স্বপ্নঘেরা শীতের সকালে পেসারদের উত্তাপ

নেপিয়ারের গতিময় বাউন্সি উইকেট। উইকেটে ঘাস ছিল। সকালবেলার কন্ডিশনে তাই সুইং আসবে অনায়াসেই। কিন্তু অতীত ইতিহাস বলে, এতসব পিচের গতিপ্রকৃতি জানার পরও বাংলাদেশি পেসারদের পণ্ডশ্রম কম হয় না। বরং, প্রতিপক্ষের মাটিতে অসহায়ত্বের প্রদর্শনীই বারবার মঞ্চস্থ করেছে টাইগার পেসাররা। কিন্তু নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে আজ তা হয়নি। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং রীতিমত গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের পেসাররা।

৩১.৪ ওভারে মাত্র ৯৮ রানেই নিউজিল্যান্ডের ইনিংসকে থামিয়ে দিয়েছে শরিফুল-তানজিমরা। ২০০৭ সালের পর ঘরের মাঠে কিউইদের যেটি সর্বনিম্ন স্কোর। আর নিজেদের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটই নিলো বাংলাদেশের পেসাররা। পেসারদের দশে ‘দশ’র প্রথমটাও অবশ্য ঘটেছিল এ বছর। মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১০টি উইকেটই নিয়েছিল বাংলাদেশ পেসাররা।

নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ধ্বসের শুরুটা হয়েছিল তানজিম হাসান সাকিবের হাত ধরে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই তাঁর বলে ব্যাট ছুঁইয়ে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র। এরপরই খেই হারায় কিউইরা। দুই প্রান্তের আঁটসাঁট বোলিংয়ে রান থেমে যায় তাদের ইনিংসে। আর সেই সুযোগটাই লুফে নেন শরিফুল-সাকিবরা।

ইনিংসের ৮ম ওভারে তানজিমের করা অফ স্টাম্পের একটি বল বাইরে থেকে টেনে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ তোলেন হেনরি নিকোলস। অধিনায়ক শান্ত সেই ক্যাচটি লুফে নিতে ভুল করেননি। ২২ রানে ২য় উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। এমন জোড়া ধাক্কা অবশ্য কিছুটা কাটিয়ে উঠেছিল টম ল্যাথাম আর উইল ইয়াংয়ের জুটিতে। ৩৬ রানে জুটি গড়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন প্রতিরোধ গড়ার পথে।

কিন্তু এরপরই শুরু হয় শরিফুল শো। প্রথম স্পেলে এলোমেলো বোলিং করেছিলেন বটে। তবুও ড্রিংকস ব্রেকের পর দ্বিতীয় স্পেলে তাঁকে ফিরিয়ে আনেন শান্ত। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে নতুন করে ভাঙনের শুরু সেখান থেকেই।

১৭তম ওভারে অফ স্টাম্পের কিছুটা বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। সরাসরি বোল্ড। ৩৪ বলে ২১ রান করে ফিরে যান ল্যাথাম। এর পরের ওভারেই এসে আবার উইল ইয়াংয়ের উইকেট তুলে নেন শরিফুল। কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে সজোরে চালিয়েছিলেন ইয়াং। কিন্তু পয়েন্টে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ধরা পড়েন তিনি।

শরিফুলের বোলিং প্রতাপ তখনও থামেনি। নতুন ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে আসা মার্ক চাপম্যানকে বোল্ড করেন তিনি। আর তাতেই ৬৩ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে কিউইদের ইনিংসে। শরিফুলের এই মরণকামড় দেওয়া স্পেলের পর আর ম্যাচে ফিরে আসতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে টম ব্লান্ডেল যদিওবা ক্রিজে ছিলেন। তবে তানজিম সাকিবের বলে তিনিও আউট হয়ে ফিরে যান ৪ রানে।

এরপর বাকি কাজ সারেন সৌম্য সরকার। সাকিব না থাকায় সৌম্যের কাছ থেকে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংটাও চেয়েছিলেন কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে। আগের ম্যাচে ১৬৯ রানের ইনিংস খেলেন ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেছিলেন।

এ দিন বল হাতে দ্যুতি ছড়ান ৩ উইকেট নিয়ে। শুরুটা করেন জশ ক্লার্কসনকে বোল্ড করে। এরপর দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে অ্যাডাম মিলনেকে ফেরান এ অলরাউন্ডার।

পেসারদের স্বপ্নের সকালে আরো একটি উইকেট পেয়েছেন সৌম্য। অশোককে উইকেটরক্ষক মুশফিকের কছে ক্যাচ বানিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট শিকার করেন তিনি। আর শেষ ব্যাটার হিসেবে উইলিয়াম ও’রর্ককে বোল্ড করে উইকেট শিকারিদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমানও।

নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এর আগেও তিনবার ১০০-এর নিচে অলআউট হয়েছে নিউজিল্যান্ড। তবে এবারই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে শতরানের নিচে থামলো কিউইদের ইনিংস। তবে দিনশেষে টাইগার পেসার এমন প্রতাপটাই যেন পুরো ম্যাচেই প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকলো। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয়টা আসলো পেসারদের কল্যাণেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এ যেন এক স্বপ্নের সকাল। আর সেই সকালের পাখির ডাকটা দিলেন পেসাররা।

 

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link