এভাবেই সম্ভবত মোমেন্টাম হয়ে যায় হাতছাড়া। একটা দারুণ শুরুর শেষটায় একরাশ বিষাদই হয় সঙ্গী। বাংলাদেশ দলের বোলিং ইনিংস শেষে এমন অনুভূত হওয়া যেন অবধারিত। ২০ ওভার শেষে অন্তত একটি কথাই বলা যায়- ‘যাচ্ছেতাই’।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পূর্ব রেকর্ড মাথায় রেখেই নিয়েছিলেন সেই সিদ্ধান্ত। কেননা সিলেটের নয়ানাভিরাম স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক ম্যাচের ফলাফল দিয়েছে সবসময় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা দলের পক্ষে।
সেই সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করতেও দেরি করেননি শরিফুল ইসলাম। সদ্য সমাপ্ত হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দশম আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার শরিফুল, প্রথম বলেই উইকেটের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। যদিও স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডার না থাকায় তা বাউন্ডারিতে রূপ নেয়। কিন্তু উইকেট পেতে সময় বেশি লাগেনি।
দ্বিতীয় বলেই আভিস্কা ফার্নান্দোর উইকেট তুলে নেন শরিফুল। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের ফুলার লেন্থের বলটিতে ড্রাইভ করেছিলেন আভিস্কা সজোরে। তবে ব্যাটের খোঁচা লেগে তা লিটন কুমারের দস্তানায় বন্দী। সেখান থেকেই বাংলাদেশ দলের বোলাররা দারুণ একটা দিনের আলো জ্বালাতে শুরু করেছিল। প্রথম পাওয়ার প্লে-তে লংকান ব্যাটারদের কোনঠাসা করে ফেলেন শরিফুল, তাসকিন আহমেদরা।
গুড লেন্থে বল ফেলে অফ স্ট্যাম্প ঘেষা লাই ধরে বল চালিয়ে গেছেন ক্রমাগত। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকেও তাই প্রশংসার ফুলঝুরি ফুটেছিল। ৪৫ রানের বিনিময়ে শুরুর ছয় ওভারে বাংলাদেশের শিকার দুই উইকেট। এরপরও ঠিক ততটা খাপছাড়া মনে হয়নি বাংলাদেশের বোলারদের। ১৫০ রানের আশেপাশে শ্রীলঙ্কাকে আটকে ফেলা যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছিল।
তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে সেই সম্ভাবনা ফিকে হতে শুরু করে। বাংলাদেশের বোলাররা যেন নিজেদের দারুণ শুরুটাকে বয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না। লাইনলেন্থের মাধুর্যতা হারিয়ে যেতে শুরু করে। দিশেহারা বোলিংয়ের শুরুটা হয় ইনিংসের ১২ তম ওভার থেকেই। কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাভিক্রামার জমে ওঠা জুটি তখন চড়াও হতে শুরু করে।
সেই ওভারে ১৮ রান দিয়ে শুরু। এরপরের সাত ওভারে শ্রীলঙ্কা স্কোরবোর্ডে জমা করেছে আরও ১০৪ রান। তাতে করেই ২০০ রানের গণ্ডি ছাড়িয়ে যায় শ্রীলঙ্কার। বাংলাদেশের জন্যে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ২০৭ রান। তাতে করে যেন যাচ্ছেতাই বোলিংয়ের দৃশ্যটা আরও খানিকটা স্পষ্ট হয়।
তাছাড়া বাংলাদেশের বোলারদের দেওয়া ১৯ অতিরিক্ত রানও বলে দেয় ঠিক কতটুকু ছন্দহীন বোলিং করেছে তারা। যদিও উইকেট সহায়ক ছিল বলেই এত রান হয়েছে বলে দেওয়া যায়। কিন্তু ইনিংসের শুরুর দিকের সেই লাইন আর লেন্থের হারিয়ে যাওয়াটা কোনভাবেই তো মেনে নেওয়ার নয়। শরীরের বেশ বাইরের শর্টবল, ওয়াইড ইয়র্কার করতে গিয়ে ওয়াইড দেওয়া, ফুলটস দেওয়া অন্তত ছন্দহীন হওয়ারই প্রমাণ।
সে সবই করেছেন শরিফুল, মুস্তাফিজরা। খানিকটা আত্মতুষ্টি হয়ত তাদেরকে ভুগিয়েছে। ইনিংসের শুরুর দিকের দারুণ বোলিংয়ের পরই যেন বাংলাদেশের বোলাররা নির্ভার হতে চেয়েছিলেন। হয়ত সে কারণেই প্রচুর লুজ বল করে বসেছেন। যার সমস্ত সুবিধাই লুফে নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা।