বাবা নিজ দায়িত্ব পালনে মশগুল। এয়ারপোর্টের যাত্রীদের বোর্ডিং পাস নিতে সহয়তা করছেন। ঠিক এমন এক মুহূর্তে সহকর্মী নিয়ে এলেন সবচেয়ে বড় সুখখবর। মুহূর্তের মধ্যেই যে ফ্রান্সিস জেভিয়ার বনে গেছেন কোটিপতি। তাও আবার ২১ বছর বয়সী ছেলের কল্যাণে।
ভারতের ক্রিকেটে তো বটেই বিশ্ব ক্রিকেটেও সম্ভবত সবচেয়ে জমকালো আয়োজন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। সেই আইপিএলের নিলামে ফ্রান্সিসের ছেলে রবিন মিঞ্জের দর উঠেছে ৩.৬০ কোটি। বাবার জন্যে নিশ্চয়ই পরম আনন্দের এক দিন।
ভারতের ক্রিকেট প্রেক্ষাপটে উঠতি তরুণদের তো এখন স্বপ্ন দু’টো। প্রথমত আইপিএলের মঞ্চে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখা। এরপর ভারতের নীল জার্সি গায়ে দাপিয়ে বেড়ানো বিশ্ব ক্রিকেটে। রবিন মিঞ্জের প্রথম স্বপ্ন যে পূরণের পথে। আসন্ন আইপিএলে তাকে দেখা যাবে লখনৌ সুপার জায়েন্টসের জার্সিতে। তাকে নিতে যে বেশ সংগ্রামই করতে হয়েছে লখনৌকে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সাথে হয়েছে জম্পেশ নিলামের লড়াই।
রবিন মিঞ্জের ক্রিকেটের হাতেখড়ি ভারতের রাঁচি শহরে। তবে তার শেকড় ঝাড়খণ্ড প্রদেশের গুমলা জেলায়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের অংশ তারা। বাবা চাকুরি জীবনের শুরুতে ছিলেন ভারতীয় আর্মির সদস্য। সেই সূত্রেই রাঁচিতে রবিনের বেড়ে ওঠা।
রবিনদের বড় হওয়ার যাত্রায় অনেক বেশি প্রভাবক হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির ক্রিকেট ক্যারিয়ার। রাঁচি থেকেই তো ধোনি হয়ে উঠেছেন ‘এম এস ধোনি’। রাঁচির আর বাকি ছেলেদের মতই ধোনির প্রভাব রয়েছে রবিন মিঞ্জের জীবনেও।
ধোনির মতই উইকেটরক্ষক ব্যাটার তিনি। তবে তার একাডেমিতে তাকে ডাকা হয় ‘রাঁচির গেইল’ তকমায়। এর পেছনেও যে রয়েছে কারণ। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ধোনি ছিলেন নির্ভীক। রবিনও তাই। তবে এক ধাপ এগিয়ে যেন রবিন। বিশাল সব ছক্কা হাঁকানোর দিকেই থাকে তার পূর্ণ মনোযোগ। এমনকি তার সমগ্র চিন্তা জুড়েই থাকে ছক্কাটা ঠিক কতটুকু দূরত্ব পার করল।
রবিনের ব্যাটিং কোচ আসিফ হক বলেন, ‘আমি এবং এস পি গৌতম ওর ব্যাটিং নিয়ে কাজ করি, আমরা চেষ্টা করি তাকে মাটিতে শট খেলার জন্যে, কিন্তু তা খুব কঠিন কাজ।’ এমনকি ধোনি নিজেও রবিনকে পরামর্শ দিয়েছেন একটু স্থির হতে। একটু দেখে শুনে খেলতে। তবুও রবিন আপন ধ্যানে মগ্ন।
রাঁচিতে হওয়া এক ক্যাম্পে ধোনির পরামর্শ মনে করিয়ে আসিফ বলেন, ‘ভাল খেল, টিকে থেকে খেলার চেষ্টা কর। নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসো না, ছক্কার পরে একটি সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টা কর। এক ওভারে ছয়টা ছক্কা মারার চেষ্টা কর না।’
তবে নিজের স্বভাবজাত খেলা থেকে যেন বেড়িয়ে আসতে পারেননি রবিন। সেটা উচিতও নয়। নিজ সত্ত্বার পুরষ্কারটাই তো পেতে চলেছেন রবিন। মাত্র ২১ বছর বয়সেই বনে গেছেন কোটিপতি। তবে রবিনের বাবা ফ্রান্সিস বরং তাকে মাটিতেই পা রাখতে বলছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি সে মাটিতেই পা রাখবে, নিজের স্বপ্নের পানে ছুটে যাবে, নিজের ১০০ শতাংশ দিয়ে কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাবে।’ ধোনির না হোক অন্তত বাবার উপদেশ নিশ্চয়ই মেনে চলার চেষ্টা করবেন রবিন মিঞ্জ। তাতেই বরং ক্রিকেটের জমকালো দুনিয়ার শেষটায় উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হয়ে উঠবেন তিনি।