চেহারাতে একটুখানি স্নায়ুচাপের ছাপ। হেলমেটের গ্রিল ছাপিয়ে সেটা স্পষ্ট। অপরপ্রান্তে থাকা সৌম্য সরকারও যেন তা আন্দাজ করতে পারলেন। তাইতো এগিয়ে গিয়ে একটু ভরসা দিলেন। টোটকাও দিলেন বটে। রিশাদ হোসেন সৌম্যের ভরসায় খানিকটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন।
আর সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুটা করলেন দূর্দান্ত এক ছক্কা হাঁকিয়ে। অ্যাডাম মিলনের লেন্থ বলটাকে মিডউইকেট ছাড়া করেন রিশাদ। একটা দূর্দান্ত শুরু নিঃসন্দেহে। তার একগাল হাসিই সেটার প্রমাণ।
বহুদিন ধরেই দলের আশেপাশেই রিশাদের অবস্থান। দলের সাথে উড়ে বেড়িয়েছেন সর্বত্র। লেগ-স্পিনার নেই। তবুও রিশাদের আসেনি সুযোগ। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন বটে। কিন্তু সেটাও হয়েছে ক্ষণস্থায়ী। দীর্ঘ মেয়াদে জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামা হয়নি তার।
এবারের নিউজিল্যান্ড সিরিজেও দলের সাথে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে। প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাট হাতে দেখিয়েছেন ঝলক। এরপর স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে আবার থেকেছেন সাইডবেঞ্চে। সেটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছিল তার ক্ষেত্রে।
চারিদিকে সমালোচনার তোপ। রিশাদ থাকতেও তিনি একাদশে নেই। মোটে চারজন বোলার নিয়ে খেলেছে প্রথম ম্যাচ। সেখানে যা হওয়ার তাই হয়েছে দিনশেষে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই একাদশ ঠাই মেলে রিশাদের। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, মুশফিকুর রহিম তুলে দেন সবুজ রাঙা ক্যাপ।
এরপর টসে হেরে ব্যাটিং পায় বাংলাদেশ। রিশাদ যতক্ষণে ব্যাট হাতে নেমেছেন ততক্ষণে ইনিংস শেষের দুয়ারে বাংলাদেশ। তার মূল কাজটা অবশ্য ছিল বল হাতে। নিজের অভিষেক ম্যাচে উইকেট শূন্য থাকতে হয়েছে। তবে পূর্ণ দশ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন তিনি।
নেলসনের ফ্ল্যাট উইকেট ব্যাটারদের জন্যে ছিল আদর্শ। বোলারদের জন্যে সহয়তা ছিল সামান্যই। এমন এক উইকেটে বৈচিত্র্য়ের ছিল না কোন বিকল্প। সেখানেই বরং মাত খেয়েছেন রিশাদ। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারদের খুব এক অসুবিধায় ফেলতে পারেননি। তার বিপক্ষে বেশ সাবলীল ভঙ্গিমায় খেলেছেন উইল ইয়ংরা।
তাতে ৯.২ ওভারে ৬৪ রান খরচ হয়েছে রিশাদের। অভিষেকটা তাই আটকে রইলো প্রথম বলে হাঁকানো ছক্কাতেই। যদিও বাকি বোলারদের তুলনায় রান খরচা কমই করেছেন রিশাদ। দলের নিয়মিত বোলারদের প্রত্যেককেই রান হজম করতে হয়েছে।
ব্ল্যাকক্যাপস ব্যাটারদের দক্ষতাই যার পেছনের মূল কারণ। তবে রিশাদের গল্পটা নিশ্চয়ই সেই ছক্কাতেই থেমে যেতে পারে না। বরং হতেও পারে সেটা নতুন এক দাঁড়ের উন্মোচন। তার স্রেফ একটু ভরসার প্রয়োজন। ঠিক যেমনটি দেখিয়েছিলেন সৌম্য সরকার।
তার উপর একটু আস্থা রাখা প্রয়োজন। সৌম্যর মত করেই তাকে একটু নির্ভার করা প্রয়োজন টিম ম্যানেজমেন্টের। সর্বোপরী, নিয়ম করে সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। হয়ত পুরোদস্তুর লেগস্পিনার না হোক, অন্তত একজন হ্যান্ডি ক্রিকেটারে হিসেবে কার্য্যকর প্রমাণিত হতেই পারেন রিশাদ। প্রত্যাশা নিশ্চয়ই সেটুকু সময় পাওয়ার। যা নিশ্চিতভাবেই প্রাপ্য। তার মত করে দলের সাথে দীর্ঘদিন ঘুরে বেড়াননি তো আর কেউই।