ক্রিকেটের বৈশ্বিক যজ্ঞে এখন চলছে আফগান বসন্ত। একের পর এক পরাশক্তিকে হারিয়ে চমকে দিয়েছে তাঁরা। আর এর নেপথ্যে রয়েছেন অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহীদি। দুর্দান্ত অধিনায়কত্বের পাশাপাশি ব্যাট হাতও দলের জয়ে অবদান রেখেছেন তিনি; টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এই ব্যাটার।
তিনি হয়ে উঠেছেন নিউ সেনসেশন; ক্রিকেট বিশ্ব নতুন করে চিনেছে তাঁকে। তাঁকে এখন চাইলে আফগানিস্তান ক্রিকেট বিপ্লবের ‘চে গুয়েভারা’ বলা যায়। কেননা তাঁর কাছ থেকেই তো বড় দলগুলোর বিপক্ষে সমানে সমানে লড়বার সাহস পেয়েছে রশিদ, মুজিবরা; সাহস পেয়েছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখার।
তবে তাঁর ক্রিকেট জীবনের শুরুটা অন্য অনেকের মতই পরিবারের অমতে করতে হয়েছিল। শহিদীর বাবা সবসময়ই চেয়েছিলেন ছেলে পড়ালেখা করে উচ্চশিক্ষিত হোক। চাইবেন না কেন, তিনি তো আফগানিস্তানের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী; ৪৪টি বিজ্ঞানের বই লিখেছেন।
এই আফগান তারকা বলেন, ‘আমি শিক্ষিত পরিবারের সদস্য; নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সব ফিজিক্স বই আমার বাবা লিখেছে। তিনি সবসময় চাইতেন আমি যেন পড়ালেখাকে বেশি গুরুত্ব দিই। কিন্তু আমি কখনোই ভাল ছাত্র ছিলাম না। যদিও তাঁকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যাই, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা দিয়েছিলাম।’
অবশ্য অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পাওয়ার পর ক্রিকেটকেই একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করেন হাসমতউল্লাহ। এরই মধ্যে ২০১৮ সালে আকাশসম দুঃখ নেমে আসে তাঁর জীবনে।
তিনি বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির একটা ম্যাচে ১২০ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছিলাম। এরপর বাবাকে ফোন দিয়ে দোয়া করতে বলি যাতে ডাবল হান্ড্রেড করতে পারি। বাবা ব্যস্ত থাকায় শুধু এতটুকুই বলেছিলেন যে আগে ডাবল হান্ড্রেড করো তারপর কথা হবে। কিন্তু আর কথা হয়নি, সেই রাতে বাবা না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন।’
পাঁচ বছর পরে পিতার শেষ ইচ্ছে পূরণ করেছেন এই বাঁ-হাতি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম আফগান হিসেবে সাদা পোশাকে দুইশত রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন তিনি।
তবে তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হয়েছে গত ছয় মাস থেকে; যখন তাঁকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয়। শহিদী বলেন, ‘যখন অধিনায়কত্ব পেয়েছিলাম তখন এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেছি। দেশের জন্য কিছু করতে চেয়েছি, এবং আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ভালভাবে চলছে।’
আসলেই, সবকিছুই পরিকল্পনা মত হচ্ছে আফগানিস্তানের। আর সেসব পরিকল্পনার প্রয়োগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন অধিনায়ক নিজেই। যে দুই ম্যাচে দলটি রান তাড়া করে জিতেছে দুইটিতেই শেষপর্যন্ত অপরাজিত থেকে জয় নিশ্চিত করেছিলেন তিনি।
দলের পারফরম্যান্স নিয়ে এই ক্রিকেটার বলেন, ‘পার্টনারশিপ তৈরি নিয়ে আমরা কাজে করেছিলাম। স্ট্রাইক রোটেট নিয়ে কাজ করেছি; এশিয়া কাপে বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে পারাটা আমাদের সাহায্য করছে। এছাড়া ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার ব্যাপারেও আমরা অনুশীলন করেছি। দুই তিনটা উইকেট দ্রুত হারালে কিভাবে পঞ্চাশ ওভার খেলা যায় সেটা শিখছি।’
ছোটবেলায় ফিজিক্স ভাল না লাগলেও বলিউডের মুভি ঠিকই ভাল লাগতো তাঁর। তিনি বলেন, ‘আমি বাজি ধরতে পারি আমি আপনাদের চেয়ে বেশি হিন্দি সিনেমা দেখেছি। আমরা বাচ্চারা বাসায় হিন্দিতে কথাও বলে। আমার প্রিয় মুভি ‘তুম বিন’, ‘ভগবান’, ‘দাঙ্গাল’।’
‘দাঙ্গাল’-এ আমির খান মেয়েদের ওপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছিলেন। ভাগ্যিস, হাসমতউল্লাহ শহীদির বাবা তেমনটা করেননি। তাহলে হয়তো ব্যাট নয়, কলম শোভা পেতো শহিদীর হাতে।