কপিল দেব, সৌরভ গাঙ্গুলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি। এই ছোট্ট তালিকাটায় এবার যুক্ত হতে যাচ্ছে রোহিত শর্মার নাম। ক্রিকেট ইতিহাসের তিনিই চতুর্থ ভারতীয় অধিনায়ক যার নেতৃত্বে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে পা রাখলো টিম ইন্ডিয়া। যদিও কপিল দেব, মহেন্দ্র সিং ধোনির পর তৃতীয় ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানিও এখন রয়েছে তাঁর সামনে।
এবারের বিশ্বকাপে একদম সামনে থেকে নেতৃত্ব যাকে বলে তার একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছেন রোহিত শর্মা। ব্যাট হাতে যেমন প্রতি ম্যাচেই দলকে উড়ন্ত শুরু এনে দিচ্ছেন, তেমনি নেতৃত্বেও দেখাচ্ছেন মুনশিয়ানা। আর সে কারণেই ফাইনাল যাওয়ার পথে এখনও অপরাজেয় ভারত। অজেয় এই ভারতকে কীভাবে নেতৃত্বগুণে পাল্টে দিয়েছেন তার সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে বোধহয় সেমির ম্যাচটাই টেনে আনা যেতে পারে।
নিউজিল্যান্ডকে এ দিন ৩৯৮ রানের লক্ষ্য দিয়ে প্রথম ইনিংস শেষেই চালকের আসনে বসেছিল ভারত। বিশ্বকাপের ইতিহাসে নক আউট রাউন্ড এত রান করার কীর্তি এর আগে কোনো দলের নেই। এমন সুখকর পরিসংখ্যান নিয়ে বোলিং করতে নামলেও একটা পর্যায়ে ভারতের জয়ের পথে শঙ্কা হিসেবেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। ড্যারিল মিশেল আর কেন উইলিয়ামসন মিলে ম্যাচটা ভারতের কাছ থেকে বেরই করে নিচ্ছিলেন। যদিও ৩৯ রানের দুই ওপেনারের উইকেট তুলে নিয়ে শুরুটা রাঙিয়েছিল ভারতীয় পেসাররাই।
তবে এরপর অনেকটা সময় ধরে ভারতকেই শাসিয়েছে মিশেল-উইলিয়ামসন জুটি। লক্ষ্য বড় হলেও ওয়াংখেড়ের নিঃস্তব্ধ গ্যালারি বুঝিয়ে দিচ্ছিল, ভারত দলটা ঠিক নির্ভার পূর্ণ অবস্থায় নেই। বরং ম্যাচ ফসকে যাওয়া আশঙ্কা জেঁকে ধরেছিল। তবে সেই আশঙ্কার মাঝেও রোহিতের নেতৃত্বগুণে হঠাতই ম্যাচে ফিরে আসে ভারত।
ম্যাচের ৩৩ তম ওভারে রোহিত বোলিং প্রান্তে নিয়ে আনেন মোহাম্মদ শামিকে। আর ঐ এক ওভারেই দারুণ ভাবে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারত। প্রথমে শামি ফেরান কেন উইলিয়ামসনকে। এরপর এক বল বাদেই এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে শূন্য রানে সাজঘরে ফিরে যান টম ল্যাথাম। ব্যাস। কিউইদের ছন্দপতনের শুরু এখান থেকেই। যদিও আপাতদৃষ্টিতে মোহাম্মদ শামিই ম্যাচের ফিরিয়েছেন ভারতকে। তবে ম্যাচে ঐ সময়ে শামিকে বলে আনাটা ছিল সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
তবে রোহিতের নেতৃত্বের মুনশিয়ানা শুধু ঐ সিদ্ধান্তেই আটকে ছিল না। কেন উইলিয়ামসনকে আউট করার ক্ষেত্রে তিনি ভিন্ন রণকৌশল সাজান। আউট হওয়ার আগে উইলিয়ামসন বেশ আক্রমণাত্বক ব্যাটিংই করছিল। বারবার ডিপ স্কোয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে গ্যাপ খুঁজে বাউন্ডারি মারছিলেন। ঠিক এই সময়েই তিনি সুরিয়াকুমার যাদবকে দিয়ে ডিপ স্কোয়ার লেগের একদম সীমানার কাছে ফিল্ডিং সাজান রোহিত। আর রোহিতের সেই পাতা ফাঁদেই ধরা দেন কেন উইলিয়ামসন।
এখানেই শেষ নয়। কেন উইলিয়ামসন আউট হওয়ার পরও ক্রিজে ছিলেন ড্যারিল মিশেল। বলাই বাহুল্য, তিনি যতক্ষন উইকেটে ছিলেন তাতে ম্যাচ থেকে কখনোই ছিটকে যায়নি নিউজিল্যান্ড। তবে রোহিত অবগত ছিলেন অপর প্রান্তে নতুন ব্যাটারদের স্পিনারদের বিপক্ষে খেলতে বেগ পেতে হবে। কেননা, মিশেল বাদে কেউই তখন পর্যন্ত উইকেটে থিতু হতে পারেননি। তাই শেষ পাওয়ার প্লে-র আগে জাদেজা আর কুলদ্বীপ যাদবকে দিয়ে টানা কয়েকটি ওভার করান রোহিত। উদ্দেশ্য ছিল, নিউজিল্যান্ডের রিকুয়ার্ড রান রেট বাড়ানো।
আর এই উদ্দেশ্যে বেশ সফলও হন রোহিত। রান রেটের চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ডের শেষ ভরসা মিশেলও আউট হয়ে ফিরে যান। আর তাতেই ভারতের জন্য ফাইনালের বন্দোবস্ত হয়ে যায়। অবশ্য ৭ উইকেট নিয়ে এই জয়ের মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন মোহাম্মদ শামি।
আর মাত্র একটি বাঁধা। রোহিতের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জয়ের পথে ভারতের এই অপরাজেয় যাত্রা কোথায় গিয়ে থামবে, তা সময়ই বলে দিবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুখকর অনুভূতি কিংবা রানার্সআপের তিক্ততা, যেটাই হউক না কেন, কোনো সন্দেহ নেই, এবারের বিশ্বকাপের সেরা অধিনায়কের দৌড়ে রোহিতই থাকছেন সবার শীর্ষে। তবে শুরু থেকে শেষ অবধি, এই দুর্দান্ত যাত্রাপথটা অবিরতই রাখতে চাইবে ভারত, তা নিয়ে লেশটুকু সন্দেহও নেই।