২২ বলের একটা ইনিংসে ১১টা ডট বল। আধুনিক টি-টোয়েন্টি বিবেচনায় রীতিমত ‘ক্রাইম’। সেই অপরাধের মঞ্চায়নই করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের নব নিযুক্ত তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক তিনি। নতুন শুরুতেই কেমন একটা নেতিবাচকতায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছেন তিনি। দলের পরাজয়ের কারণও যদি বলা হয় তার ইনিংসকে- তাতেও খুব একটা দোষের কিছু নেই।
নাজমুল হোসেন শান্ত, একটা দীর্ঘ সমালোচনা, তিরস্কার আর নিন্দার সময় পার করেছেন। এরপরই ধারাবাহিকতার দারুণ নিদর্শন হয়ে ধরা দিয়েছেন তিনি। পারফরমেন্সের ঝিরিপথ হয়ে অধিনায়কত্বের গভীর সমুদ্রও খুঁজে নিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন খানিক উল্টো পথের পদযাত্রী তিনি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০৭ রানের লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ। তেমন একটা ম্যাচে ২২ বলে ২০ রান করে বিদায় নিয়েছেন অধিনায়ক। কি দৃষ্টিকটু! তার সেই স্লথগতির ইনিংসই যে বাংলাদেশের পরাজয়ের কারণ হয়েছে। তিন রানের দূরত্বে থেকেছে দারুণ এক জয়।
তবে শান্ত অবশ্য সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগেরদিন বলেছিলেন, অধিনায়ক না হলেও রান করা প্রয়োজন। অধিনায়ক হিসেবে শান্ত রান করেছেন বটে। কিন্তু সে রান কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। নিজের খেলা ইনিংসের পঞ্চাশ শতাংশ বলেই কোন রান নিতে পারেননি শান্ত। সেটাই বরং কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য।
অন্তত তার দ্রুত প্রস্থানে দৃশ্যপট ভিন্ন হলেও হতে পারত। তবে পুরো দায় একেবারেই যে তার উপর বর্তায় বিষয়টি তেমনও নয়। ইনিংসের প্রথম ওভারে তাকে নামতে হয়েছিল, লিটন দাস ফিরেছিলেন তিন বল খরচায় শূন্য রানে। এরপর দাঁড়িয়ে থেকে আরও দুই সতীর্থ সৌম্য সরকার ও তাওহীদ হৃদয়কেও আউট হতে দেখেছেন শান্ত।
অধিনায়কের বাড়তি দায়িত্ব থাকে। সে দায়িত্ব নিয়ে তিনি ইনিংস ‘বিল্ডআপ’ করবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ২০ ওভারের ক্রিকেটে ইনিংস গড়তে যে খুব বেশি বল খরচ করা যায় না- সে বিষয়টি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন। স্নায়ুচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে, স্ট্রাইক রোটেশনে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
অথচ তিন নম্বরের ব্যাটারের দায়িত্বই থাকে দলের পরিস্থিতি অনুযায়ী বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং করা। দলের উপর আসা চাপকে প্রশমিত করা। শান্ত সে কার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হয়েছেন, উল্টো দলের চাপ বাড়িয়ে আউট হয়েছেন ২০ রানে। অধিনায়কের দায়িত্ব কিংবা তিন নম্বর ব্যাটারের দায়িত্ব পালনে যারপরনাই ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি যেন ধরেই নিয়েছিলেন জয় পাওয়া হবে দুষ্কর।
অবশ্য এই ঘটনাপ্রবাহকে শান্তর বাজে সময় বলে কাটিয়ে দেওয়াই যায়। তেমনটাই হয়ত মেনে নিতে চাইবেন সকলে। গোটা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রান না করায় আত্মবিশ্বাসে খানিক ঘাটতি হওয়াও স্বাভাবিক। তবে শান্তর এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। সেটা হয়ত শান্ত নিজেও আন্দাজ করতে পারেন।
ফিরে আসার মত মানসিকতা তার রয়েছে। বিশ্বকাপের আগেই তার ফিরে আসাটা জরুরি। স্নায়ুচাপকে দূরে ঠেলে দিয়ে দলকে দিতে হবে নেতৃত্ব। ব্যাট হাতে হতে হবে দলের জয়ের কারণ। এমন বাজে দিনকে হতে দেওয়া যাবে না ধারাবাহিক। সে সবের জন্য সতীর্থদের সহয়তাও যে প্রয়োজন।