ঝাকড়া চুলে বিজয় যেন ধোনির প্রতিচ্ছবি

‘ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’- ইংরেজিতে বহুল ব্যবহৃত এক প্রবাদ। খেলাধুলার রাজ্যের তো হরহামেশাই ব্যবহার করা হয়। তবে সে প্রবাদের যথার্থতা ক’জনই বা প্রমাণ করতে পারে? এনামুল হক বিজয় কিন্তু সে প্রবাদের উদাহরণ হয়েই বিচরণ করছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। তার মস্তিষ্ক আর ব্যাটের জোরে ছুটে চলেছে খুলনা টাইগার্স।

চার ম্যাচের চারটিতেই জয়। টেবিলের সবার উপরে অবস্থান খুলনা টাইগার্সের। দুর্দান্ত ঢাকার যেন করুণ পরাজয়। দশ উইকেটের বিশাল এক পরাজয় যেন বিষাদগ্রস্ত করে তুলেছে পুরো ঢাকার শিবিরকে। সেই বিষাদের বিষবাষ্প ছড়িয়েছেন এনামুল হক বিজয়।

নিজের দ্বিতীয় ফিফটিতে ভর করে ম্যাচ জিতিয়েছেন দলকে। মাঠ ছেড়েছেন দলের জয় নিশ্চিত করেই। সেটাই তো বরং সতীর্থদের দেয় অনুপ্রেরণা। তাদেরকেও উজ্জীবিত করে নিজেদের সর্বোচ্চটুকু নিংড়ে দিতে। অধিনায়কের এমন দারুণ পারফরমেন্স স্বাভাবিকভাবেই পুরো দলের মানসিকতাকে প্রভাবিত করে, অবশ্য তা ইতিবাচকভাবেই।

দুর্দান্ত ঢাকার ব্যাটিং ইনিংসের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। নিজের স্বভাবজাত খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসে নাঈম শেখ তুলেছিলেন ঝড়। সেই ঝড়ে মুষড়ে পড়েননি বিজয়। স্রেফ ভরসা রেখেছিলেন নিজের দলের প্রতিটা খেলোয়াড়ের উপর। কোন উইকেট না হারিয়ে ৭৫ রান তোলা ঢাকা শেষমেশ থেমেছে স্রেফ ১৩০ রানে। সেখানেই বরং একজন অধিনায়কের সার্থকতা।

স্ট্যাম্পের পেছন থেকে প্রতিটা মুহূর্ত তিনি দলের খেলোয়াড়দের রেখেছেন উজ্জীবিত। সেখান থেকেই পরিচালনা করেছেন নিজের প্রতিটা খেলোয়াড়কে। আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর বিজয় যেন মাঠের ভেতর ‘দ্য গ্রেট মহেন্দ্র সিং ধোনি’ এর প্রতিচ্ছবি। তার মতই লম্বা চুল রেখে শুরু করেছেন এবারের বিপিএল যাত্রা। সফলতাও যেন ধরা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশালতায় হয়ত ধোনির কাছাকাছি নয়, তবুও বিজয়ের জন্যে জাতীয় দলের রাস্তাটা পরিষ্কার করছে বটে।

স্রেফ দলকে পরিচালনা করেই যে ক্ষান্ত নন বিজয়। ব্যাট হাতেও নিজের অঙ্গিকার দৃশায়ন করছেন। চার ম্যাচের মধ্যে দুই ম্যাচে ফিফটি করেছেন। দুই ম্যাচেই থেকেছেন অপরাজিত। ঢাকার বিপক্ষে ৫৮ রানে অপরাজিত থেকে জয় সমেত ড্রেসিং রুমে ফিরেছেন। এর আগেও বরিশালের বিপক্ষেও একই দৃশ্যের মঞ্চায়ন করেছেন তিনি। সেখানে তো ধোনিকে ব্যবহার করা যায় রুপক হিসেবে।

দলের অন্যতম সেরা ব্যাটার এভিন লুইস অল্প সময়েই ফিরেছেন প্যাভিলিয়নে। আউট হয়ে নয় তিনি সাজঘরে ফিরেছেন রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে। এরপরও টলেনি বিজয়ে মনোবল। তিনি নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন। দলের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ছিল না বলেই নির্ভার থেকেছেন। শেষ অবধি বিশাল বড় এক জয় নিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করেছেন। রানরেটে বাকিদের থেকে বড় এক লাফেই এগিয়ে রয়েছেন।

বিজয়ের নেতৃত্বে যেন শিরোপার দিকেই চোখ রাখছে খুলনা টাইগার্স। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শিরোপা খরা মেটানোর চেষ্টাতেই মত্ত্ব বিজয় ও তার দল। বড় ধরণের ভুল না করলে অন্তত এই দলের পা হড়কাবার সুযোগ নেই। এনামুল হক যে থাকছেন সচেষ্ট সেই সাথে সতর্ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link