নিরাশ করেননি গাঙ্গুলিকে। ফিরেছিলেন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে। তিনি ক্রিকেটারদের আগলে রাখতেন, প্রেষণা দিতেন, আস্থা রাখতেন সবসময়। বিপরীতে আস্থার প্রতিদান দিয়ে নিজের সেরাটাই দিতে চাইতেন খেলোয়াড়েরা।

  • ফিক্সিং অধ্যায়ে জর্জরিত দলের পুনর্গঠন

২০০০ সালে ভারত জাতীয় দলটা তখন ফিক্সিং ইস্যুতে বেশ সমালোচিত। খেলোয়াড়দের উপর আস্থা কিংবা ভরসা কোনোটিই দেখাতে পারেনি। ঠিক সে সময় দলের দায়িত্ব নেন সৌরভ গাঙ্গুলি। ভঙ্গুর প্রায় দলকে পুনরায় উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেন। বছর কয়েকের মাঝেই ফিক্সিংয়ের কাল ছায়াতল থেকে দলকে সরিয়ে এনে নতুন এক রেখায় এনে দাঁড় করান। ভক্ত-সমর্থকদের আস্থা, ভরসার পাত্র হয়ে ওঠেন খেলোয়াড়েরা।

  • ভবিষ্যত তারকাদের গ্রুমিং

যুবরাজ সিং, বীরেন্দ্র শেবাগ, জহির খান, হরভজন সিং’য়ের মত তারকারা উঠে আসেন গাঙ্গুলির অধিনায়কত্বেই। এই সম্ভাবনাময় তারকাদের তখন দলে সুযোগ দিয়েছিলেন গাঙ্গুলি। সেখান থেকে এরা বনে যান বিশ্ব ক্রিকেটের বড় বড় তারকা।

যুবরাজ, হরভজন, জহির খানদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে পরবর্তীতে মহেন্দ্র সিং ধোনির অধীনে বিশ্বকাপ জেতে ভারত। গাঙ্গুলি এই খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দিয়েছিলেন, গ্রুমিং করেছেন, আস্থা দেখিয়েছেন – সেটার পূর্ণ প্রতিদানও দিয়েছেন শেবাগ, জহির, যুবরাজরা।

  • আগ্রাসী ক্রিকেট খেলা

প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হয়ে ক্রিকেট খেলার শুরুটাও করেছিলেন গাঙ্গুলি। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বেশ কয়েক ম্যাচেই আশানুরূপ ফল পেয়েছে দল। এমনকি প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের স্লেজিংয়ের অনুমতিও দিতেন তিনি।

২০০২ সালে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ও অ্যালেক স্টুয়ার্টের স্লেজিংয়ের জবাবটা ভারত কিভাবে দিয়েছিল সে নিশ্চয়ই ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে থাকার কথা। আগ্রাসী ব্র‍্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে দলের খেলোয়াড়দের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন তিনি।

  • বিদেশের মাটিতে জয় 

ভারতের অধিনায়কদের জন্য বাইরের দেশে টেস্ট ম্যাচ জয় করাটা বেশ কঠিন ব্যাপার। কিন্তু গাঙ্গুলি এসে সব কিছু যেন বদলে দিয়েছিলেন। দেশের বাইরেও দাপট দেখাতে শুরু করে ভারত। ইংলিশদের মাটিতে ১-০ তে সিরিজ জয় করে ভারত।

এরপর অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়। ঘরের মাটিতে অজিরা ছিল এক প্রকার অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু সেখানেও দাপট দেখায় গাঙ্গুলিবাহিনী। ১-১ এ সিরিজ ড্র করে ভারত। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানের মাটিতে গাঙ্গুলির অধীনে টেস্ট সিরিজ জয় করে ভারত।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link