হঠাৎ মুমিনুলের ম্যাজিক্যাল থ্রি

প্রায় নয় মাস পর বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন মুমিনুল হক। বহু অপেক্ষার সেই ব্রেকথ্রুই তো এনে দিয়েছিলেন তিনি দ্বিতীয় দিনে। তবে পরদিন, অর্থাৎ তৃতীয় দিন সকালে নিউজিল্যান্ডকে গুটিয়ে দেওয়ার কাজটাও করলেন বোলার মুমিনুল। বাকিরা যেখানে ভয় ধরাতে ব্যর্থ, তখন পরিত্রাণের উপায় হয়ে হাজির হলেন সৌরভ।

দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের হাতেই ছিল ম্যাচের লাগাম। ক্রমাগত প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের চাপে রেখে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তাইজুল ইসলামরা। তবে মাঝে একটা প্রতিরোধের দূর্গ গড়ে তোলেন কেন উলিয়ামসন। তাকে সঙ্গ দিয়ে নিউজিল্যান্ডের রানের ধারা অব্যাহত রাখেন গ্লেন ফিলিপস।

এই জুটিতে ভর করেই বিশাল রানের লিডের স্বপ্নই বুনছিল ব্ল্যাকক্যাপসরা। বাংলাদেশের কপালেও পড়েছল চিন্তার ভাঁজ। ঠিক সে সময়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বল তুলে দিয়েছেন মুমিনুলের হাতে। নিয়মিত বোলিং তিনি করেন না। তবে একটু বৈচিত্র্যের তো ছিল বড্ড প্রয়োজন।

উলিয়ামসন ও ফিলিপসের ৭৮ রানের জুটি যখন রান পাহাড় গড়তে প্রস্তুতিই নিচ্ছিল, ঠিক তখনই আঘাত হানেন মুমিনুল হক। দারুণ এক ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে ফিলিপসকে সামনে ঝুকে ডিফেন্স করতে বাধ্য করেন মুমিনুল। আর এ দফা নিচু হওয়া বলটায় ব্যাটের খোঁচা লাগে বড়সড়ই।

বেশ খানিকটা নিচু হয়ে দারুণ ক্যাচ লুফে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপরই বাংলাদেশ যেন ম্যাচের ভাগ্য নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার অনুপ্রেরণা পেতে শুরু করে। মুমিনুলের আঘাতের পর আরও দুই উইকেটের পতন ঘটে নিউজিল্যান্ডের। ৪৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিন শেষ করে নিউজিল্যান্ড।

তৃতীয় দিন সকাল সকাল উইকেট তুলে নিতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। তাইতো আগের দিনের শেষ বেলায় নতুন বলটা তুলে দেওয়া হয় তাইজুলের হাতে। এক এক করে দলে থাকা চার বোলারই হাত ঘুরিয়ে সফলতার দেখা না পেয়ে খানিকটা হতাশই হয়েছেন।

অন্যদিকে টিম সাউদি ও কাইল জেমিসন মিলে পেরিয়ে যান বাংলাদেশের ৩১০ রান। ঠিক যখন থেকেই লিডের রাস্তায় হাটতে শুরু করেছে নিউজিল্যান্ড, তখনই আবার বল হাতে বাইশ গজে আগমন মুমিনুল হকের। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ১০০ তম ওভারের পর ১০২তম ওভার করতে এসেই মুমিনুল আবার আঘাত হানেন।

৫২ রানের জুটির অবসান ঘটান তিনি পানি পানের বিরতির ঠিক পরপরই। কাইল জেমিসনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আউট করেন বা-হাতি স্পিনার মুমিনুল। সেই ওভারেই তিনি গুটিয়ে দেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে।

শেষ উইকেট হিসেবে প্যাভিলনে ফেরেন টিম সাউদি। স্ট্যাম্পের মধ্যে থাকা বলটা মিস করেন কিউই অধিনায়ক। তাতে বোল্ড আউট হয়েই মাঠ ছেড়েছেন সাউদি। তাতে করে মাত্র ৭ রানের লিডেই থেমেছে নিউজিল্যান্ড। পানি পানের সেই ছোট্ট বিরতির পর মাত্র ৫ বলেই মুমিনুল সাজঘরে পাঠিয়েছেন কিউইদের।

অথচ ধারণা করা হচ্ছিল এই কাজটা দিনের শুরুতেই করে ফেলবেন তাইজুল, নাঈমরা। কিন্তু ত্রাতা হয়ে আবার ফিরলেন মুমিনুল হক। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন প্রথম টেস্ট ম্যাচে। এমনিতেই একজন বোলার কম নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। সেখানে পার্টটাইম বোলার হিসেবেও দ্যুতি ছড়ালেন মুমিনুল।

মাত্র ৩.৫ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৪ রান খরচ করেছেন মুমিনুল হক সৌরভ। শিকার করেছেন তিনটি উইকেট। তবে সবগুলোই বেশ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। নিউজিল্যান্ডের দুই বড় জুটিতে আঘাত করেছেন তিনি। বাংলাদেশকে দিয়েছেন স্বস্তি। তবে তার আসল কাজটা যে ব্যাট হাতেই করতে হবে। ব্যাট হাতে এগিয়ে নিতে হবে বাংলাদেশের রানের তরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link