চিরতরুণ কিং কাজু

৫৪ বছর বয়সে কী করবেন, ঠিক করেছেন কিছু?

চাকরি থেকে অবসরের প্রস্তুতি নেবেন। নাতি-নাতনির জন্মদিনে বেলুন ফোলাবেন। ডাক্তারের পরের সাক্ষাতাকের জন্য তৈরী হবেন। রাতের বেলা ওষুধ খেতে ভুলে গিয়ে সারা রাত জেগে থাকবেন। একসময় খেলোয়াড় ছিলেন হয়তো; সেই স্মৃতিচারণ করবেন অনিচ্ছুক শ্রোতার সাথে।

এই তো! মোদ্দা কথা, ম্যাড়মেড়ে একটা শেষ জীবনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করবেন আপনি। আর আমি সে পর্যন্ত বেচে থাকলে হয়।

তবে এসব কথা আর যাই করেন কিং কাজুকে বলতে যাবেন না। তিনি কিন্তু খুব চটে উঠবেন। খেপে গিয়ে বলবেন, ‘চুয়ান্ন? সে তো তারুন্যের শুরু মাত্র। এই বয়সে সব নতুন করে শুরু করতে হয়।’

হ্যা, এই বয়সে আবার নতুন করে শুরু করলেন কাজুয়োশি মিউরা; জাপানের আদরের কিং কাজু।

নাম শুনে চিনতে পারছেন না? আচ্ছা, চিনিয়ে দিচ্ছি। কিং কাজু হলেন জাপানের প্রথম প্রজন্মের প্রথম ফুটবল তারকা। কাজু জাপানের অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী এক ফুটবলার। কাজু এই বিশ্বের সবচেয়ে বয়ষ্ক পেশাদার ফুটবলার।

আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ৫৪তম জন্মদিন পালন করবেন কাজু। ঠিক এই অবস্থায় জে-ওয়ান লিগের দল ইয়োকোহোমার সাথে আরও এক বছরের জন্য চুক্তি করেছেন। বুঝতেই পারছেন,  ইয়োকোহোমা হেলা ফেলা করার দল নয়। তারা দক্ষ বলেই এই ৫৪ বছর বয়সী কাজুকে আরেক মৌসুম দলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর কাজুও বলছেন, এখন তিনি প্রথম যৌবনের মতোই ফুটবলটা উপভোগ করছেন। ফলে ফুটবলের শেষ নিয়ে এখনই কিছু ভাবছেন না!

কিং কাজুর জীবনে ফুটবল ছাড়া আর কিছু নেই।

ছোটবেলা থেকে ফুটবল নিয়েই ছিলেন। স্কুলে যেতেন মূলত সেখানকার মাঠে ফুটবল খেলা যাবে বলে। সেই স্কুলও ছেড়ে দিলেন ১৫ বছর বয়সে। কোথায় গেলেন? ফুটবল তীর্থ ব্রাজিলে চললেন কাজু। পেশাদার ফুটবলার হতে গেলে পিঠস্থান থেকেই শিখে আসা ভালো।

ব্রাজিলে গিয়ে সাও পাওলোর একটা যুব দল ‘ক্লাব অ্যাটলেটিকো জুভেন্টাসে’ যোগ দিলেন। সেখানেই মূলত পেশাদার ফুটবলের সাথে পরিচয় হতে শুরু করলো। ওখান থেকে বেরিয়ে প্রথম পেশাদার চুক্তি করলেন বিখ্যাত ক্লাব সান্তোসের সাথে। এরপর ব্রাজিলে পালমেইরা, মাতসুবারার মতো ক্লাবে খেলে দেশে ফিরলেন।

১৯৯০ সালে যখন দেশে ফিরে এলেন, ততোদিনে কাজু অনেক বড় তারকা। স্বপ্নের দেশ ব্রাজিলে খেলে এসেছেন বলে কথা। তখনও জাপানে জে-লিগ চালু হয়নি। জাপানের সর্বোচ্চ লিগ জাপান সকার লিগের ইয়োমিউরি স্পোর্টিং ক্লাবে যোগ দিলেন তিনি। এরপর একটা একটা করে সিড়ি ভাঙতে শুরু করলেন।

১৯৯২ সালে কাজু ‘এশিয়ান ফুটবলার অব দ্য ইয়ার’ খেতাব জেতেন। পরের বছর জে-লিগ চালু হলে লিগের মোস্ট ভ্যালুয়েবেল খেলোয়াড় হন। আর এই বছরই ইউরোপ অভিযানে যান কাজু। ইউরোপে জেনোয়ার হয়ে খেলেছেন এক মৌসুম; সাম্পাদোরিয়ার বিপক্ষে গোলও করেছিলেন। আবার জাপানে ফেরেনন। পরে ডায়নামো জারগেবেও খেলতে গিয়েছিলেন।

এরপর থেকে জাপানেই আছেন। বয়সটা বাড়ছে, চুল সাদা হচ্ছে; কিন্তু কিং কাজুর ক্ষান্ত হওয়ার কোনো লক্ষন নেই। বরং একটার পর একটা রেকর্ড করে চলেছেন।

এর মধ্যে ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জাপান জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। সেটাও কম রঙীন অধ্যায় ছিলো না।

২০১৭ সালের ৫ মার্চ তিনি ইয়োকোহোমার হয়ে খেলতে নামেন আরেকটা ম্যাচে; তখন কাজুর বয়স ৫০ বছর ৫ দিন। এর ভেতর দিয়ে পৃথিবীর পেশাদার ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়সী ফুটবলার হয়ে যান। এর আগে ১৯৬৫ সালে স্ট্যানলি ম্যাথুস ৫০ বছর ৭ দিন বয়সে তার শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন। ওই ২০১৭ সালেই ম্যাথুসের রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে বয়সী গোলস্কোরার হন কাজু।

পেশাদার-অপেশাদার মিলিয়েও জাপানের সবচেয়ে বেশী বয়সে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফুটবল খেলার রেকর্ড এখন কাজুর। এই রেকর্ড কোথায় গিয়ে থামবে, সেটা বলা খুব মুশকিল।

কারণ কাজু নিজে বলছেন, তিনি এখনও সময়টা এবং খেলাটা দারুন উপভোগ করে চলেছেন। যতদিন তিনি উপভোগ করবেন, ততোদিন থামার কোনো কারণ নেই।

আচ্ছা, আরেকটা কথা।

কাজুর এর মধ্যে ২০১২ সালে আরেকটা অধ্যায় শুরু করেছেন কাজু। সে বছর তার অভিষেক হয়েছে জাপান ফুটসাল জাতীয় দলে। ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলেছেন তিনি। বলেছেন ‘অবসরের পর’ ফুটসালেই মনোযোগ দেবেন।

বুঝতে পারছেন, কিং কাজুর পরিকল্পনাটা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link